Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

লিফটে চড়ে চাঁদে!

বহুতল আবাসনের বাসিন্দা বা উঁচু অফিস বাড়ির চাকুরে কী ভাবে উপরতলায় ওঠেন? সহজ উত্তর— লিফটে চড়ে। এ বার নাকি ঠিক সেই ভাবেই পৌঁছে যাওয়া যাবে চাঁদেও! পৃথিবী থেকে চাঁদে পৌঁছতে না কি আর মহাকাশযান লাগবে না। লিফটে বা এলিভটরে ঢুকে চাঁদের বোতাম টিপে দিলেই কেল্লা ফতেহ্‌!

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৫ ১০:১৪
Share: Save:

বহুতল আবাসনের বাসিন্দা বা উঁচু অফিস বাড়ির চাকুরে কী ভাবে উপরতলায় ওঠেন? সহজ উত্তর— লিফটে চড়ে। এ বার নাকি ঠিক সেই ভাবেই পৌঁছে যাওয়া যাবে চাঁদেও! পৃথিবী থেকে চাঁদে পৌঁছতে না কি আর মহাকাশযান লাগবে না। লিফটে বা এলিভটরে ঢুকে চাঁদের বোতাম টিপে দিলেই কেল্লা ফতেহ্‌!

রসায়নের এক যুগান্তকারী আবিষ্কার সেই স্বপ্নই দেখাচ্ছে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের।

মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে স্পেস এলিভেটরের ধারণা নতুন কিছু নয়। পৃথিবী থেকে কৃত্রিম উপগ্রহে যাওয়া, মহাকাশ স্টেশনে যাওয়া বা চাঁদে পৌঁছনোর জন্য বার বার মহাকাশযান উড়িয়ে বিপুল খরচ করার চেয়ে, স্থায়ী স্পেস এলিভেটর বানিয়ে নেওয়ার কথা মহাকাশ গবেষকরা অনেক আগেই ভেবেছিলেন। কারণ সে রকমটা সম্ভব হলে মহাকাশে যাওয়ার পদ্ধতিও অনেক সহজ হত, গবেষণার প্রয়োজনে যখন তখন মহাকাশে যাওয়া যেত। কিন্তু, স্পেস এলিভেটর তৈরির চিন্তা মাথায় এলেই তো আর বাস্তবায়িত হয় না! চ্যালেঞ্জ নানা রকমের। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উপযুক্ত থ্রেড বা রশি তৈরি করা। বহুতল বাড়িতে খুব শক্ত থ্রেড বা রশি বেয়েই লিফট ওঠানামা করে। কিন্তু বহুতলে ব্যবহৃত সেই থ্রেডের ভরসায় যে পৃথিবী থেকে চাঁদ পর্যন্ত লিফট ঝুলিয়ে দেওয়া যায় না, তা কে না বোঝে! আমেরিকার পেনসিলভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এ বার এমন থ্রেড আবিষ্কার করে ফেলেছেন, যা পৃথিবীর এত দিনের ইতিহাসে আবিষ্কৃত সবচেয়ে মজবুত বস্তু। অন্তত তেমনটাই দাবি বিজ্ঞানীদের। এই থ্রেডের নাম দেওয়া হয়েছে ডায়মন্ড ন্যানো থ্রেড। হীরের বজ্রকাঠিন্যের কথা মাথায় রেখেই এমন নামকরণ। রসায়নের অধ্যাপক জন ব্যাডিং-এর নেতৃত্বে এই গবেষণা হয়েছে। তরল বেঞ্জিনের বিচ্ছিন্ন অণু’র উপর বিশেষ চক্রে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন গবেষকরা। তাঁদের ধারণা ছিল, বেঞ্জিনের অণুগুলি অসংগঠিত আচরণ করবে। কিন্তু গবেষকরা দেখে অবাক হয়ে যান যে, ঐ বিশেষ চক্রের মাধ্যমে দেওয়া চাপ, তরল বেঞ্জিনকে কার্বন পরমাণুর কঠিন শৃঙ্খলে পরিণত করছে। রসায়নের গবেষকরা বলছেন, কার্বনের যে নতুন রূপটি পেনসিলভেনিয়ার গবেষণাগারে জন্ম নিয়েছে, তা পৃথিবীতে এ যাবত্ আবিষ্কৃত পদার্থগুলির মধ্যে সবচেয়ে শক্ত, সর্বাপেক্ষা কঠিন। বিজ্ঞানীরা এই কার্বন শৃঙ্খলেরই নাম দিয়েছেন ডায়মন্ড ন্যানো থ্রেড। এই ডায়মন্ড ন্যানো থ্রেড খুব সুক্ষ্ম। মানুষের চুলের চেয়ে তা ২০ হাজার ভাগ পাতলা। ফলে খুব হালকা। কিন্তু অবিশ্বাস্য মজবুত।

স্পেস এলিভেটর তৈরির জন্য এর চেয়ে উপযুক্ত আর কিছু হতেই পারে না, দাবি পেনসিলভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির। পৃথিবী থেকে কৃথ্রিম উপগ্রহ, মহাকাশ স্টেশন, চাঁদ বা মহাকাশের অন্য যে কোনও বিন্দু পর্যন্ত এই ডায়মন্ড থ্রেডের কাঠামো বানানো গেলেই, সেই থ্রেড বেয়ে স্পেস এলিভেটরের ওঠানামা সম্ভব হবে। মনে করছেন গবেষকরা। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ও ডায়মন্ড ন্যানো থ্রেড তৈরির গবেষণায় সাফল্য পেয়েছে ইতিমধ্যেই।

উদ্যোগ যদি ঠিক পথে এগোয়, তা হলে মহাকাশ গবেষণার অবিশ্বাস্য নতুন দিগন্ত তো খুলবেই। মহাকাশে দেদার পর্যটনের সম্ভাবনা নিয়েও ভাবতে শুরু করেছেন কেউ কেউ।

হেমন্তের কোনও জ্যোৎস্না মাখা রাতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে যদি রোমান্টিক ঘোর লাগে চোখে, তা হলে যুগলে লিফটে ঢুকে চাঁদের বোতামে হয়তো চাপ দেওয়াই যেতে পারে। একটু খরচ করলেই, পূর্ণিমার আকাশে ভেসে থাকা ঝলসানো রুটিটাকে ছুঁয়ে দেখা যেতেই পারে। হয়তো আসতে চলেছে তেমন দিনও!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

elevator moon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE