Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

তিস্তা নয়, জল দেব তোর্সার, প্রস্তাব মমতার

ভারত ও বাংলাদেশে চলতি সরকারের মেয়াদ কালেই তিস্তার জলবণ্টন চুক্তি সম্পাদন হবে বলে আজ দুপুরে আশা প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আর তার পরেই মধ্যাহ্নভোজের আসরে এবং রাতে শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্ত বৈঠকে তিস্তা নিয়ে জটিলতা কাটাতে বিকল্প প্রস্তাব দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।

ত্রয়ী: ভারত-বাংলাদেশ ট্রেনযাত্রার উদ্বোধনে শেখ হাসিনা, নরেন্দ্র মোদী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

ত্রয়ী: ভারত-বাংলাদেশ ট্রেনযাত্রার উদ্বোধনে শেখ হাসিনা, নরেন্দ্র মোদী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:২২
Share: Save:

ভারত ও বাংলাদেশে চলতি সরকারের মেয়াদ কালেই তিস্তার জলবণ্টন চুক্তি সম্পাদন হবে বলে আজ দুপুরে আশা প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আর তার পরেই মধ্যাহ্নভোজের আসরে এবং রাতে শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্ত বৈঠকে তিস্তা নিয়ে জটিলতা কাটাতে বিকল্প প্রস্তাব দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বলেন, ‘‘আপনার তো জল দরকার। তোর্সা ও আরও যে দু’টি নদী উত্তরবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে গিয়েছে, তার জলের ভাগ ঠিক করতে দু’দেশ কমিটি গড়ুক। শুকনো তিস্তার জল দেওয়াটা সত্যিই সমস্যার।’’

তিস্তার জল দিতে না-পারার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ যাতে ভুল না-বোঝেন, সে জন্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ পাঠানোর প্রস্তাবও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, ১০০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ বাংলাদেশকে দিতে পারে পশ্চিমবঙ্গ। বিদ্যুৎ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রস্তাব শুনে সন্তোষ প্রকাশ করে নরেন্দ্র মোদী তখনই বলেন, ‘‘সরকারি ভাবে এই প্রস্তাব দিন, আমি দেখছি কী করা যায়।’’ এর পরে রাজ্যের অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে এ দিন রাতেই সরকারি ভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই প্রস্তাব জানিয়ে চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

রাজনীতিকদের একাংশ বলছেন, মমতা তিস্তা প্রসঙ্গে একটি কুশলী মোচড় দিলেন! এ দিন মধ্যাহ্নভোজের সময়েই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে মমতা জানিয়েছিলেন, কেন তিস্তার উপরেই নজর সীমাবদ্ধ রাখা হবে? অন্যান্য আন্তঃরাষ্ট্রীয় নদীগুলি থেকেও কী ভাবে শুখা মরসুমে দু’দেশ জল পেতে পারে, সামগ্রিক ভাবে সেটা দেখা দরকার। তোর্সা রয়েছে, উত্তরবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে আরও দু’টি নদী ঢুকেছে। এগুলির জলের ভাগ নিয়ে যৌথ সমীক্ষা করার নির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন মমতা।

তাঁর তোর্সা-প্রস্তাব বাংলাদেশ কী ভাবে দেখছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু বিদেশ মন্ত্রকের এক সূত্র জানাচ্ছেন, তোর্সার জলবণ্টন নিয়ে মমতার প্রস্তাব কেন্দ্রের পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন। তবে কেন্দ্রের ডাকে সাড়া দিয়ে মমতা যে ভাবে নয়াদিল্লিতে উপস্থিত হয়েছেন, সেই বিষয়টিকে অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এ দিন তাঁর বক্তৃতাতেও বলেছেন, ‘‘আমি খুব খুশি যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আমার অতিথি হিসেবে এসেছেন। আমি জানি যে বাংলাদেশের প্রতি তাঁর মনোভাব, আমার নিজের মনোভাবের মতোই উষ্ণ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আমি আশ্বস্ত করতে চাই, প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য ধারাবাহিক প্রয়াস জারি রয়েছে।’’

আরও পড়ুন: দুপুরে পাতে ভেটকি

শেখ হাসিনা আজ ব্যক্তিগত নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানান মমতাকে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনের দ্বারকা স্যুইটে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্য নিয়ে যান বাঁকুড়ার ঐতিহ্যবাহী বালুচরি শাড়ি ও ‘বিশ্ববাংলা’ বিপণি থেকে নানা উপহার। রাত পর্যন্ত একান্ত আলাপচারিতাও করেছেন দুই নেত্রী। রাতে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মমতা বলেন, ‘‘তিস্তার জল দেওয়াটা যে সত্যিই সমস্যার, সে কথা আমি বাংলাদেশের

প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়ে বলেছি। শুখা মরসুমে তিস্তায় জল কোথায়? তখন বাংলাদেশকে জল দিয়ে দিলে রাজ্যে চাষের জলের টান পড়বে। পানীয় জলও মিলবে না। তার চেয়ে অন্য কথা ভাবুন।’’

কী সেই অন্য কথা?

মমতা বলেন, ‘‘আমি বলেছি, আপনাদের তো জল পাওয়া নিয়ে কথা। বাংলাদেশকে জল দিতে আমার কোনও আপত্তি নেই। তোর্সা রয়েছে। রয়েছে আরও নদী। সেগুলির জলের ভাগ নিয়ে সমীক্ষা হোক। সেই জল দিতে রাজ্যের বাধা নেই। বাংলাদেশ জল পাক সেটা আমিও চাই।’’

দুপুরে হায়দরাবাদ হাউসে পুর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থেকে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যে রেল ও বাস চলাচলের উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে আলাপ আলোচনাও করেছেন মমতা। সুষমার জন্যও বালুচরি শাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন মমতা।

মোদী তাঁর বিবৃতিতে আজ অবশ্যই তিস্তা নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী থেকেছেন। প্রথমে বলেন, ‘‘দু’দেশের মধ্যে বেশ কিছু নদী রয়েছে যা মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে তিস্তা নিয়ে সব চেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। তিস্তা ভারত, বাংলাদেশ এবং দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’’ এর পরই তিনি হাসিনার উদ্দেশে বলেন, ‘‘আমি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি, একমাত্র আমার এবং আপনার সরকারই তিস্তার জলবণ্টন সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE