Advertisement
১৯ মে ২০২৪

প্রেম ছিল, আলো ছিল

কলামন্দিরে ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা পাঠ শুনলেন বারীন মজুমদারসম্প্রতি কলামন্দিরে অনুষ্ঠিত হল ‘আনন্দম’ আয়োজিত ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরও একটি পূর্ণাঙ্গ আবৃত্তির অনুষ্ঠান। শুরুটা অবশ্য হয়েছিল বর্তমান সময়ের তিন তরুণ কবি শমীন্দ্র ভৌমিক, অনির্বাণ দাশগুপ্ত ও শিবাশিস মুখোপাধ্যায়ের রচিত কবিতা পাঠের মাধ্যমে।

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৬ ০০:০৩
Share: Save:

সম্প্রতি কলামন্দিরে অনুষ্ঠিত হল ‘আনন্দম’ আয়োজিত ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরও একটি পূর্ণাঙ্গ আবৃত্তির অনুষ্ঠান। শুরুটা অবশ্য হয়েছিল বর্তমান সময়ের তিন তরুণ কবি শমীন্দ্র ভৌমিক, অনির্বাণ দাশগুপ্ত ও শিবাশিস মুখোপাধ্যায়ের রচিত কবিতা পাঠের মাধ্যমে।
ব্রততী শুরু করলেন রবীন্দ্রনাথের কবিতা দিয়ে। এই পর্বে লিপিকা থেকে ‘ভুলস্বর্গ’ আর ‘ঝুলন’-এর অনবদ্য পরিবেশন শোনা গেল। ভিন্ন ভিন্ন কবিতার বিষয়বস্তু অনুযায়ী কল্যাণ সেন বরাট ও প্রত্যুষ বন্দ্যোপাধ্যায় যে আবহ সঙ্গীত রচনা করেছেন এক কথায় তা চমৎকার। যখন নজরুলের প্রতিবাদী কবিতা ‘বিদ্রোহী’ পাঠ করলেন তখন তাঁর যে কণ্ঠ, যে প্রকাশ, তারই বিপরীত রূপ শোনা গেল ‘প্রেম ছিল, আলো ছিল’ (জীবনানন্দ দাশের লাশকাটা ঘরে)। তখন অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহের সে ছবি যেন চোখের সামনে মূর্ত হয়ে ওঠে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ভারতবর্ষের মানচিত্রের ওপর দাঁড়িয়ে’ কবিতাটিও অন্তরকে নাড়া দেয়। ভালবাসা পর্বের চয়নে ছিল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (ভালবাসাকে ভালবেসেছি), শক্তি চট্টোপাধ্যায় (পাতাল থেকে বলছি), জয় গোস্বামী (তুমি জানতে না বুঝি), পূর্ণেন্দু পত্রী (নন্দিনীর সংলাপ)। প্রত্যেকটি কবিতার বিষয়বস্তু আলাদা হলেও ভালবাসা বা প্রেম যে কত স্তরে বাঁধা এবং সেই অনুভূতির যে বিচিত্রতর প্রকাশ হতে পারে তা ব্রততীর পরিবেশনের মাধ্যমে ধরা দেয়। কখনও বসে, কখনও দাঁড়িয়ে, বিষয়বস্তু অনুযায়ী যে ভাবে ভাগ করেছিলেন তাও লক্ষণীয়। নারীশক্তি পর্বে সব কবিতাই অনবদ্য। তবুও মল্লিকা সেনগুপ্তর ‘কন্যাশ্লোক’ কবিতাটি প্রেক্ষাগৃহ ভর্তি শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রাখে। শেষ করলেন রবীন্দ্রনাথের ‘কালের যাত্রার ধ্বনি’ শুনিয়ে।

যদি সব বদলে যেত

‘এক পৃথিবী ভালবাসা’ অনুষ্ঠানে। বিড়লা সভাঘরে।

পরিবেশ মানে যে শুধুই নিজের ফ্ল্যাট নয়, সেটা যে পাশের বাড়ি, এমনকী পাশের দেশও — তাই ছিল ‘ওয়ান আর্থ, ওয়াই লাইফ... এক পৃথিবী ভালবাসা’ অনুষ্ঠানের মূল বিষয়। সম্প্রতি সাম্য এবং সুলগ্নার পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানটি হয়ে গেল জি ডি বিড়লা সভাঘরে। রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ থেকে জয় গোস্বামী বা শ্রীজাত। সংকলনটি রচনা করেছিলেন সাম্য। লোপামু্দ্রার কণ্ঠে ‘বহে নিরন্তর অনন্ত আনন্দধারা’ আর সুলগ্নার নাচের সঙ্গে অনুষ্ঠান শুরু। বেশ ভাল। কিন্তু ঠিক পরেই ত্রুটি রয়ে গেল ‘সুলগ্না অ্যাকাডেমি’র ছাত্রীদের পরিবেশনায়। আরও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন ছিল। কারও কারও ত্রুটি বেশ নজরে পড়েছে।

অনুষ্ঠানে রাঘব চট্টোপাধ্যায় শোনালেন নজরুলের ধ্রুপদ অঙ্গের গান ‘ভারত শ্মশান হল মা’। সঙ্গে সাম্যর কন্ঠে শ্রীজাতর ‘অন্ধকার লেখাগুচ্ছ’। সমাজের বিভিন্ন বিষয়কে ছুঁতে চাওয়া হয়েছে। যেমন ধর্মান্ধতা, জঙ্গি হামলা বা নির্ভয়া ধর্ষণ। প্রমিতা মল্লিকের ‘আমি মারের সাগর পাড়ি দেব’ আর একই সঙ্গে সাম্যর উচ্চারণে ‘তোমাকে আমরা বাঁচাতে পারিনি দামিনী’ দর্শকদের মন ছুঁয়ে যায়। গান, আবৃত্তি ছাড়াও সোহম এবং সুপ্রতিমের ছোট ছোট নাট্যাংশ ছিল বেশ নজরকাড়া। প্রশংসা পাবেন।

শেষটা বেশ মনে রাখার মতো। বৃক্ষরোপণের মধ্যে দিয়ে নতুন প্রাণের বন্দনা করলেন লোপামুদ্রা ‘মরু বিজয়ের কেতন’। প্রমিতা মল্লিক ‘আহ্বান আসিল’। আবহে সৌম্যজ্যোতির বাঁশি পরিবেশটিকে আরও পরিপূর্ণ করে তোলে।

সাঁইত্রিশ পেরিয়েও

প্রবীণ তবলিয়া বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় কলাশ্রী নিবেদন করল ৩৭ তম বার্ষিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় প্রিয়া ছন্দে সাত মাত্রা তালে রমা মুখোপাধ্যায়ের নজরুলগীতি দিয়ে। পরে সংস্থার ছাত্রছাত্রীরা পাঠ করে শোনাল শৈলেন্দ্রপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের লেখা থেকে কয়েকটি ছড়া। এর আগে শিপ্রা সেনকে সংবর্ধনা দিলেন সংস্থার কর্ণধার বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায়।

অমিতাভ ঘোষ শোনালেন রাগ পুরিয়া ধ্যানেশ্রী, পরে তারানা। ভাল গাইলেন কৃষ্ণাপ্রভা মণ্ডল (নজরুলগীতি), শ্রাবণী ঘোষাল (রাগপ্রধান), সৌম্যশ্রী কাঁড়ার (একক পাঠ)। একক কত্থক নৃত্যে যোগ্যতার প্রমাণ দিলেন সংসৃতি সেন। তবলায় যোগ্য সংগত করলেন সুমন কাঁড়ার, বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায়, অমিয় চৌধুরী, শিবনাথ মুখোপাধ্যায়। তবে অনুষ্ঠান মাতিয়ে দিলেন শিপ্রা সেন। তিনি শোনালেন ঠুমরি, রাগপ্রধান, গীত, গজল, ভজন। দ্বিতীয় পর্বে সম্মান জানানো হয় দীপালি নাগকে।

এ দিনের শ্রেষ্ঠ নিবেন ছিল বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায়ের পরিকল্পনায় সমবেত তবলায় তাল-তরঙ্গ। প্রথমে রূপক তালে, পরে তিন তালে অংশ নিলেন সুমন কাঁড়ার, অমিয় চৌধুরী, জয়দীপ চক্রবর্ত়ী, রিতম পাল, শুভ্রাংশু দে। হারমোনিয়ামে অমিতাভ ঘোষ। উপস্থাপনায় ছিলেন ইন্দ্রাণী কাঁড়ার।

পড়বে মনে

জয়তী রাহা

রবীন্দ্র সদনে অনুষ্ঠিত হল নিখিলবঙ্গ নববর্ষ উৎসব সমিতি আয়োজিত রবীন্দ্রনাথের গান ও পাঠের অনুষ্ঠান। প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের উপরাষ্ট্রদূত জকি আহাদ।

স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্তের মন্ত্রোচ্চারণে দ্বিতীয় পর্যায়ের শুরু। তিনি তাঁর স্বভাবসিদ্ধ গায়কিতে বেশ কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন। এর পর মঞ্চে আসেন লোপামুদ্রা মিত্র। শ্রোতাদের দাবি মেনে পর পর ছ’টি রবীন্দ্রসঙ্গীতে মাতিয়ে দেন এই শিল্পী। পরবর্তী পর্যায়ের উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান ছিল নৃত্যালেখ্য ‘ঋতুরঙ্গ’। পরিবেশনায় থাঙ্কুমণি কুট্টি এবং নির্দেশনায় সোমনাথ জি কুট্টি। শব্দ-আলোর মেলবন্ধনে কলামণ্ডলমের ছাত্রীদের নৃত্যালেখ্য যথেষ্ট প্রশংসিত হয়।

সুরের মালায়

ভবানীপুর সঙ্গীত সম্মিলনীর আয়োজনে নজরুলগীতির অনুষ্ঠান হয়ে গেল সম্মিলনীর নিজস্ব প্রেক্ষাগৃহে। সভাপতি বিশ্বনাথ চট্টোপাধ্যায়ের স্বাগত ভাষণের পর একে একে হেলেন মুখোপাধ্যায়, রীতা ঘোষ, নূপুর চক্রবর্তী প্রমুখ সুন্দর সঙ্গীত পরিবেশন করলেন। সব শেষে গান শোনালেন জ্যোতিপ্রকাশ চট্টোপাধ্যায়। শিল্পীর চর্চিত ধ্রুপদী কণ্ঠে সুপরিমিত মাত্রা পায় ‘সুরে ও বাণীর মালা’, ‘কাবার জেয়ারত’, ‘শূন্য এ বুকে’, ‘ভরিয়াপরাণ’, ‘মনে পড়ে আজ’, ‘মহাকালের কোলে’ প্রভৃতি গানগুলি।

যন্ত্রানুষঙ্গে শম্ভু নস্কর, অংশুমালী পাল, সুদীপ চট্টোপাধ্যায়রা সুসঙ্গত করেন।

এত দিনে

চৈতী ঘোষ

সুছন্দার রজত জয়ন্তী বর্ষ উপলক্ষে জ্ঞানমঞ্চে পরিবেশিত হল নৃত্যালেখ্য ‘এত দিনে তার আহ্বান’। রবিঠাকুরের শাপমোচন, চণ্ডালিকা, শ্যামা ও চিত্রাঙ্গদার বিশেষ নাটকীয় মুহূর্তগুলিকে একত্র করে নাট্যকাব্যের আকারে নৃত্যালেখ্য। ভাবনা, গ্রন্থনা, নৃত্য ও সঙ্গীত পরিচালনায় সুরঙ্গমা দাশগুপ্ত। কেবল মিলন ও বিচ্ছেদের আখ্যান নয়, সুরঙ্গমার ভাবনায় প্রাধান্য পেয়েছে নাট্যশাস্ত্রে বর্ণিত নায়ক ও নায়িকা ভেদ। ধীরশান্ত নায়ক আনন্দ, ধীরোদাত্ত অর্জুন, বজ্রসেনের পাশাপাশি নায়িকা শ্যামা, অভিসারিকা কমলিকা— চরিত্রগুলির নিখুঁত চিত্রায়নের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি রসোত্তীর্ণ হয়। শ্যামার ভূমিকায় সুরঙ্গমা ও বজ্রসেনের ভূমিকায় পি টি নরেন্দ্রনের নাটকীয় অভিব্যক্তি মন ছুঁয়ে যায়। অন্যান্য শিল্পীদের মধ্যে চণ্ডালিকা ও চিত্রাঙ্গদার ভূমিকায় লোকেশ্বরী দাশগুপ্ত ও অরুণেশ্বরের ভূমিকায় সুরম্যপূষণ দাশগুপ্ত উল্লেখ্য। প্রধান অতিথি ছিলেন নৃত্যশিল্পী নরেশ কুমার।

নানা গানে

সম্প্রতি গিরিশ মঞ্চে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনালেন অরুন্ধতী চট্টোপাধ্যায়। এর আগে ছিল সংবর্ধনার অনুষ্ঠান। সমাজে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন ব্যক্তিত্বদের সম্মান জানানো হয়। পরে অরুন্ধতী শোনালেন ‘বজ্রমাণিক দিয়ে গাঁথা তোমার’, ‘আবার এসেছে আষাঢ়’, ‘অঞ্জন ঘন’ প্রভৃতি গান।

আধুনিক গান

ফণিভূষণ বিদ্যাবিনোদ মঞ্চে আধুনিক গান শোনালেন শৈবাল চৌধুরী। পরিণত কণ্ঠ। তাঁর গাওয়া বেশ কয়েকটি গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘ভোলা মন মন আমার’, ‘একখানা মেঘ ভেসে এল’, ‘এই পথে যায় চলে’ প্রভৃতি গান।

বহে নিরন্তর

গ্যালারি গোল্ডে এক সঙ্গীতানুষ্ঠানে দেবাশিস চক্রবর্তী পরিবেশন করলেন এক গুচ্ছ রবীন্দ্রসঙ্গীত। সুরের হোমানলে শীর্ষক অনুষ্ঠানে। শিল্পীর নির্বাচনে ছিল ‘বহে নিরন্তর আনন্দধারা’, ‘ছায়া ঘনাইছে বনে বনে’, ‘আজ জ্যোৎস্না রাতে’র মতো জনপ্রিয় রবীন্দ্র গানগুলি। বহুশ্রত হলেও কণ্ঠ মাধুর্যে গানগুলি আলাদা মাত্রা পায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

love light
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE