অবাক: হেলিকপ্টার চেপে আজ গুড়াপের প্রশাসনিক বৈঠকে আসার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তারই মহড়া দেখতে কাজ ফেলে হেলিপ্যাডের সামনে ভিড় স্থানীয়দের। ছবি: দীপঙ্কর দে
এক বছরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। হুগলি জুড়ে দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্যে সে ভাবে লাগাম পরল কই?
গত বছর মে মাসে তারকেশ্বরে জেলার প্রশাসনিক বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলা পুলিশকে দু’ভাগে ভাগ করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। সেইমতো হুগলি শিল্পাঞ্চলের ৯টি থানাকে নিয়ে গড়া হয় চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট। বাকি ১৫টি থানা আসে গ্রামীণ পুলিশের আওতায়। কিন্তু তার পরেও লাগাম পরেনি চুরি, ছিনতাই, খুন, মারামারি, অস্ত্র নিয়ে আস্ফালনের। আজ, মঙ্গলবার গুড়াপে কাংসারীপুর মাঠে ফের জেলার প্রশাসনিক বৈঠক করতে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। অপরাধ দমনে তিনি এ বার কড়া বার্তা দেবেন, এমনটাই আশা সাধারণ মানুষের।
পুলিশ কমিশনারেটে কাজে তিনি যে বিরক্ত, সে ইঙ্গিত মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছিলেন গত বছর নভেম্বরে, ভদ্রেশ্বরের পুরপ্রধান মনোজ উপাধ্যায় খুনের পরেই। সরিয়ে দেওয়া হয় তৎকালীন পুলিশ কমিশনার পীযূষ পাণ্ডেকে। সরানো হয় ভদ্রেশ্বর থানার তৎকালীন ওসি-কেও। এর আগে-পরেও নানা ঘটনায় প্রশ্ন ওঠে কমিশনারেটের ভূমিকা নিয়ে। কখনও একাকী বৃদ্ধা খুন হয়েছেন নিজের ফ্ল্যাটে, কখনও দিনেদুপুরে ডাকাতি হয়েছে ব্যাঙ্কে, কখনও বা ছিনতাই হয়েছে প্রকাশ্যে। জেলা সদরের কাছেই বোমাবাজি হয়েছে একাধিকবার। কিছু ঘটনার পুলিশ কিনারা করতে পেরেছে। কিছু ক্ষেত্রে আবার দুষ্কৃতীরা অধরা। একই চিত্র গ্রামীণ পুলিশ এলাকাতেও। সেখানে শাসক দলের গোষ্ঠী-সংঘর্ষেও অস্ত্রের দাপট দেখা গিয়েছে। জেলা সদরেই একের পর এক ফাঁড়ি বন্ধ হয়েছে।
জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ এবং কমিশনারেট— দু’পক্ষই বারবার পরিকাঠামোর অভাব এবং পুলিশকর্মী কম থাকার যুক্তি দেখিয়েছেন। সামনে পঞ্চায়েত ভোট। সেই ভোটে অশান্তির আশঙ্কা থাকছেই। তাই তার আগে আতঙ্কের অবসান চাইছেন জেলার সাধারণ মানুষ। এ বার তাঁরা চান, মুখ্যমন্ত্রী অন্তত পুলিশকে কড়া হওয়ার বার্তা দিন। পুলিশের যথাযথ পরিকাঠামো গড়া হোক। এ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
আজ, দুপুর ২টো নাগাদ হেলিকপ্টারে গুড়াপে আসার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। কাংসারীপুর মাঠের কাছেই তৈরি হয়েছে হেলিপ্যাড। সেখান থেকে সামান্য হেঁটেই তিনি প্রশাসনিক বৈঠকে ঢুকবেন। সিঙ্গুরের অপূর্বপুর মাঠেও একটি বিকল্প হেলিপ্যাড তৈরি করেছে প্রশাসন। পাশাপাশি, সড়কপথে মুখ্যমন্ত্রীর আসার বিকল্প ব্যবস্থাও রাখছেন জেলা পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা। প্রশাসন সূত্রের খবর, গুড়াপ থেকে এ দিনই বর্ধমানে প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিয়ে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকে বীরভূমে। বীরভূমে তাঁর রাতে থাকার কথা।
মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরকে ঘিরে হুগলির প্রশাসনিক কর্তারা রীতিমতো চাপে। তাঁরা ধরেই নিয়েছেন, সামনে পঞ্চায়েত ভোট থাকায় জেলায় চালু সরকারি প্রকল্পগুলির কাজের অগ্রগতির খুঁটিনাটি জানতে চাইবেন মুখ্যমন্ত্রী। সে ক্ষেত্রে, কোনও কাজের অগ্রগতি তাঁকে সন্তুষ্ট করতে না-পারলে রয়েছে ধমকের আশঙ্কাও।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তার খেদ, ‘‘পুলিশ থেকে প্রশাসনিক নানা স্তরেই সরকারি কর্মীর সংখ্যা হাতেগানা। কাজে গতি আসবে কী ভাবে? এটাই তো সমস্যা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy