Advertisement
০৩ মে ২০২৪

‘পুসকাস ট্রফির জন্য পাঠানো হোক ফিফায়’

গোলটা দেখার পরে মনে হচ্ছিল, মণিপুরের বাচ্চা ছেলেটা ‘বক্সিং ডে’-তে ওর ফুটবল প্রতিভার বাক্স খুলে ভারতীয় ফুটবলকে সেরা উপহারটা দিল।

দীপেন্দু বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:১৪
Share: Save:

মঙ্গলবার বিকেলে বসিরহাটের রাস্তায় হাঁটছিলাম। ঠিক তখনই কলকাতা থেকে এক বন্ধু শিলং লাজং-এর বিরুদ্ধে নঙ্গাম্বা নাওরেম-এর ‘বিস্ময় গোল’-এর ভিডিওটা পাঠিয়ে দেখতে বলল।

গোলটা দেখার পরে মনে হচ্ছিল, মণিপুরের বাচ্চা ছেলেটা ‘বক্সিং ডে’-তে ওর ফুটবল প্রতিভার বাক্স খুলে ভারতীয় ফুটবলকে সেরা উপহারটা দিল।

লাজং এফসি-র দুই বিদেশি-সহ ছয় জনকে কাটিয়ে এমন একটা গোল নাওরেম এ দিন করল, যা করতে পারলে আমার নিজের ফুটবল জীবনই ধন্য হয়ে যেত। কোনও বিতর্কে যাচ্ছি না। আমার মতে, এটাই ভারতীয় ফুটবলে সর্বকালের সেরা গোল। ড্রিবল করতে করতে এ রকম গোল ফুটবলার জীবনে কাউকে দিতে দেখিনি এর আগে। ভারতীয় ফুটবলের সূচনা থেকে সামাদ সাহেব, চুনী স্যার, পিকে স্যার, বলরাম স্যার হয়ে সুরজিৎ সেনগুপ্ত, সুভাষ ভৌমিক, কৃশানু দে অনেক ডাকসাইটে চরিত্র এসেছেন। আমি নিজে খেলোয়াড় জীবনে দেখেছি বিজয়ন ভাই, ভাইচুং-দের। সকলের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে এই গোলটাই এক নম্বরে থাকবে।

টিএফএ-তে খেলার সময় মোহনবাগানের বিরুদ্ধে মাঝমাঠ থেকে জোরালো শটে গোল করে হাততালি পেয়েছি। কেরল পুলিশের জার্সি গায়ে বিজয়ন ভাই-কে ব্যাকভলিতে দর্শনীয় গোল করতে দেখেছি। আশির দশকে কলকাতা লিগে মোহনবাগানের হয়ে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে কৃষ্ণগোপাল চৌধুরীর গোলটাও চোখে ভাসে। মনে পড়ে যায়, আরারাতের বিরুদ্ধে কর্নার থেকে সুরজিৎ সেনগুপ্ত-র করা গোল। মনে পড়ছে, কৃশানু দে এবং ভাইচুং-এর করা কয়েকটি দর্শনীয় গোলের কথাও। কিন্তু আমার মতে ঐশ্বরিক এই গোলটা করে সবাইকে আজ পিছনে ফেলে দিয়েছে নাওরেম।

এখনও পর্যন্ত গোলটা পঞ্চাশ বারের বেশি দেখেছি। লেফট উইংয়ে বল ধরে ছ’জনকে আউটসাইড ও ইনসাইড ড্রিবল করতে করতে বক্সে ঢুকে অবলীলায় গোলটা করে এল। চেহারাটা ছোট থাকায় নাওরেমের ‘সেন্টার অব গ্র্যাভিটি’ বেশি। ফলে ভারসাম্যটা রাখতে পেরেছে ড্রিবল করার সময়। বাচ্চা ছেলেটা যা দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দিল তা হল বল কন্ট্রোল। মনে হচ্ছিল, মারাদোনা, মেসি, রোনাল্ডো, নেমার-দের পাশেই থাকবে এই গোল।

চলচ্চিত্রে অস্কার, সঙ্গীতে গ্র্যামি, সাহিত্য, বিজ্ঞানে, চিকিৎসা, অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার যেমন রয়েছে, তেমনই ফুটবলে গোটা বিশ্বে এ রকম ম্যাজিক গোল করলে ফিফা তা সম্মান জানায়, ফেরেঙ্ক পুসকাস পুরস্কার দিয়ে। আজ পর্যন্ত সেই পুরস্কারের জন্য কোনও ভারতীয় ফুটবলার মনোনয়ন পায়নি। ফেডারেশনের উচিত, নাওরেম-এর গোলটা যাতে এ বার পুসকাস পুরস্কারের মনোনয়ন পায়, তার জন্য বুধবার সকাল থেকেই ঝাঁপানো।

শুনে মনে হতে পারে, অলিভার জিহু, নেমার, রোনাল্ডো-রা যে পুরস্কারের দৌড়ে থাকে, সেখানে ভারতের এই বাচ্চা ফুটবলারের গোল কী ভাবে লড়াই করবে! না মোটেও বাড়াবাড়ি নয়। ২০১৬ সালে মালয়েশিয়ার মহম্মদ ফৈজ সুব্রি যদি এই পুরস্কার পেতে পারে, তা হলে আমাদের নাওরেম-এর গোল অন্তত প্রথম ভারতীয় হিসেবে পুসকার পুরস্কারের মনোনয়ন পেতেই পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE