Advertisement
০৮ মে ২০২৪

এনবিএ-কেও টেক্কা দিচ্ছে আইপিএল

টিভি এবং ডিজিটাল মিলিয়ে বিক্রি হয় মিডিয়া রাইট্‌স। সেই স্বত্ব রেকর্ড অর্থে জিতে নিল স্টার ইন্ডিয়া। পাঁচ বছরের জন্য তারা দিচ্ছে ১৬,৩৪৭.৫ কোটি টাকা (২.৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:২৫
Share: Save:

ভারতের আন্তর্জাতিক ম্যাচের চেয়েও বেশি দামি আইপিএলের লড়াই। সোমবার নতুন যে টিভি এবং ডিজিটাল স্বত্ব বিক্রি হল আইপিএলের, তা থেকেই এই চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

টিভি এবং ডিজিটাল মিলিয়ে বিক্রি হয় মিডিয়া রাইট্‌স। সেই স্বত্ব রেকর্ড অর্থে জিতে নিল স্টার ইন্ডিয়া। পাঁচ বছরের জন্য তারা দিচ্ছে ১৬,৩৪৭.৫ কোটি টাকা (২.৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। ক্রিকেটের ইতিহাসে কখনও কোনও মিডিয়া স্বত্ব এত দামে বিক্রি হয়নি। কোনও দেশেই নয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাদের সব চেয়ে দামি মনে করা হয়, সেই ভারতীয় ক্রিকেট দলের উচ্চ দরকেও অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছে আইপিএল। এমনকী, টেক্কা দিচ্ছে বিশ্বের জনপ্রিয় বাস্কেটবল লিগ এনবিএ-কেও।

হিসেব কষে দেখা যাচ্ছে, নতুন চুক্তিতে আইপিএলের প্রত্যেকটি ম্যাচের জন্য বোর্ড পাবে ৫৪ কোটি টাকারও বেশি। কোহালিদের আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য টিভি এবং ডিজিটাল স্বত্ব থেকে যা আসে, তার চেয়ে ১২ কোটি টাকা বেশি। ভারতীয় ক্রিকেটে টিভি সম্প্রচারের ইতিহাস মনে করলে এই চুক্তিকে আরওই ঐতিহাসিক মনে হবে। নব্বইয়ের দশকে দূরদর্শন খেলা দেখাত। আর তার জন্য ৫ লক্ষ টাকা করে উল্টে দিত ভারতীয় বোর্ড। কলকাতায় হিরো কাপের সময় এর বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হন জগমোহন ডালমিয়া। ঐতিহাসিক হিরো কাপ মামলা জিতে বোর্ড প্রথম টিভি স্বত্ব বিক্রি করার অনুমতি পায়। আজকের আর্থিক প্লাবনের সেই ছিল শুরু।

আরও পড়ুন: ‘গ্লাভস হাতে বীরুর মতো এক সহজাত প্রতিভা মাহি’

আরও পড়ুন: আইপিএল-এর মিডিয়া স্বত্ব এ বার স্টার ইন্ডিয়ার

কারও কারও মনে হয়েছিল, স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারি-উত্তর আইপিএলের ভাবমূর্তি জোরাল ভাবে ধাক্কা খেয়েছে। বিশ্বস্ততা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্তাদের আত্মীয়দের বিরুদ্ধে বেটিংয়ের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তার ওপর ভারতীয় বোর্ডেও ডামাডোল অব্যাহত। শীর্ষ কর্তাদের সরে যেতে হয়েছে। বোর্ডের দায়িত্বে রয়েছে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত বিশেষ প্রশাসনিক কমিটি। বোর্ডের মধ্যে চূড়ান্ত বিভাজন এবং বিভ্রান্তি এসে পড়েছে। কারও কারও তাই ধারণা ছিল, এই ডামাডোলের বাজারে আইপিএলের নতুন চুক্তি আর্থিক দিক দিয়ে জোরাল ধাক্কা খেতে পারে।

কিন্তু সমস্ত অনুমানকে মিথ্যা প্রমাণিত করে দিয়ে আইপিএল তার টি-টোয়েন্টি ধমাকার ঢংয়েই ছক্কা মেরে দিল। কয়েকটি সংখ্যা পেশ করলেই আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, আইপিএলের এই নতুন চুক্তি কেন ক্রিকেটের কৌন বনেগা ক্রোড়পতি সওদা। ২০১২ থেকে ২০১৮ সালের জন্য ভারতীয় ক্রিকেট দলের আন্তর্জাতিক মিডিয়া রাইট্‌স (টিভি এবং ডিজিটাল মিলিয়ে) কিনেছিল স্টার ইন্ডিয়া। তার জন্য তারা দিচ্ছে বছরে ৪৩ কোটি। আইপিএলের জন্য একই সংস্থা একই স্বত্বের জন্য দেবে ৫৪ কোটিরও বেশি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতীয় বোর্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ড— তিনটি দেশ মিলিয়ে টিভি স্বত্বের মূল্য ৫১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৩২৮ কোটি)। তিন দেশের মিলিত আয় কার্যত আইপিএলের সমান (৫০৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় ৩২৬ কোটি)।

যদিও কোহালিদের আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য টিভি এবং ডিজিটাল স্বত্ব নতুন করে হবে সামনের বছরেই। এবং, যে ভাবে ভারতীয় ক্রিকেটের বাজার দর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তাতে সামনের বছরেও নতুন কোনও রেকর্ড স্থাপিত হলে অবাক হওয়ার নেই। ‘‘মাঠের বাইরে যা-ই ঘটুক না কেন, ভারতে ক্রিকেট ম্যাচ দেখাটা এখনও দুর্দান্ত এক রোমাঞ্চ,’’ বলেছেন স্টার ইন্ডিয়া সিইও উদয় শঙ্কর। খুব সামান্য ব্যবধানে স্বত্ব জেতা নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘কমও হয়নি, বেশিও হয়নি। আবারও প্রমাণ হয়ে গেল ক্রিকেট এ দেশে খুবই শক্তিশালী এবং আকর্ষণীয় খেলা।’’

১৬, ৩৪৭ কোটির ঐতিহাসিক চুক্তি

মিডিয়া রাইট্‌স কী

• টিভি এবং ডিজিটাল সম্প্রচার স্বত্বকেই বলা হয় মিডিয়া রাইট্‌স। সোমবার একই দিনে দু’টি স্বত্ব বিক্রির জন্য মুম্বইয়ে নিলাম ডেকেছিল বোর্ড।

কারা পেল স্বত্ব

• গত বার টিভি স্বত্ব ছিল সোনির হাতে। এ বার টিভি এবং ডিজিটাল দু’টোই যৌথ ভাবে কিনে নিল স্টার ইন্ডিয়া। ডিজিটাল স্বত্ব কেনার দৌড়ে ফেসবুকের মতো সংস্থাও ছিল।

কত টাকায় গেল

• পাঁচ বছরের জন্য স্টার ইন্ডিয়া আইপিএলের মিডিয়া স্বত্ব কিনল ভারতীয় মুদ্রায় ১৬,৩৪৭.৫ কোটি টাকায়। গত বারের চেয়ে বার্ষিক ১৫৮ শতাংশ বৃদ্ধি। যা অবিশ্বাস্য!

এটা কি রেকর্ড

• অবশ্যই। ক্রিকেটের ইতিহাসে এর চেয়ে বেশি মূল্যে কখনও টিভি এবং ডিজিটাল স্বত্ব বিক্রি হয়নি।

কী ভাবে ঠিক হল

• টিভি এবং ডিজিটাল সম্প্রচারের জন্য আলাদা আলাদা দরপত্র জমা পড়েছিল। ডিজিটালে সর্বোচ্চ দর পেশ করেছিল ফেসবুক। কিন্তু স্টার ইন্ডিয়া দু’টো স্বত্ব মিলিয়ে যে দরপত্র পেশ করে, সেটাই ছিল সর্বোচ্চ।

বিশ্ব মানচিত্রে কোথায়

• আইপিএলের প্রত্যেক ম্যাচ থেকে বোর্ড এ বার আয় করবে ৮.৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৫৪.২৩ কোটি টাকা)। যা এনবিএ (প্রত্যেক ম্যাচে আয় ১.৯৯ মিলিয়ন ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় ১২.৭৫ কোটি) এবং মেজর লিগ বেসবলের (প্রত্যেক ম্যাচে আয় ০.৬৩ মিলিয়ন ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় ৪.০৫ কোটি) চেয়ে বেশি। এনএফএল (প্রত্যেক ম্যাচে আয় ২২.৪৭ মিলিয়ন ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় ১৪৩.০৯ কোটি) এবং ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ (প্রত্যেক ম্যাচে আয় ১৩.১৫ মিলিয়ন ডলার, ভারতীয় মুদ্রায় ৮৪.১৮ কোটি) এখনও এগিয়ে। তবে বিদেশি লিগগুলির ক্ষেত্রে শুধু টিভি স্বত্বই ধরা হয়েছে কারণ আইপিএলের মতো টিভি ও ডিজিটাল স্বত্ব সম্মিলিত ভাবে বিক্রি করার রীতি বাকিদের নেই।

ক্রিকেট মানচিত্রে কোথায়

• এক কথায় আকাশছোঁয়া এবং বিশ্ব ক্রিকেটের বিচারে আশেপাশেও কেউ নেই। ভারতীয় ক্রিকেট দলেরই আন্তর্জাতিক মিডিয়া স্বত্ব থেকে প্রায় তিন গুণ বেশি এই মূল্য। ভারতীয় ক্রিকেট দলের স্বত্ব থেকে যেখানে প্রত্যেক বছরে আয় ১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, সেখানে আইপিএলের নতুন চুক্তি থেকে বছরে আসবে ৫০৮ মিলিয়ন মার্কিল ডলার। অন্যান্য দেশের মধ্যে ইংল্যান্ড বোর্ড তাদের মিডিয়া স্বত্ব থেকে বছরে পায় ২৮৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়া স্বত্ব থেকে আয় বছরে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

ক্রিকেটের অন্য লিগের পাশে

• কোনও তুলনাই চলে না। আইপিএলের ঢংয়ে প্রত্যেক দেশই এখন টি-টোয়েন্টি লিগ চালু করেছে। কিন্তু বাকিদের মধ্যে সব চেয়ে সফল অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ লিগ। তাদের মিডিয়া স্বত্ব থেকে আয় বছরে ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আইপিএল আয় করবে বছরে ৫২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

দশ বছর হয়ে যাওয়ায় এ বার নতুন করে সব চুক্তি হচ্ছে আইপিএলের। যাঁর হাত দিয়ে এই যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই ললিত মোদী নির্বাসিত থাকলেও টুইটারে ভারতীয় ক্রিকেটের জয়গান গেয়ে লেখেন, ‘দেখাই যাচ্ছে আইপিএল কত শক্তিশালী একটা ব্র্যান্ড।’ ক্রিকেটে অন্যান্য দেশেও এখন চালু হয়েছে টি-টোয়েন্টি লিগ। অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে বিগ ব্যাশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। দুবাইয়ে পাকিস্তান চালু শুরু করেছে প্রিমিয়ার লিগ। দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ডও চালু করছে। কিন্তু আইপিএলের ধারেকাছেও কেউ নেই। আইপিএল যেখানে বছরে ৫০৮ মিলিয়ন ডলার আয় করবে মিডিয়া স্বত্ব থেকে, বিগ ব্যাশ পাচ্ছে বছরে মাত্র ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

আগের বার আইপিএলের টিভি স্বত্ব দশ বছরের জন্য কিনেছিল সোনি। তারা এ বারেও লড়াইতে থাকলেও হেরে যায়। গত বার সোনি যা দিয়েছিল, তার তুলনায় ১৫৮ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে মিডিয়া রাইট্‌সের মূল্যতে। ডিজিটাল বিভাগে মূলত দৌড়ে ছিল ফেসবুক, রিলায়্যান্স জিও এবং এয়ারটেল। প্রত্যেকেই ৩০০০ কোটি টাকার উপরে দরপত্র জমা দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত দু’টি স্বত্ব মিলিয়ে স্টারের টাকার অঙ্ক সব চেয়ে বেশি থাকায় তারাই নির্বাচিত হয়।

শুধু মাঠের মধ্যেই ক্রিকেট খেলাটার পরিবর্তন হচ্ছে না, পাল্টে যাচ্ছে ক্রিকেট বাণিজ্যের ছবিও!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE