Advertisement
১৯ মে ২০২৪
২৫ ওভারের আগেই শেষ ইনিংস, দিল্লির কাছে আত্মসমর্পণ মনোজদের

লজ্জার হারে শেষ ফাইনালের স্বপ্ন

ডিন্ডা আউট হয়ে বাংলার রঞ্জি অভিযান এ বারের মতো শেষ হতেই হাততালি দিতে দিতে মাঠে ঢুকে পড়লেন তিনি। ম্যাচে সাত উইকেট পাওয়া নভোদীপ সাইনি-কে শুভেচ্ছা জানিয়েই ড্রেসিংরুমে ফিরে গেলেন গম্ভীর।

তখন জয়ের পথে দিল্লি। ছবি: বিসিসিআই।

তখন জয়ের পথে দিল্লি। ছবি: বিসিসিআই।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
পুণে শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৪:৩৪
Share: Save:

সারা দিন তাঁকে দেখা যায়নি স্টেডিয়ামে। শোনা যাচ্ছিল, দিল্লি ড্রেসিংরুমে বসে নিশ্চিন্তে ম্যাচ এবং বিগ ব্যাশ-এ নজর রাখছেন তিনি। একদম শেষ বেলায় অশোক ডিন্ডা যখন দিল্লির কুলবন্ত খেজরোলিয়া-র বলে আউট হয়ে ফিরছেন, তার ঠিক মিনিট দু’য়েক আগে আবিষ্কার করা গেল তাঁকে। কেকেআর কর্তা ভেঙ্কি মাইসোরের সঙ্গে মাঠে ঢুকলেন গৌতম গম্ভীর।

ডিন্ডা আউট হয়ে বাংলার রঞ্জি অভিযান এ বারের মতো শেষ হতেই হাততালি দিতে দিতে মাঠে ঢুকে পড়লেন তিনি। ম্যাচে সাত উইকেট পাওয়া নভোদীপ সাইনি-কে শুভেচ্ছা জানিয়েই ড্রেসিংরুমে ফিরে গেলেন গম্ভীর। তার পরেই এত দিন চুপ থাকার পর প্রথম টিপ্পনিটি কাটলেন দিল্লির কোচ কে পি ভাস্কর। দিল্লি কোচ চেনা সাংবাদিকদের কাছে জানতে চাইলেন, ‘‘মনোজ তিওয়ারি কী সব যেন মনে করিয়ে দেবে বলেছিল! ওই কথাটাই তাতিয়ে দিয়েছিল আমাদের ছেলেদের।’’ একটু থেমে ফের ভাস্কর বলতে থাকেন, ‘‘ও বোধহয় ভুলে গিয়েছিল টিমটার নাম দিল্লি। যে দলে গৌতম গম্ভীর, ঋষভ পন্থ, নভদীপ সাইনি-রা খেলে। এত সহজে দিল্লিকে হারানো যায় না।’’

হোটেলে ফেরার সময় দিল্লি অধিনায়ক ঋষভ পন্থও বলে যান, ‘‘আমরা মুখে জবাব না দিয়ে মাঠেই জবাব দিয়ে গেলাম।’’

খেলা শেষ হওয়ার আড়াই ঘণ্টা পরে স্টেডিয়াম ছাড়ার পরে যা শুনে বেদনার হাসি খেলে যায় মনোজ তিওয়ারির মুখে। বলেন, ‘‘ওরা আজ ভাল খেলেছে। দিনটা আজ ওদের ছিল।’’

প্রথম ইনিংসে উইকেট ছুড়ে দিয়ে এসেছিলেন মনোজ তিওয়ারি, সুদীপ চট্টোপাধ্যায়রা। দ্বিতীয় ইনিংসে আর উইকেট ছুড়তে হয়নি তাঁদের। বদলে দিল্লির পেসারদের সামনে কুঁকড়ে গিয়ে পুণেতে অসহায় আত্মসমর্পণ করল বাংলা। ফলে রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে খেলার স্বপ্ন এ বারের মতো চুরমার। দিল্লির কাছে ইনিংস ও ২৬ রানে হেরে বাড়ি ফিরছে বাংলা ক্রিকেট দল।

গত বারের চ্যাম্পিয়ন গুজরাতকে হারিয়ে সেমিফাইনালে যাওয়ার পরেই আত্মবিশ্বাসের এভারেস্টে চড়ে বসেছিল বাংলা। দলের সঙ্গে জড়িত কেউ কেউ ভেবেই বসেছিলেন, দিল্লিকে হারিয়ে খুব সহজেই ফাইনাল চলে যাওয়া যাবে। সেখান থেকে দিল্লির তিন পেসার বিকাশ টোকাস (২-৬১), কুলবন্ত খেজরোলিয়া (৬-১০৪) এবং নভদীপ সাইনি-র ধাক্কায় একদম মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে লজ্জার হার বঙ্গ ক্রিকেটের।

দিল্লি কোচ ভাস্কর হোটেলে ফেরার আগে বলছিলেন, ‘‘প্রথম দিন পিচটা স্যাঁতসেঁতে ছিল। কিন্তু তার পরেও টসে জিতে বাংলা দল কেন ব্যাটিং করতে গিয়েছিল, তা ভাবলেই অবাক লাগছে।’’

সেমিফাইনালের আগে বলা হচ্ছিল ম্যাচটা বাংলার বোলারদের সঙ্গে নাকি দিল্লির ব্যাটসম্যানদের। দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার আগে বিশ্রাম থেকে তুলে আনা হয়েছিল মহম্মদ শামিকে। সেই শামি সোমবার নিজের ছন্দে না থাকলেও, এ দিন আগুনে বল করে বাংলাকে সকালে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু যে বাংলার ব্যাটিং নিয়ে এত হইচই হচ্ছিল গত কয়েক দিন ধরে, তারাই ডুবিয়ে দিল দুই ইনিংসে।

এ দিন সুদীপ, মনোজ, অভিমন্যু ঈশ্বরনদের ব্যাট করতে দেখে এক সময় মনে হচ্ছিল রঞ্জি সেমিফাইনাল কি পাঁচ দিন থেকে চার দিন করে দেওয়া হয়েছে নাকি? বাংলা দল জানে তো ম্যাচটা পাঁচ দিনের? তা হলে এই হারাকিরি করার দরকার কী? কেন এই ‘আত্মহত্যা’? ম্যাচের আগে দু’দিন ধরে নেটে দাঁড়িয়ে থেকে ভিভিএস লক্ষ্মণ কী শিখিয়ে দিয়ে গেলেন সুদীপ, ঋত্বিক-দের? কুলবন্ত, নভদীপ-দের ১৪০ কিমি গতির বল খেলতে গিয়েই এই অবস্থা হয়, তা হলে গত কয়েক বছর ধরে ঢাকঢোল পিটিয়ে ‘ভিশন টোয়েন্টি-টোয়েন্টি’ করে কী লাভ হচ্ছে?

যাঁরা উত্তর দিতে পারতেন এই প্রশ্নের, সিএবি-র সেই সচিব অভিষেক ডালমিয়া, প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়-রা সোমবার দ্বিতীয় দিনে পেপ টক দিয়েই উড়ে গিয়েছিলেন কলকাতায়।

এ দিন সকালে শামি, ডিন্ডা-দের দাপটে দশ রানের মধ্যে দুই উইকেট হারিয়ে দ্রুত ২৮১-৫ হয়ে যায় দিল্লি। এর পরেই প্রতিরোধ দিল্লির হিম্মত সাইনির। শামির আগুনে বোলিংয়ের সামনে দাঁড়িয়ে করে গেলেন ৬০ রান। অভিষেক রামন এই সময়ই ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে দাঁড়িয়ে ফেললেন বিকাশ টোকাসের ক্যাচ। হিম্মত ও বিকাশ মিলে জোড়েন পঞ্চাশ রান।

কিন্তু লাঞ্চের পরে শামির আগুনে বোলিং-এর সামনে দিল্লির ইনিংস শেষ হয় ৩৯৮ রানে। প্রথম ইনিংসে ১১২ রানে এগিয়ে যায় দিল্লি।

আশা করা গিয়েছিল, শামির লড়াই ফের ম্যাচে ফিরিয়ে আনল বাংলাকে। কিন্তু সেখান থেকে ব্যাটিং হারাকিরি। ২৪.৪ ওভারের মধ্যেই তিন ঘণ্টায় শেষ বাংলার ব্যাটসম্যানদের বিক্রম।

বাংলার কোচ সাইরাজ বাহুতুলে ম্যাচ শেষে মিনমিন করে বলে গেলেন, ‘‘ওদের পেসাররা ভাল খেলেছে। আমরা পারিনি। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতা বলবেন না। আমরা গোটা মরসুম ভাল খেলেছি।’’

অধিনায়ক মনোজের ব্যাখ্যা, ‘‘দিল্লি পেসারদের সামনে কুঁকড়ে গিয়েছিলাম আমরা। মানসিক যুদ্ধে হেরে গিয়েছিলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ranji Trophy Semifinal Bengal Delhi Cricket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE