Advertisement
১৬ মে ২০২৪
black hole

গবেষণাগারে ব্ল্যাক হোল বানালেন বিজ্ঞানীরা, ৪৭ বছর পর মিলল হকিংয়ের পূর্বাভাস

সাড়াজাগানো গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার ফিজিক্স’-এ।

এম-৮৭। প্রথম যে ব্ল্যাক হোলের ছবি তোলা সম্ভব হয়েছে। ২০১৯-এ। বি- নাসার সৌজন্যে।

এম-৮৭। প্রথম যে ব্ল্যাক হোলের ছবি তোলা সম্ভব হয়েছে। ২০১৯-এ। বি- নাসার সৌজন্যে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২১ ১৩:৪৯
Share: Save:

অসম্ভবকে সম্ভব করলেন বিজ্ঞানীরা। ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরের জন্ম দেওয়া হল গবেষণাগারে। শুধু তা-ই নয়, এই প্রথম দেখানো সম্ভব হল ৪৭ বছর আগে স্টিফেন হকিংয়ের দেওয়া পূর্বাভাস ছিল একেবারেই সঠিক। হতে পারে যৎসামান্য। কিন্তু আলো বিকিরণ করে ব্ল্যাক হোলও। যে বিকিরণের নাম ‘হকিং রেডিয়েশন’।

‘টেকনিয়ন-ইজরায়েল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’র বিজ্ঞানীদের সেই সাড়াজাগানো গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার ফিজিক্স’-এ। মার্চের প্রথম সপ্তাহে।

’৭৪-এ হকিং যা বলেছিলেন

সাবেক ধারণা ছিল, ব্ল্যাক হোলের অভিকর্ষ বল এতটাই জোরালো যে তার কাছেপিঠে থাকা কোনও বস্তুই সেই টান অগ্রাহ্য করতে পারে না। সব কিছুই গিয়ে পড়তে বাধ্য হয় ব্ল্যাক হোলের মধ্যে। তার সর্বগ্রাসী ক্ষুধা থেকে বাঁচতে পারে না আলোও। ব্ল্যাক হোলের অভিকর্ষ বলের টানকে অগ্রাহ্য করে বেরিয়ে আসতে পারে না আলোর কণা ফোটন। সেই টান এড়াতে গেলে আলোর কণা বা কোনও বস্তুকে আলোর গতির চেয়ে বেশি গতিবেগে ছুটতে হবে। যা অসম্ভবই। তাই ব্ল্যাক হোলকে দেখা যায় না। সেই ‘রাক্ষস’ ঢাকা পড়ে থাকে অতলান্ত অন্ধকারে।

১৯৭৪ সালে হকিংই প্রথম জানালেন এই ধারণায় কিছু ভুল রয়েছে। ব্ল্যাক হোলও পারে আলো বিকিরণ (‘এমিশন’) করতে। তা সে যতই যৎসামান্য হোক। জোড়ার একটি ফোটন ব্ল্যাক হোলের সর্বগ্রাসী ক্ষুধা এড়াতে পারে না। কিন্তু অন্য ফোটনটি সেই নাগপাশ থেকে বেরিয়ে এসেই জন্ম দেয় হকিং রেডিয়েশনের।

এ-ও জানালেন, সেই আলো দৃশ্যমান আলো নয় (‘ভিজিব্‌ল লাইট’)। তবে তা আলোকতরঙ্গেরই একটি অংশ। তার নাম ‘ইনফ্রারেড রে’ বা অবলোহিত রশ্মি। পরে তার নাম দেওয়া হল হকিং রেডিয়েশন।

৪৭ বছর পর…

গবেষণাগারে একটি ব্ল্যাক হোলের জন্ম দিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন ৪৭ বছর আগে ব্ল্যাক হোলের বিকিরণ নিয়ে যা যা বলেছিলেন হকিং, তার সব কিছুই নির্ভুল। তাঁরা দেখলেন, ব্ল্যাক হোলও বিকিরণ করে হকিং রেডিয়েশন। এ-ও দেখলেন হকিং যেমন বলেছিলেন, সেই বিকিরণের প্রাবল্য সময়ের সঙ্গে বাড়া-কমা করে না।

গবেষণাগারে ব্ল্যাক হোল জন্মাল কী ভাবে?

গবেষকরা ৮ হাজারটি রুবিডিয়াম পরমাণুর গ্যাসপ্রবাহকে পরম শূন্য তাপমাত্রায় (শূন্যের ২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে) ঠাণ্ডা করেছিলেন। তার পর সেই জমাট বাঁধা গ্যাসপ্রবাহকে একটি লেসার রশ্মি দিয়ে একটি জায়গায় আটকে রেখেছিলেন। তাতে পদার্থের একটি অদ্ভূতুড়ে অবস্থার জন্ম হয়েছিল। যার নাম- ‘বোস-আইনস্টাইন কনডেনসেট (বিইসি)’। এই অবস্থায় পদার্থের হাজার হাজার পরমাণু মিলেমিশে একটিমাত্র পরমাণুর মতো আচরণ করে। তার পর আর একটি লেসার রশ্মির মাধ্যমে গবেষকরা সেই রুবিডিয়াম গ্যাসকে ঝর্নার জলের মতো বইয়ে দিতে পেরেছিলেন। সেই ভাবেই জন্ম হয়েছিল ব্ল্যাক হোলের, গবেষণাগারে।

গবেষকরা অবশ্য আলোর কণা ফোটনের পরিবর্তে শব্দতরঙ্গের কণা ‘ফোনন’কে ব্যবহার করেছিলেন গবেষণাগারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Stephen Hawking black hole
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE