Advertisement
E-Paper

নাচতে নাচতে চাঁদ, সূর্যের ছবি তোলে গুবরে পোকা, দেখুন ভিডিও

মস্ত বড় ফোটোগ্রাফার গুবরে পোকা! গোটা মহাকাশ ঢুঁড়ে ফেলতে আমাদের টেলিস্কোপ লাগে। মহাকাশে পাঠাতে হয় নানা উপগ্রহকে। সে সব কিছুই লাগে না গুবরে পোকার। জানাচ্ছে হালের চমকে দেওয়া গবেষণা।

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৬ ১১:০০

মস্ত বড় ফোটোগ্রাফার গুবরে পোকা!

গোটা মহাকাশ ঢুঁড়ে ফেলতে আমাদের টেলিস্কোপ লাগে। মহাকাশে পাঠাতে হয় নানা উপগ্রহকে।

সে সব কিছুই লাগে না গুবরে পোকার।

গোবর বা অন্যান্য জীবজন্তুর মলের ওপর নাচতে নাচতে ঝপাঝপ ‘ক্লিক ক্লিক’ করে চলে গুবরে পোকা! একের পর এক ছবি তোলে আকাশ, মহাকাশের। ‘লেন্স-বন্দি’ করে চাঁদ, সূর্য, অন্য গ্রহ-উপগ্রহদের। নিজেদের ‘ক্যামেরা’য় তোলা সেই সব ছবি তাদের খুব ছোট্ট মাথার কোষের ‘অ্যালবামে’ ভরে রাখে গুবরে পোকারা। বলা ভাল, সেই সব ছবি একেবারে পর পর সাজিয়ে রাখে। তাদের তোলা সেই সব ছবি দিয়েই গুবরে পোকারা বুঝে নিতে পারে, এখন তারা কোথায় রয়েছে, তাদের এখন কোন দিকে যেতে হবে, ঝড়-বৃষ্টি-ভূমিকম্প-জলোচ্ছ্বাস আসছে কি না, কোন দিকে গেলে তারা এড়াতে পারবে ওই সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ!

জীবজন্তুর মলের ওপর নাচতে নাচতে মহাকাশের ছবি তুলেই নিজেদের পথ চলার জন্য ‘নেভিগেশান করে গুবরে পোকারা!


মস্ত ‘ফোটোগ্রাফার’ গুবরে পোকা!

কোনও কল্প-কাহিনী নয়। নয় কোনও রূপকথা।

‘ফোটোগ্রাফার’ গুবরে পোকার এই চমকে দেওয়া আচার-আচরণ-অভ্যাস ধরা পড়েছে একেবারে হালের একটি গবেষণায়।

সুইডেনের লুন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিদ্যার অধ্যাপক বাসিল এল জুন্দির নেতৃত্বে এক গবেষকদল এই সাড়াজাগানো তথ্যটি জানিয়েছেন সম্প্রতি। তাঁদের গবেষণাপত্রটির নাম- ‘হোয়াই ডাং বিটল্স ডান্স অ্যান্ড হোয়াট দে ডু হোয়াইল ডান্সিং’। এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞান জার্নাল ‘কারেন্ট বায়োলজি’র এপ্রিল সংখ্যায়।

জুন্দির সহযোগী গবেষক ডেনমার্কের কোপেনহাগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিদ্যার ভারতীয় অধ্যাপক তরুণ অহলুওয়ালিয়া আনন্দবাজারকে বলছেন, ‘‘আমরা এই পরীক্ষাটা চালিয়েছিলাম দক্ষিণ আফ্রিকায়, একটি বিশেষ প্রজাতির গুবরে পোকার ওপর। যার বৈজ্ঞানিক নাম- ‘স্ক্যারাবাইয়াস স্যাটিরাস’। আমরা দীর্ঘ দু’দশকের গবেষণায় দেখেছি, ওই প্রজাতির গুবরে পোকারা আমাদের ছায়াপথ ‘মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি’ থেকে বিচ্ছুরিত আলো ধরেই তাদের যাওয়া-আসার পথের দিক নির্ণয় (নেভিগেশান) করে। আর সেটা তখনই করতে পারে, যখন তারা গোবর বা অন্যান্য জীবজন্তুর মলের ওপর নাচানাচি করতে থাকে। আমরা দেখেছি, আমাদের এই গ্যালাক্সির আলোয় চাঁদ, সূর্য, গ্রহ-উপগ্রহের ছবি তোলার সময়েই গুবরে পোকারা নাচানাচি করতে শুরু করে। তারা নাচানাচি করলেই ওই সব ছবি তোলার জন্য তাদের ‘ক্যামেরা’ আপনাআপনিই ‘অন’ হয়ে যায়।’’

কী ভাবে গ্যালাক্সির আলোয় চলে গুবরে পোকা। দেখুন ভিডিও।

কী ভাবে চালানো হয়েছে ওই পরীক্ষাটি?

মূল গবেষক জুন্দি সুইডেন থেকে ই-মেলে এই প্রতিবেদককে যা জানিয়েছেন, তার নির্যাসটুকু এখানে তুলে দিচ্ছি।

গবেষকরা পরীক্ষাটা চালিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার একটি বিশেষ এলাকায়। যেখানে ওই বিশেষ প্রজাতির গুবরে পোকার আধিপত্য রয়েছে বহু দিন ধরেই। সেখানে তাঁরা ছাদ বন্ধ একটি গোলাকার জায়গায় কৃত্রিম ভাবে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করেছিলেন, যেন সেখানে একটি মহাকাশ রয়েছে। কৃত্রিম আলোর মাধ্যমে সেখানে তাঁরা চাঁদ, সূর্য বানিয়েছিলেন। গবেষকদের জানা ছিল, জঞ্জাল, আবর্জনার স্তুপে থাকা জীবজন্তুর মলের ছোট ছোট টুকরোগুলোকে একেবারে সোজা সরল রেখা ধরে টেনে নিয়ে যেতে পারে গুবের পোকারা। তা সে পথ যতই এবড়োখেবড়ো হোক না কেন, মলের ছোট ছোট টুকরোগুলোকে নিয়ে একেবারে সরল রেখা ধরেই চলতে পারে গুবরে পোকারা। নিখুঁত ভাবে। পরে সেই মলটাই তারা তাদের বাচ্চাকাচ্চাদের খাওয়ায়। ওটাই ওদের প্রধান খাদ্য। কিন্তু মলের ছোট ছোট টুকরোগুলোকে নিয়ে তাদের নিরাপদে চলার কাজটা খুব সহজ নয়। কারণ, তা নিয়ে তাদের মধ্যে খুব কাড়াকাড়ি হয়। কেউ সেটা কেড়ে নিলে, তখন আবার সেই জঞ্জাল-আবর্জনার স্তুপে গিয়ে তাকে মল জোগাড় করতে হয়। তাকে ছোট ছোট টুকরো করতে হয়। যে কাজটা বেশ পরিশ্রমের। তাই যাতে কেউ তাদের কাছ থেকে মলের টুকরোটা কেড়ে নিতে না পারে, তাই গুবরে পোকাদের সেটা নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি নিরাপদ জায়াগায় সরে যেতে হয়।

গবেষকরা জানতে, বুঝতে চেয়েছিলেন, সেটা কী ভাবে করে গুবরে পোকারা?

গবেষকরা এটা অবশ্য আগেই জানতেন, গুবরে পোকার মতো বেশ কয়েকটি পতঙ্গের চোখে রয়েছে একটি বিশেষ ধরনের ‘ফোটোরিসেপ্টার সেল’ বা ‘আলোক-সংগ্রাহক কোষ’। সূর্যের চার ধারে যে বিশেষ ‘পোলারাইজ্ড আলো’ রয়েছে, এই পতঙ্গদের ‘ফোটোরিসেপ্টার কোষ’গুলো তা দেখতে পায়। আমরা কিন্তু সূর্যের চার পাশে থাকা সেই আলো দেখতে পাই না।

কিন্তু রাতে গুবরে পোকারা কী ভাবে পথ চিনে ঠিকঠাক চলতে পারে, তা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলেন না গবেষকরা।

আরও পড়ুন- আর ৯ বছরে ভারতে ৫ লক্ষ মহিলার মৃত্যু হতে পারে ক্যানসারে

কোপেনহাগেন থেকে সহযোগী ভারতীয় গবেষক তরুণ অহলুওয়ালিয়ার দাবি, এটাই তাঁদের সবচেয়ে বড় সাফল্য। তাঁরা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন, যে রাতে আকাশে চাঁদ থাকে না, সেই ঘুটঘুটে অন্ধকার অমাবস্যার রাতেও কী ভাবে ঠিকঠাক পথ চিনে মল নিয়ে সরল রেখা ধরে দ্রুত এগিয়ে চলে গুবরে পোকারা। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কোন পথ ধরে তারা যাবে, তা আগেই ঠিক করে রেখেছিল গুবরে পোকারা। সূর্যের আলো থাকার সময়েই তারা তাদের ‘ক্যামেরা’য় ছবি তুলে নিয়েছিল মহাকাশের। চাঁদ, সূর্য, গ্রহ-উপগ্রহের। আর সেই সব ছবি তারা তাদের ছোট্ট্ মগজের ‘অ্যালবামে’ নিখুঁত ভাবে জমিয়ে (স্টোরড) রেখেছিল। তাই অমাবস্যার রাতেও তারা সেই ‘জমানো ছবি’ ভাঙিয়েই খাচ্ছে! ঠিকঠাক পথ চিনে এগিয়ে যেতে পারছে, একেবারে সরল রেখা ধরেই। স্মৃতিই হয়ে দাঁড়াচ্ছে তাদের মূল চালিকা-শক্তি!

Dung Beetles Take Celestial 'Snapshots' Of Milky Way To Navigate Their Way Dung Beetle Navigation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy