Advertisement
E-Paper

আম্মা নেই, মধ্যরাতে চেন্নাইয়ে মানুষের ঢল

আম্মা ইরান্তা আকিরাতু। আম্মা আর নেই! সোমবার রাত সাড়ে এগারোটার সময় মারা গেলেন তামিলনাড়ুর ছ’বারের মুখ্যমন্ত্রী, জে জয়ললিতা। সোমবার মাঝরাতে এই ঘোষণা করে চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতাল। গত আড়াই মাস সেখানেই ভর্তি ছিলেন ৬৮ বছর বয়সি আম্মা।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:১৭
আম্মার জন্য কান্না। চেন্নাই অ্যাপোলো হাসপাতাল চত্বরে। সোমবার। ছবি: পিটিআই

আম্মার জন্য কান্না। চেন্নাই অ্যাপোলো হাসপাতাল চত্বরে। সোমবার। ছবি: পিটিআই

আম্মা ইরান্তা আকিরাতু।

আম্মা আর নেই!

সোমবার রাত সাড়ে এগারোটার সময় মারা গেলেন তামিলনাড়ুর ছ’বারের মুখ্যমন্ত্রী, জে জয়ললিতা। সোমবার মাঝরাতে এই ঘোষণা করে চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতাল। গত আড়াই মাস সেখানেই ভর্তি ছিলেন ৬৮ বছর বয়সি আম্মা।

২২ সেপ্টেম্বর জ্বর ও ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দীর্ঘদিন রোগভোগের পরে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন, দাবি করা হয়েছিল দলীয় সূত্রে। গত কাল বিকেলে এডিএমকের তরফে জানানো হয়, কিছু দিন পরেই বাড়ি ফিরবেন তিনি। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টে যায় ছবিটা। রবিবার সন্ধেবেলাই জানা যায়, ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হয়েছে জয়ার। সোমবার সারা দিন ধাপে ধাপে উদ্বেগের পারদ চড়ে। সন্ধেয় গুজব ছড়ায়, মারা গিয়েছেন জয়া। কিন্তু হাসপাতালের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, এই খবর ভুল। রাত সওয়া বারোটা নাগাদ ঘোষণা করা হয়, রাত সাড়ে এগারোটায় মৃত্যু হয়েছে রুপোলি পর্দা মাতানো অভিনেত্রী, রাজনীতির অলিন্দ কাঁপানো নেত্রীর।

‘‘ভারতীয় রাজনীতিতে বিপুল শূন্যতা তৈরি করল এই মৃত্যু,’’ খবর পেয়ে টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শোকবার্তা পাঠিয়েছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী এবং অমিতাভ বচ্চন। তামিলনাড়ুতে সাত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। রাতেই দেহ নিয়ে যাওয়া হয় ‘পোজ গার্ডেন’-এ, জয়ললিতার বাড়িতে। কাল থেকে দেহ থাকবে রাজাজি মণ্ডপমে। সেখানেই আম্মাকে শ্রদ্ধা জানাবেন সাধারণ মানুষ। সরকারি ভাবে কিছু বলা না হলেও কাল বা পরশু অন্ত্যেষ্টি হতে পারে বলে খবর।

সোমবার সকালবেলা চিকিৎসকেরা জানান, জয়ার অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক। তাঁর ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ড, দু’টোই কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। তাঁকে রাখা হয়েছিল ‘একস্ট্রা কর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন’ (ইসিএমও বা একমো) যন্ত্রে। এইমসের চিকিৎসক দল এবং লন্ডনের যে ডাক্তার জয়ললিতাকে আগে দেখে গিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে লাগাতার আলোচনা করা হচ্ছিল। বিকেলেই হাসপাতালে এক দল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাঠিয়েছিলেন রাজনাথ সিংহ। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না।

এ দিন সন্ধ্যায় বিভিন্ন চ্যানেলে জয়ার মৃত্যুর খবর নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। তার কিছু ক্ষণ পরেই এডিএমকে-র কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করে দেওয়া হয়। কিছু ক্ষণ বাদে অ্যাপোলোর তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, এই খবর ভিত্তিহীন। আম্মার অবস্থা সঙ্কটজনক হলেও তাঁকে চিকিৎসকরা পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। হাসপাতাল এই কথা জানানোর পরে দলীয় কার্যালয়ে এডিএমকে-র পতাকা আবার উত্তোলন করা হয়। কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে আম্মা-অনুগামীদের মধ্যে।

কিন্তু রাতের দিকে হঠাৎ জানা যায়, এডিএমকে-র শীর্ষ নেতারা বিশেষ বৈঠকে বসছেন। তখনই আশঙ্কা দানা বাঁধছিল, তা হলে কি সব শেষ! পুলিশ সূত্রে জানানো হয়, অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে পোজ গার্ডেন পর্যন্ত ট্রাফিক করিডর তৈরি করা হয়েছে। আরও উদ্বেগ বাড়ে— তা হলে কি মারাই গিয়েছেন জয়া? হাসপাতাল থেকে বাড়িতে দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্যই কি এই ট্রাফিক করিডর? আশঙ্কা যে অমূলক নয়, জানা গেল একটু পরেই। হাসপাতাল থেকে বিবৃতি জারি করা হয়, ‘‘অনির্বচনীয় শোক নিয়ে আমরা জানাচ্ছি, আজ (০৫.১২.১৬) রাত সাড়ে এগারোটার সময় আমাদের সকলের থালাইভি আম্মার মৃত্যু হয়েছে।’’ রাতে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী ও পনীরসেলভম।

জয়ললিতার শেষ ভরসা ছিল একমো। কি এই একমো? জেনে নিন..
ভরসা ছিল ‘একমো’

কাল থেকেই হাসপাতালের বাইরে কয়েকশো’ র‌্যাফ মোতায়েন করা হয়েছিল। কার্যত বন্‌ধের চেহারা নিয়েছে চেন্নাই। তবে শুধু চেন্নাই নয়, গোটা রাজ্যকেই মুড়ে ফেলা হয়েছে নিরাপত্তার চাদরে। শহরে নামানো হয়েছে পনেরো হাজার পুলিশ। তাদের সাহায্য করছে দেড় হাজার সিআরপিএফ। আজ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই ছিল বন্ধ। দুপুরে শহরের প্রায় সব অফিস ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। সকাল থেকে সামান্য কিছু দোকানপাট-রেস্তোরাঁ খোলা থাকলেও বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা বন্ধ হয়ে যায়। কর্নাটক থেকে রোজ ৪৭০টি বাস তামিলনাড়ু যাতায়াত করে। ভাঙচুরের আশঙ্কায় সকাল থেকে সেই পরিষেবা বন্ধ রেখেছে কর্নাটক রাজ্য পরিবহণ সংস্থা।

কিন্তু চেন্নাইয়ের পথে ভিড় কিছু কমেনি। মনে আশা নিয়ে রাত জেগেছেন অনুরাগীরা। মধ্যরাতে হঠাৎ হাসপাতালের ঘোষণা। হাহাকার করে উঠল অনুগামীদের জটলা— ‘‘আই আই য়ো। আই আই য়ো— হায়-হায়। হায়-হায়।’’

Jayalalithaa Tamilnadu CM Passed Away
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy