Advertisement
২১ মে ২০২৪
Immunity

Facial Attractiveness: সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র! সংক্রমণ রুখতেও বেশি দক্ষ সৌন্দর্যের অধিকারীরা, জানাল গবেষণা

গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘প্রসিডিংস অব দ্য রয়্যাল সোসাইটি বি: বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস’-এ।

সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র! -ফাইল ছবি।

সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র! -ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৩:০৬
Share: Save:

যাঁর মুখ যত সুন্দর, তাঁর দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থাও কি ততই বেশি শক্তিশালী?

ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাক, ভাইরাসের সংক্রমণ রোখার জন্য তাদের সঙ্গে কেউ কতটা যুঝে উঠতে পারবেন বা আদৌ পারবেন কি না তার প্রমাণ মেলে কি মুখের সৌন্দর্যেই?

সাম্প্রতিক একটি গবেষণার ফলাফল এই সব প্রশ্নই উস্‌কে দিল। জানাল, যাঁর মুখ যত সুন্দর, তাঁর দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা তত শক্তিশালী। সুন্দর মুখের পুরুষ বা নারীর যে কোনও ধরনের সংক্রমণ রোখার ক্ষমতা বেশি। বিশেষ করে, প্রায় সব ধরনের ব্যাক্টেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণ। সুন্দর মুখের পুরুষ বা নারীর শরীর-স্বাস্থ্যও তুলনায় বেশি সতেজ, মজবুত। তাঁদের শরীরে রোগ বাসা বাঁধে তুলনায় কম। সংক্রমণের বিরুদ্ধে তাঁদের লড়ার ক্ষমতা অন্যদের চেয়ে বেশি।

গবেষণাপত্রটি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে প্রাকৃতিক নির্বাচন ও বিবর্তনবাদের প্রবক্তা চার্লস ডারউইনকেও। যিনি নিজেও বিশ্বাস করতে চাননি সৌন্দর্যের সঙ্গে ভাল স্বাস্থ্য বা বংশগতির কোনও সম্পর্ক রয়েছে।

গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘প্রসিডিংস অব দ্য রয়্যাল সোসাইটি বি: বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস’-এ। বৃহস্পতিবার।

সৌন্দর্য নিয়ে কৌতূহল আধুনিক (হোমো স্যাপিয়েন্স) মানুষের উদ্ভবের পর থেকেই। কেন কেউ অন্যের চেয়ে বেশি সুন্দর, কেউ ততটা সুন্দর নন, কেন কারও মুখের দিকে সব সময় তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে-- এই সব রহস্যের জট খোলা সম্ভব হয়নি এখনও। সৌন্দর্যের আদত কারণ কী, তা বিজ্ঞানীদেরও অজানা। রহস্যভেদের জন্য আধুনিক বিজ্ঞানের জন্ম হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে গবেষণা। কারণটি যদিও অধরাই থেকে গিয়েছে। ডারউইনও মানতে চাননি, কারও মুখ সুন্দর হলেই তাঁর শরীর-স্বাস্থ্য ভাল হবে, তিনি হবেন বংশগতি-সূত্রে কিছু অতিরিক্ত সুবিধার অধিকারী। বিতর্ক, নানা ধরনের ব্যাখ্যা রয়ে‌ছে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা নিয়েও। সমাজে, বিজ্ঞানীদের মধ্যেও। বিভিন্ন সংস্কৃতিতে সৌন্দর্যকে ব্যাখ্যাও করা হয়েছে নানা ভাবে। কোথাও প্রাধান্য পেয়েছে মুখের সৌন্দর্য, কোথাও বা সেই সৌন্দর্য হয়েছে দৈহিক। কোথাও আবার পুরুষ বা নারীর ব্যক্তিত্বকেই আদত সৌন্দর্য বলে মান্যতা দেওয়া হয়েছে।

এ বার আমেরিকার ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের অর্থানুকুল্যে টেক্সাসের ফোর্ট ওয়ার্থের টেক্সাস ক্রিশ্চিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণায় প্রথম প্রমাণ মিলল, মুখের সৌন্দর্যের সঙ্গে দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। গবেষণাপত্রটির শিরোনাম— ‘মোর দ্যান জাস্ট আ প্রিটি ফেস? দ্য রিলেশনশিপ বিটুইন ইমিউন ফাংশন অ্যান্ড পারসিভ্‌ড ফেসিয়াল অ্যাট্রাকটিভনেস’।

গবেষকরা ১৫৯ জন যুবক-যুবতীর মুখের ছবি নিয়ে তা অনলাইনে প্রকাশ করেছিলেন। কার মুখ কত বেশি সুন্দর মনে হচ্ছে, তা নিয়ে মতামত নিয়েছিলেন ৪৯২ জনের। অনলাইন সমীক্ষায়। তার পর ওই ১৫৯ জনের প্রত্যেকের দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা কতটা শক্তিশালী তা বুঝতে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। নানা পর্যায়ে, নানা ভাবে। জানা হয় তাঁদের প্রতিরোধ ব্যবস্থার যাবতীয় খুঁটিনাটি। খতিয়ে দেখা হয় ওই ১৫৯ জনের দেহে সব ধরনের প্রদাহের মাত্রার তারতম্য। তাঁদের শরীর-স্বাস্থ্য শৈশব, কৈশোরে আর যৌবনে পা দেওয়ার পর গড়ে কেমন থেকেছে তারও যাবতীয় রেকর্ড সংগ্রহ করেন গবেষকরা।

এই সব তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখেছেন, যাঁদের মুখ যত বেশি সুন্দর তাঁদের দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা তত শক্তিশালী। বিশেষ করে সব ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ রোখার ক্ষেত্রে।

যদিও মুখের সৌন্দর্যের সঙ্গে প্রদাহের কোনও সম্পর্ক এই গবেষণায় খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে, গবেষণার ফলাফলে এমন ইঙ্গিতই জোরালো হয়েছে যে, কেউ সুস্থ না অসুস্থ বা কিছু দিনের মধ্যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বেন কি না তা যতটা না বোঝা সম্ভব, মুখের সৌন্দর্যে তার চেয়ে অনেক বেশি ছাপ থাকে কারও প্রতিরোধ ব্যবস্থার শক্তি-সামর্থের। মুখের সৌন্দর্যেই প্রমাণ মেলে কারও প্রতিরোধ ব্যবস্থা কোনও সংক্রমণ রোখার ব্যাপারে শক্তিশালী নাকি দুর্বল।

গবেষকরা এও দেখেছেন, যে সব যুবকের মুখ বেশি সুন্দর তাঁদের দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থার ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাক-ঘাতক কোষগুলি (‘ন্যাচারাল কিলার সেল্‌স’) তত বেশি শক্তিশালী। ফলে, তাঁদের সংক্রমণ রোখার ক্ষমতা বেশি।

যে সব যুবতীর মুখ বেশি সুন্দর তাঁদের রক্তরসে (‘প্লাজমা’) অপকারী ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাকের সংখ্যা অনেক কম। থাকলেও তারা ততটা সক্রিয় হতে পারে না। তাঁদের রক্তে অ্যান্টিবডি, নানা ধরনের খনিজ পদার্থ ও গ্লুকোজের পরিমাণও থাকে একেবারে সঠিক পরিমাণে।

গবেষকদের ধারণা, মুখের সৌন্দর্যের জন্য কোনও কোনও জিনের বড় ভূমিকা থাকতে পারে। যে জিনগুলি প্রতিরোধ ব্যবস্থাকেও শক্তিশালী করে।

তবে গবেষকরা এও জানিয়েছেন, এই ফলাফল আগামী দিনে আরও গবেষণার পথ খুলে দিল সৌন্দর্যের রহস্য উন্মোচনের ক্ষেত্রে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Immunity Immune System Beauty
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE