Advertisement
০৪ মে ২০২৪

কোচ নিয়ে প্রহসন, ফের বসবেন সৌরভরা

বৃহস্পতিবার ওভালে যখন শ্রীলঙ্কার কাছে নাটকীয় ভাবে হেরে কোহালিদের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি অভিযানই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে উঠছে, তখন মাঠের বাইরে ভারতীয় বোর্ড কর্তাদের বদান্যতায় চলছিল কোচ নিয়ে এই তামাশা।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

সুমিত ঘোষ
লন্ডন শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৭ ০৩:৫০
Share: Save:

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের ভাগ্যের মতোই ঝুলে থাকছে কোচ অনিল কুম্বলের ভবিষ্যৎ। বৃহস্পতিবার কোচ নির্বাচন নিয়ে প্রথম বৈঠক হয়েছে ক্রিকেট অ্যাডভাইসরি কমিটির। সেই বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারেননি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, ভিভিএস লক্ষ্মণ-রা। ঠিক হয়েছে, তিন-চার দিনের মধ্যে ফের বসবেন তাঁরা। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ কোনও সিদ্ধান্ত হয় কি না, সেটাই দেখার।

বৃহস্পতিবার ওভালে যখন শ্রীলঙ্কার কাছে নাটকীয় ভাবে হেরে কোহালিদের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি অভিযানই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে উঠছে, তখন মাঠের বাইরে ভারতীয় বোর্ড কর্তাদের বদান্যতায় চলছিল কোচ নিয়ে এই তামাশা। এমনই অবস্থা যে, ভারত ম্যাচ হেরে যাচ্ছে সে দিকেও খেয়াল নেই নাটক-প্রিয় কর্তাদের। তাঁরা এক-এক জনে এক-এক রকম বিবৃতি দিয়ে গেলেন। কেউ কেউ রীতিমতো ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে খুঁজছিলেন বিবৃতি দেবেন বলে। মাঠে নিজেরা যে বক্সে বসেছিলেন, সেই ফ্লোর ছেড়ে প্রেস বক্সেও ঢুকে পড়লেন কেউ কেউ।

সারা পৃথিবীর মিডিয়ার সামনে একটা কুৎসিত বিজ্ঞাপনই হয়ে থাকল যে, বিশ্ব মানের একটা টুর্নামেন্টে দলটাই সেমিফাইনালে যাবে কি না, ঠিক নেই। কন্টকিত হয়ে উঠেছে টিম কোহালির রাস্তা। আর তাঁদের বোর্ড কি না ব্যস্ত কোচ নিয়ে রাজনীতি করতে। রাজনীতি না বলে একে অন্য কিছু বলা যাচ্ছে না কারণ, কর্তারাও ভীষণ ভাবে দুই মেরুতে রয়েছেন এ নিয়ে। কার্যকরী প্রেসিডেন্ট দিল্লির সি কে খন্না এসে বিবৃতি দিয়ে গেলেন, তিনি সৌরভদের কমিটিকে অনুরোধ করেছেন, ২৬ জুনের পরে যা সিদ্ধান্ত নেওয়া নিতে।

২৫ এবং ২৬ জুন বোর্ডের বিশেষ বৈঠক আছে। সম্ভবত সেখানে কোচের স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলেই এমন বিবৃতি দেন খন্না। কিন্তু রাতেই আবার বোর্ডের পক্ষ থেকে সচিব অমিতাভ চৌধুরী বিজ্ঞপ্তি দেন যে, কোচের বিষয় নিয়ে ক্রিকেট অ্যাডভাইসরি কমিটি বৈঠক করেছে। তারা আরও কয়েক দিন চেয়েছে বোর্ডকে তাদের মতামত জানানোর জন্য।

লন্ডনে যে হোটেলে ধারাভাষ্যকাররা আছেন, তার কাছাকাছি একটি হোটেলে সৌরভদের বৈঠক হয়। সৌরভ এবং লক্ষ্মণ, দু’জনেই ওভালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে হারা ম্যাচে কমেন্ট্রি করেছেন। তার পর বৈঠক করতে যান। কিন্তু সেই বৈঠকে পাকাপোক্ত কোনও সিদ্ধান্ত তাঁরা নিতে পারেননি। কী করেই বা নেবেন? কোচ কুম্বলে বা অধিনায়ক কোহালির সঙ্গে কথা বলার মতো পরিস্থিতিও তো নেই এখন। টিমকে রবিবারের ম্যাচের জন্য মনঃসংযোগ করতে দেবেন সৌরভরা? নাকি এর মধ্যে গিয়ে কোহালিকে খোঁচাখুঁচি করবেন যে, বলো কেন কুম্বলেকে চাইছ না তুমি?

এমনিতে অ্যাডভাইসরি কমিটির মধ্যে অন্তত দু’জন সদস্য, সৌরভ এবং লক্ষ্মণ চান না কুম্বলেকে এমন ভাবে সরিয়ে দেওয়া হোক। বিশেষ করে যেখানে গত এক বছরে কোচ হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পরে কুম্বলের অধীনে পারফরম্যান্স বেশ ভাল হয়েছে। প্রশ্ন যদিও পারফরম্যান্স নিয়ে নয়, কোচ এবং অধিনায়কের বনিবনা নিয়ে। কোহালি যে কোচ কুম্বলের সঙ্গে স্বস্তিতে নেই, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তা সে যতই তিনি পাকিস্তান ম্যাচের আগে বলে যান যে, সব কিছু ঠিক আছে।

গুরুতর প্রশ্ন উঠে পড়েছে যে, কোহালি তাঁর মনের ভাব ব্যক্ত করেছিলেন কী ভাবে? বোর্ডের পক্ষ থেকে কি তাঁর কাছে কেউ জানতে চেয়েছিলেন? নাকি তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে জানাতে গিয়েছিলেন যে, কুম্বলের সঙ্গে টিমের বনিবনা হচ্ছে না। এ নিয়ে নতুন তথ্য শোনালেন ওয়াকিবহাল মহলের এক জন যে, ‘‘কোহালির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল কুম্বলেকে নিয়ে। তখন ও নিজের মনের কথা খুলে বলেছিল। তখন ও বুঝতে পারেনি যে, ওকে এগিয়ে দিয়ে বোর্ড দূর থেকে এমন তামাশা তৈরি করবে!’’

প্রশ্ন উঠছে, কুম্বলে সম্পর্কে কে জানতে চেয়েছিলেন কোহালির কাছে? বোর্ডের কোনও পদাধিকারী নাকি সুপ্রিম কোর্ট নিযু্ক্ত কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্‌সের (সিওএ) কোনও প্রতিনিধি? আরও প্রশ্ন হচ্ছে, সিওএ প্রতিনিধিরা কেন এ নিয়ে হস্তক্ষেপ করছেন না? কেন বোর্ডের কর্তাদের মর্জি অনুযায়ী কোচ নিয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পেন্ডুলামের মতো দুলতে দিচ্ছেন? তা-ও আবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি মোড়ে এসে।

উত্তর দেওয়ার লোক নেই। ভারতীয় বোর্ড কে চালাচ্ছে, সেটাই যে কেউ জানে না। তিনটে আলাদা মস্তিষ্ক রয়েছে। ক্রিকেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্‌সের দল। বোর্ড কর্তাদের দল। সেখানে চিরকালের মতো বিভাজন আর বিভাজন। সি কে খন্না এক রকম বলছেন। অমিতাভ চৌধুরী আর এক রকম বলছেন। কোষাধ্যক্ষ অনিরুদ্ধ চৌধুরী অন্য কথা বলছেন। কার কথা শোনা হবে আর কার কথা ফেলা হবে?

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার কাছে হারের পরের দিন হঠাৎ ওয়েস্ট ইন্ডিজে কে ম্যানেজার হয়ে যাবেন, তা ঘোষণা করে দিলেন বোর্ড সচিব। অথচ এখানে যিনি ম্যানেজার হিসেবে আছেন, সেই ক্রিকেট ক্লাব অব ইন্ডিয়া-র কপিল মলহোত্র ভীষণ ভাবেই কোহালিদের পছন্দের। কিন্তু ক্রিকেটারদের পছন্দ অত্যন্ত ছোট একটা বিষয় বোর্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে। ম্যানেজার পদ ভোট আদায় করার জন্য। বছরের পর বছর ধরে তা চলে আসছে। এখনও সেই প্রথায় কোনও ব্যতিক্রম হচ্ছে না। আর ম্যানেজার নিয়োগ তো অনেক দূরের কথা, কোচ বদলের বৈঠকই সেরে ফেলা হচ্ছে টুর্নামেন্ট চলার মধ্যে!

এর পরেও বিশ্বাস করতে হবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কোহালিরা কত দূর গেলেন, তা নিয়ে ভাবিত আমাদের দেশের বোর্ড কর্তারা?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE