মহড়া: ডিফেন্ডারদের ট্যাকল এড়িয়ে এগোচ্ছেন সনি। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
এক সপ্তাহ আগে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ডার্বির আগেও তিনি ছিলেন আশ্চর্য রকম শান্ত।
অথচ আই লিগ টেবলে সবচেয়ে নীচে থাকা দল চার্চিল ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছেন সনি নর্দে। বৃষ্টিস্নাত শীতের সকালে কলকাতা ময়দানে উত্তাপ ছড়াল তাঁর হুঙ্কারে! নেপথ্যে চার্চিল ব্রাদার্সের নাইজিরীয় ডিফেন্ডার মানডে ওসাগিয়ে!
শনিবার সকালে মোহনবাগান মাঠে সাংবাদিক বৈঠকে মানডে বলছিলেন, ‘‘সনি নর্দে ভয়ঙ্কর ফুটবলার। কিন্তু বাংলাদেশে আমি ওর সঙ্গে খেলেছি। তাই খুব ভাল করেই সনিকে চিনি। মনে হয় না ওর বিরুদ্ধে কোনও সমস্যা হবে।’’ সাংবাদিক বৈঠক সেরে প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই সনিকে আটকানোর মহড়া শুরু করে দিলেন মানডে।
কিন্তু বাংলাদেশে যাঁর বিরুদ্ধে খেলেছেন বলে দাবি করছেন তিনি, সেই সনি এ দিন চিনতেই পারলেন না মানডে-কে। কোচ সঞ্জয় সেনের পাশে বসে সবুজ-মেরুন তারকা বলে দিলেন, ‘‘আমার ঠিক মানডে-কে মনে পড়ছে না। চার বছর আগে বাংলাদেশ ছেড়েছি। অনেক দিন হয়ে গিয়েছে। ওর সঙ্গে খেলেছি কি না মনে পরছে না।’’
মানডে কিন্তু দাবি করেছেন আপনাকে আটকানোর জন্য তৈরি। মুহূর্তের মধ্যেই বদলে গেল সনির অভিব্যক্তি। চোয়াল শক্ত করে হাইতি তারকার হুঙ্কার, ‘‘কী ভাবে ও আমাকে আটকাবে? প্রিমিয়ার লিগ, ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপ থেকে ফেডারেশন কাপ— বাংলাদেশের সমস্ত টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আশা করি, রবিবার মানডে নিজের সেরাটা দেবে। আমিও সেটাই করার চেষ্টা করব।’’
২০১৩ সালে বাংলাদেশের শেখ রাসেল এফসি-তে সনি যখন খেলতেন, মানডে তখন ছিলেন শেখ জামাল ধানমন্ডিতে। ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপ ফাইনালে ধানমন্ডিকে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন সনি-রা। আজ, রবিবার ফের সনি বনাম মানডে দ্বৈরথ। বারাসত স্টেডিয়ামে শেষ হাসি কে হাসবেন, তা নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের আগ্রহ তুঙ্গে। ব্যতিক্রম সঞ্জয় সেন।
মোহনবাগান কোচের উদ্বেগের কারণ, ডার্বি জয়ের পর ফুটবলারদের আত্মতুষ্ট হয়ে পড়ার প্রবণতা। সাংবাদিক বৈঠকে সঞ্জয় খোলাখুলিই বললেন, ‘‘গত দু’বছর ধরে ডার্বি জিতে পরে ম্যাচেই হোঁচট খেয়েছি। না হারলেও ড্র করে মাঠ ছেড়েছি। এ বার তার পুনরাবৃত্তি চাই না। প্রত্যেক দিনই ফুটবলারদের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা হয়েছে। দেখা যাক, রবিবার মাঠে নেমে ওরা কতটা পারফর্ম করতে পারে।’’ তবে মোহনবাগান কোচকে স্বস্তি দিয়েছেন কিনোয়াকি ইউতা। অসুস্থতার কারণে চার্চিল ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে জাপানি মিডফিল্ডারের খেলা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। শনিবার অনুশীলনের পরে সঞ্জয় বললেন, ‘‘ইউতাকে নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। দিন দুয়েক আগে ও একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। এই আবহাওয়ায় আমরা কোনও ঝুঁকি নিইনি। রবিবার হয়তো শুরু থেকেই খেলবে।’’ চার্চিলের বিরুদ্ধে প্রথম দলে খুব বেশি পরিবর্তন যে করতে চান না সঞ্জয়, অনুশীলনেই তার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে।
তবে একা কোচ নন, আত্মতুষ্টি ভাবাচ্ছে সনিকেও। মোহনবাগান অধিনায়ক বললেন, ‘‘ডার্বির পরে পয়েন্ট নষ্ট করার অভ্যেসটা বদলাতে হবে। তা ছাড়া গত বছর আমরা অ্যাওয়ে ম্যাচেও ধাক্কা খেয়েছি। যা আমাদের খেতাবের দৌড় থেকে ছিটকে দিয়েছিল। এ বার আর সেই ভুল করলে চলবে না।’’
গত চার-পাঁচ দিন ধরে সনিও সতর্ক করে চলেছেন সতীর্থদের। সবুজ-মেরুন অধিনায়ক বললেন, ‘‘ডার্বির মতো অন্য ম্যাচগুলোও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কে গোল করল সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা একটা দল হিসেবে খেলতে চাই।’’
মোহনবাগানের এই দলগত ফুটবলকেই ভয় পাচ্ছেন চার্চিল কোচ মিকোলা শেভচেঙ্কো। ২০০০ সালে গোয়ার ক্লাবটির হয়ে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে ইউক্রেনের এই ডিফেন্ডারের। সাংবাদিক বৈঠকে শেভচেঙ্কো বললেন, ‘‘মোহনবাগান খুব শক্তিশালী দল। ওদের প্রধান অস্ত্র দলগত ফুটবল। ফলে কোনও এক জন ফুটবলারকে আটকানোর স্ট্র্যাটেজি নিয়ে নামলে চলবে না।’’
মানডে কি শুনছেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy