Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

হেরে গেলেও সাইনা দেখালেন তিনি ফুরিয়ে যাননি

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে আমাদের দুই মেয়ে সাইনা নেহওয়াল বনাম পি ভি সিন্ধুর জমজমাট লড়াই দেখব বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। জাপানের নোজোমি ওকুহারা-র বিরুদ্ধে সাইনা হারলেও নতুন স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে দিল। আমি মনে করি, গ্লাসগোয় শনিবারই প্রত্যাবর্তনের বার্তা দিয়ে গেল সাইনা।

মধুমিতা বিস্ত
শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৭ ০৪:৪০
Share: Save:

স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণার মধ্যেই নতুন স্বপ্ন দেখাল সাইনা নেহওয়াল।

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে আমাদের দুই মেয়ে সাইনা নেহওয়াল বনাম পি ভি সিন্ধুর জমজমাট লড়াই দেখব বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল।

জাপানের নোজোমি ওকুহারা-র বিরুদ্ধে সাইনা হারলেও নতুন স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে দিল। আমি মনে করি, গ্লাসগোয় শনিবারই প্রত্যাবর্তনের বার্তা দিয়ে গেল সাইনা। ওর হাত থেকে বেশ কয়েকটা ডাউন দ্য লাইন স্ম্যাশ দেখতে পেলাম। যেটা সাইনার প্রধান অস্ত্র। তবে ওকুহারা বেশ কয়েকটা পয়েন্ট তুলে নিল ক্রসকোর্ট রিটার্নে।

শুরুটা দুর্দান্ত ভাবে করেছিল সাইনা। ২১-১২ ফলে জেতা প্রথম গেমে ওকুহারা-কে কার্যত দাঁড়াতেই দেয়নি। দ্বিতীয় গেমেও একই রকম আধিপত্য নিয়ে শুরু করেছিল সাইনা। কোনও মতে ২১-১৮ জিতেছিল ওকুহারা। তখনও ভাবিনি সাইনা ছিটকে যাবে। আগের দিনই তো দ্বিতীয় গেমে হেরেও শেষে জেতে। কিন্তু তৃতীয় গেম শুরু হতেই দেখলাম ক্লান্তির কাছে আত্মসমর্পণ করে ফেলেছে সাইনা। ক্লান্ত অবশ্য ওকাহুরা-ও হয়ে পড়েছিল। কিন্তু ও যত দ্রুত নিজেকে তরতাজা করে তুলছিল, সেটা সাইনা পারেনি। প্রত্যেকটা শটের সময় মুখ দিয়ে অদ্ভুত শব্দ করছিল সাইনা। মনে হচ্ছিল যেন আর পারছে না। এই পরিস্থিতিতে ওকাহুরা কোর্টের বিভিন্ন প্রান্ত শাটল পাঠিয়ে আরও ক্লান্ত করে তুলছিল সাইনাকে। প্রথম ও দ্বিতীয় গেমে দুর্দান্ত খেলা সাইনা এ বার সে ভাবে লড়াই করতেই পারল না। একটা ম্যাচ পয়েন্ট সাইনা ড্রপ শটে বাঁচিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তাতে লাভ হয়নি।

জেনে নিন

• ড্রপ শট: ফোরহ্যান্ড গ্রিপে র‌্যাকেট ধরে, নন-র‌্যাকেট হাত নেটের দিকে রেখে কনুই ভাঁজ হওয়া অবস্থায় নেওয়া শট। শট মারার সময় কনুই সোজা হয়ে যায়। সাধারণত কোর্টের সামনের দিকে রিটার্ন করার সময় এই শট নেওয়া হয়।

• ডাউন দ্য লাইন স্ম্যাশ: বিপক্ষের কোর্টের লাইনের একেবারে ধারে সজোরে শাটলকক আছড়ে ফেলতে এই ধরনের স্ম্যাশ করা হয়। ব্যাডমিন্টনের অন্যতম পাওয়ারফুল শট হলেও নিয়ন্ত্রণ রেখেই শট মারতে হয়। না হলে শাটলকক কোর্টের বাইরে পড়ার ঝুঁকি থাকে।

• ক্রসকোর্ট রিটার্ন: কোর্টের এক কোণ থেকে বিপক্ষের কোর্টের অপর কোণে রিটার্ন করা। র‌্যালির মাঝে কিছুটা সময় আদায় করে নিজেকে সঠিক পজিশনে আনতে এই শট।

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ সেমিফাইনালে হারের পর আমি একটা কথা বলতে চাই। মেয়েটা হাঁটুর অস্ত্রোপচারের খুব বেশি প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্ট খেলেনি। ম্যাচ ফিটনেস একেবারে আলাদা ব্যাপার। সাইনা হয়তো ঘণ্টার পর ঘণ্টা কঠোর অনুশীলন করছে। কিন্তু তার সঙ্গে ম্যাচের কোনও সম্পর্ক নেই। কোর্টের আবহটাই আলাদা। সমর্থকদের প্রত্যাশার চাপ। নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ। ট্রফি জয়ের স্বপ্ন। ফলে খোলা মনে খেলাটা সম্ভব হয় না। ওকুহারা-র বিরুদ্ধে দ্বিতীয় গেম হাতছাড়া করার পরে সাইনাকে দেখেই মনে হচ্ছিল, ও যেন মেনেই নিয়েছে যে ফাইনালে আর উঠতে পারবে না। এই মানসিক চাপ কাটিয়ে ওঠাটা যেন খেলোয়াড়ের পক্ষে কঠিন চ্যালেঞ্জ। টিম গেম হলে সতীর্থরা উজ্জীবিত করতে পারে। কিন্তু ব্যাডমিন্টন, টেনিসের মতো খেলায় যা করার নিজেকেই করতে হবে।

আরও পড়ুন:যুবির আদুর গা! ভক্তদের সঙ্গে ভাজ্জি-রোহিতরাও ট্রোল করলেন

সাইনার আরও একটা সমস্যা হচ্ছে, ও কিন্তু লিন ড্যান, তাই জু ইং-দের মতো প্রতিভা নিয়ে জন্মায়নি। সাইনাকে সমস্ত কিছুই অর্জন করতে হয়েছে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে। ফলে টানা ম্যাচ খেলেও লিন ড্যান-রা যে ভাবে ক্লান্তি দূর করে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তা সাইনার পক্ষে সম্ভব নয়। ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইটাও ওকে করতে হয় অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি। ওকুহারা-র বিরুদ্ধে সেটা করতে পারল না বলেই হেরে গেল।

ব্যর্থতার দিনেই সানিয়া বুঝিয়ে দিল ও ফুরিয়ে যায়নি। বিমল কুমারের কোচিংয়ে সঠিক পথেই এগোচ্ছে। দ্রুতই প্রথম তিন জনের মধ্যে নিজের জায়গা করে নেবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE