Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শাস্ত্রীয় মতে বোলিং কোচ ভরত, জাহিরদের নিয়ে ধোঁয়াশা

নতুন হেড কোচকে পাশে বসিয়ে মুম্বইতে সহকারীদের নাম ঘোষণা করে দিল বোর্ড। পদোন্নতি ঘটে ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার হলেন শাস্ত্রীর ডেপুটি। বোলিং কোচ অরুণ। ফিল্ডিং কোচ শ্রীধর।

যুগলবন্দি: হেড কোচ শাস্ত্রী সঙ্গে পাচ্ছেন বোলিং কোচ ভরত অরুণকেই।

যুগলবন্দি: হেড কোচ শাস্ত্রী সঙ্গে পাচ্ছেন বোলিং কোচ ভরত অরুণকেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৭ ০৫:১০
Share: Save:

সহকারী কোচেদের নির্বাচন নিয়ে শেষ পর্যন্ত হেড কোচ রবি শাস্ত্রীর কথাই মেনে নিলেন বোর্ডের পদাধিকারী এবং সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত প্রশাসকেরা। পছন্দের সহকারী কোচেদের নিয়েই আজ, বুধবার শ্রীলঙ্কা রওনা হচ্ছেন শাস্ত্রী। তাঁর সঙ্গে বোলিং কোচ হিসেবে শ্রীলঙ্কাগামী উড়ানে উঠছেন জাহির খান নন, ভারতীয় দলের সঙ্গে অতীতে কাজ করে যাওয়া প্রাক্তন মিডিয়াম পেসার ভরত অরুণ।

শুধু তা-ই নয়, রাহুল দ্রাবিড় বা জাহির খানকে অদূর ভবিষ্যতে ভারতীয় দলের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে জড়িয়ে পড়তে দেখা যাবে কি না, তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়ে গিয়েছে। যা ইঙ্গিত, দুই প্রাক্তন বিরাট কোহালিদের দলকে সাহায্য করতে এলেও স্বল্পমেয়াদী ভিত্তিতে আসতে পারেন। গোটা সিরিজ ধরে দলের সঙ্গে তাঁরা থাকবেন না। সেই দায়িত্ব থাকবে শাস্ত্রীর বেছে নেওয়া সহকারী কোচেদের ‘কোর গ্রুপ’-এর হাতে। শাস্ত্রী অবশ্য মঙ্গলবার বলেছেন, ‘‘দ্রাবিড় আর জাহিরের সঙ্গে আমার তিন চার দিন আগে কথা হয়েছে। ওদের পরামর্শ অমূ্ল্য। সব কথাবার্তা চূড়ান্ত হওয়ার পরে ওরা নিজেদের দায়িত্ব নেবে।’’

নতুন হেড কোচকে পাশে বসিয়ে মুম্বইতে সহকারীদের নাম ঘোষণা করে দিল বোর্ড। পদোন্নতি ঘটে ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার হলেন শাস্ত্রীর ডেপুটি। বোলিং কোচ অরুণ। ফিল্ডিং কোচ শ্রীধর। ২০১৪ সালে ইংল্যান্ডে ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দেওয়ার পর বিদেশিদের সরিয়ে এই তিন জনকেই নিয়ে এসেছিলেন শাস্ত্রী। এবং, প্রত্যেককেই চুক্তি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত।

আরও পড়ুন: সীমান্তের কাঁটাতার ডিঙিয়ে ভারত-পাক বিরাট সম্প্রীতি

কিন্তু বোর্ডের অন্দরমহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে এই নির্বাচন নিয়ে। প্রশ্ন ওঠে, সৌরভ-লক্ষ্মণদের কি সহকারী নির্বাচন করতে বলা হয়েছিল? নাকি তাঁরা শুধু হেড কোচ বাছার দায়িত্বই পেয়েছিলেন? বিতর্ক আরও উস্কে দেন সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্‌স (সিওএ)-এর প্রধান বিনোদ রাই। তিনি বলে দেন, ‘‘জাহির এবং দ্রাবিড়ের নাম শুধুই সুপারিশ হিসেবে ধরা হচ্ছে। ওঁদের নিয়োগ চূড়ান্ত নয়। হেড কোচ রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে সব কিছু ঠিক হবে।’’

নিশ্চিত নয় দ্রাবিড়-জাহিরের নিয়োগ।

সাধারণত এটাই প্রথা যে, হেড কোচ সহকারীদের নাম ঠিক করেন। গত বার সৌরভরা যখন অনিল কুম্বলেকে বেছে নিয়েছিলেন, তখনও বাকিদের নির্বাচনের দায়িত্ব তাঁর হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এ বারে অ্যাডভাইসরি কমিটি দ্রাবিড়, জাহিরদের বেছে নিলেও তাই প্রথম থেকেই বিভ্রান্তি ছিল যে, শেষ পর্যন্ত তাঁদের সেই সিদ্ধান্ত স্থায়ী হবে কি না। মঙ্গলবার দুপুরে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে বোর্ডের সদর দফতরে গিয়ে চার সদস্যের কমিটির সঙ্গে কথা বলেন শাস্ত্রী। দশ মিনিটের মধ্যে চূড়ান্ত হয়ে যায় সব কিছু।

ব্যাটিং কোচ বাঙ্গার বা ফিল্ডিং কোচ শ্রীধরকে নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না। বিতর্ক চলছিল অরুণকে নিয়ে। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জাহির খান ক্রিকেটার হিসেবে রেকর্ডের দিক থেকে অনেক এগিয়ে। কিন্তু শাস্ত্রীর যুক্তি হচ্ছে, কোচিং মানে এখন শুধুই আর পারমর্শ বা উপদেশ নয়। কোচিং একটা পদ্ধতি, একটা সিস্টেম। যিনি বোলিং কোচ হবেন, তাঁকে সব সময় টিমের সঙ্গে থাকতে হবে। শুধু মাঠে দাঁড়িয়ে পেসারদের ভোকাল টনিক দিলেই হবে না বা টেকনিক্যাল দিক ধরিয়ে দিলেই হবে না। বোলারদের লেংথ-লাইন বিশ্লেষণ করতে হবে, প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের নিয়ে হোমওয়ার্ক করতে হবে। আর এ সব জিনিস করতে গেলে ১০০ বা ১৫০ দিন নয়, ছেলেদের সঙ্গে থাকতে হবে ২০০ দিন ধরে। শাস্ত্রীর বক্তব্য মেনে নেন কর্তারা।

জাহিরকে নিয়ে আরও একটি সমস্যা দেখা দিয়েছে যে, তিনি এখনও আইপিএলে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের ক্রিকেটার। তাঁর সঙ্গে দিল্লির দলের মোটা টাকার চুক্তি রয়েছে। ভারতীয় দলে যোগ দিতে হলে তাঁকে আইপিএলে খেলা বন্ধ করে আসতে হবে। তা করতে গেলে বোর্ডকে মোটা অর্থ দিতে হবে যাতে জাহিরের আইপিএলে না খেলার দিকটা পুষিয়ে যায়। সেটা বোর্ড দিতে রাজি হবে কি না, সংশয় রয়েছে। জাহিরও সেই প্রতিশ্রুতি না পেলে আসবেন কি না, পরিষ্কার নয়।

তবে বোর্ডের পক্ষ থেকে দ্রুতই আলোচনায় বসা হতে পারে দ্রাবিড় এবং জাহিরের সঙ্গে। দ্রাবিড়ের স্বার্থ সঙ্ঘাত নেই। তিনি আইপিএলে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের মেন্টরের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু জাহিরের আছে এবং কোহালিদের দলের পরামর্শদাতা হতে গেলে তাঁকে ডেয়ারডেভিলসের জার্সি তুলে রাখতে হবে। সেটা করতে রাজি হলেও পাকাপাকি কোনও চুক্তি তাঁর সঙ্গে হবে কি না, সন্দেহ আছে। শাস্ত্রীর পরামর্শ মেনে তিনি হয়তো হবেন অনেক পরামর্শদাতার এক জন। সম্ভবত গুরুত্বপূর্ণ সিরিজের আগে ক্যাম্প হলে তাঁকে বা দ্রাবিড়কে ডাকা হতে পারে।

বোর্ড যে দিন তাঁদের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে শাস্ত্রীর কথা মেনে নিল, সে দিন তারকাখচিত অ্যাডভাইসরি কমিটির প্রতিক্রিয়া কী? কেউ এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি। সিএবি-তে দাঁড়িয়ে সৌরভ শুধু বলেন, ‘‘এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। আর কিছু বলব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE