প্রতীকী ছবি।
খেতে না পাওয়া শুকনো মুখটা সে দিন একটু উজ্জ্বল হয়েছিল। যে দিন পাড়াতুতো দাদা এসে ভাল মাইনের কাজ পাইয়ে দেবে বলে কথা দিল। ভাল দিনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে ঘর ছেড়েছিল নেপালি মেয়েটি। মুম্বইয়ের নাম আগে সে অনেক শুনেছে। বড় শহর, কত্ত কলকারখানা। তাই অবিশ্বাস করেনি। কিন্তু, যে দিন প্রথম কাজের ‘বহর’ সম্বন্ধে চোখ খুলল তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। তত ক্ষণে বাণিজ্য নগরীর বিখ্যাত যৌনপল্লির অন্ধকার স্যাঁতসেতে ঘরে কোনও এক ‘মাসি’র হেফাজতে পৌঁছে গিয়েছে পুতুল পুতুল গড়নের নেপালি সেই মেয়ে।
তবে সে একা নয়। তাঁর মতো হাজার হাজার মেয়ের সঙ্গে প্রতি দিন এমন ঘটনা ঘটছে। দেহ ব্যবসায় নামতে বাধ্য হচ্ছে অনেকে। এর পিছনে আর একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। এবং সেটা আরও ভয়ানক। বাজারে নাকি তাঁদের গায়ের চামড়ার চাহিদা বিপুল। তাই হঠাৎ করেই কোনও কোনও রাতে উধাও হয়ে যায় তাঁদের শরীরের চামড়া! বেশ কিছু ক্ষেত্রে আর কোনও খোঁজই পাওয়া যায় না সেই মেয়েদের।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, মুম্বইয়ের যৌনপল্লির অলিতে গলিতে রমরম করে চলছে নারী চামড়ার এই ব্যবসা। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক গরিব মেয়েকে পাচার করে নিয়ে আসা হয় মুম্বইয়ের যৌনপল্লিতে। এদের বেশির ভাগই নেপালি। উদ্দেশ্য একটাই। চামড়ার যোগান বজায় রাখা।
কী ভাবে চামড়া সংগ্রহ করা হয়? যৌনপল্লির এক বাসিন্দা নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। তিনি জানান, অনেক সময় চামড়া পাচারকারীরা সাধারণ খদ্দেরের ছদ্মবেশে আসেন। মাদক খাইয়ে অজ্ঞান করে দেন। সকালে উঠে দেখা যায় শরীরের কোনও না কোনও অংশ থেকে চামড়া কেটে নিয়ে গিয়েছেন ওই খদ্দের। অসহ্য যন্ত্রণায় কাটে পরবর্তী দিনগুলি।
মুম্বইয়ের একটি যৌনপল্লি।
কিন্তু কী কাজে লাগে এত চামড়া?
শক্তি সমুহা নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী সুনীতা দনুয়ার জানালেন, এই চামড়া প্রথমে যায় মুম্বইয়ের বিভিন্ন চামড়া কারখানায় অথবা স্কিন প্যাথোলজিতে। সেখানে চামড়া ‘প্রসেসিং’ করা হয়। এর পর সেই ‘প্রসেসড স্কিন’ চলে যায় মার্কিন মুলুকে। সেখানকার প্লাস্টিক সার্জারি মার্কেটে এই চামড়ার চাহিদা বিপুল। প্রধানত পুরুষাঙ্গ বড় করা এবং স্তন বৃদ্ধি করার কাজেই ব্যবহৃত হয় এই চামড়া। এই ব্যবসায় লাভও আকাশছোঁয়া। কারণ ১০০ বর্গ ইঞ্চি চামড়া বিক্রি হয় ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকায়।
আরও পড়ুন: হাইলাকান্দিতে বাল্য বিবাহ রুখল প্রশাসন
কিন্তু প্রশাসনের নাকের ডগায় বসেও কী ভাবে অবাধে চলছে এই অবৈধ চামড়ার ব্যবসা? প্রশ্নটা উঠছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যৌনকর্মী জানালেন, বেশির ভাগ কেসই পুলিশের নজরে পড়ে না। কারণ কোনও মেয়েই সাহস করে অভিযোগ জানায় না। এই নিয়ে টুঁ শব্দটিও করলে কপালে জোটে অকথ্য অত্যাচার। ফলে বাধ্য হয়েই মুখ বন্ধ রাখেন মহিলারা।
তবে সম্প্রতি প্রশাসনের নজরে এসেছে গোটা বিষয়টি। নেপালের সমাজ ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী কুমার খারকে জানান, ‘‘রিপোর্ট দেখে চমকে গিয়েছি। এটি যথেষ্ট উদ্বেগজনক। দ্রুত তদন্ত শুরু হবে। অপরাধীদেরও শাস্তি হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy