অতিবেগুনি রশ্মির হামলার আশঙ্কা আরও বাড়ল। -ফাইল ছবি।
বায়ুমণ্ডলের যে স্তর রুখে দেয় পৃথিবীর উপর ভয়ঙ্কর ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি (আলট্রাভায়োলেট রে)-র হামলা, সেই ওজোনের চাদরে অ্যান্টার্কটিকার চেয়েও আকার, আয়তনে বড় সুবিশাল একটি ফাটল তৈরি হয়েছে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরের উপর নিয়মিত নজরদারির দায়িত্ব যাঁদের কাঁধে, সেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কোপারনিকাস অ্যাটমস্ফিয়ার মনিটারিং সার্ভিস বুধবার এই খবর দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, এই মরসুমে বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরে এত বড় মাপের ফাটল খুবই অপ্রত্যাশিত। অত্যন্ত বিপজ্জনকও মানবসভ্যতার পক্ষে। ওজোন স্তরে এত বড় মাপের ফাটল শেষ দেখা গিয়েছিল আজ থেকে ৪২ বছর আগে। ১৯৭৯ সালে।
কোপারনিকাস অ্যাটমস্ফিয়ার মনিটারিং সার্ভিসের তরফে এও জানানো হয়েছে, ওজোন স্তরের ওই ফাটল খুব দ্রুত বড় হচ্ছে। বাড়ছে আকারে, আয়তনে।
কোথায় রয়েছে ওজোনের স্তর
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নীচের স্তর (ভূপৃষ্ঠ ও তার কাছাকাছি)-কে বলা হয় ‘ট্রপোস্ফিয়ার’। তার উপরে রয়েছে আর একটি স্তর। যার নাম ‘স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার’। সেই স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের একেবারে উপরের স্তরে রয়েছে ওজোনের পুরু চাদর। নীলাভ গ্যাসের। ভূপৃষ্ঠের সাত থেকে ২৫ কিলোমিটার বা ১১ থেকে ৪০ কিলোমিটার উঁচুতে।
এই ওজোনের পুরু চাদর অতিবেগুনি রশ্মি, সৌরকণা, মহাজাগতিক রশ্মি-সহ নানা ধরনের মহাজাগতিক বিকিরণের হাত থেকে বাঁচায় যাবতীয় প্রাণ। কাজ করে ‘সানস্ক্রিন’-এর মতো।
বেরিয়ে আসছে ক্লোরিন, ব্রোমিনের মতো বিষাক্ত গ্যাস
ঘটনা হল, ফিবছরই শীতের শেষের দিকে দক্ষিণ গোলার্ধের উপর পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরে ফাটল দেখা দেয়। তার জন্য দায়ী সূর্য। সৌর বিকিরণই পৃথিবীর উপরে থাকা ওজোনের চাদর ফুটো করে দেয়। তার ফলে তৈরি হয় ক্লোরিন ও ব্রোমিনের মতো রাসায়নিক ভাবে অত্যন্ত সক্রিয় বিষাক্ত গ্যাস।
আকারে, আয়তনে অ্যান্টার্কটিকার চেয়েও বড়!
কোপারনিকাস অ্যাটমস্ফিয়ার মনিটারিং সার্ভিসের অধিকর্তা ভিনসেন্ট-হেনরি পিউচ বলেছেন, “এই মুহূর্তে নিখুঁত ভাবে বলা সম্ভব হচ্ছে না বায়ুমণ্ডলের ওজোনের চাদরের এই ফাটল আরও কতটা বড় হবে। আর সেটা আরও কতটা দ্রুত হারে হবে। তবে এ টুকু বলা যায় ১৯৭৯ সাল থেকে এই চাদরের ফাটলের আকার বৃদ্ধি নিয়ে আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে তাতে এই ফাটলকে গভীরতম বলাই যায়। এমনকি তা দীর্ঘমেয়াদিও হতে পারে। এই ফাটল আকারে, আয়তনে অ্যান্টার্কটিকার চেয়েও বড়।”
১৯৭৯-র ফাটলের চেয়ে ২৫ শতাংশ বড়!
কোপারনিকাস অ্যাটমস্ফিয়ার মনিটারিং সার্ভিসের দেওয়া পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ১৯৭৯ সালে ওজোনের চাদরে যে ফাটল দেখা গিয়েছিল এ বছর তার চেয়েও আকারে ২৫ শতাংশ বড় ওজোনের স্তরের চাদরটি।
এর আগে বিভিন্ন গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে বায়ুমণ্ডলের ওজোনের স্তরে ফাটলের অন্যতম প্রধান কারণ একটি যৌগ। ‘ক্লোরোফ্লোরোকার্বন (সিএফসি)’। এই যৌগটি বাতাসে মিশে থাকা দূষণ কণা ‘অ্যারোসল’-কে অনেক দূরে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। রেফ্রিজারেশন ব্যবস্থা চালু ও তার দ্রুত সম্প্রসারণের জন্য গত শতাব্দীর তিনের দশক থেকে যার উৎপাদন শুরু হয়েছিল বিশ্বজুড়ে। সম্প্রতি বিশ্বের ১৯৭টি দেশে এই সিএফসি-র উৎপাদন নিষিদ্ধ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy