ভারতীয় সময় অনুযায়ী ৫ জুলাই ২০১৫— মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ছেন লিওনেল মেসি। কোপা আমেরিকা ফাইনালে হেরে ফের দেশের জার্সিতে শূন্য হাতেই ফিরতে হল এলএম টেন-কে। চিলির কাছে পেনাল্টিতে হেরে কোপা খরা কাটানোর স্বপ্নও ম্লান আর্জেন্তিনীয় ফুটবল রাজপুত্রের।
সেই বিপর্যয়ের রেশ এখনও পুরোপুরি কাটেনি। কম কটাক্ষ শুনতে হয়নি মেসিকে। এবং এক বছরের মধ্যেই আবার সেই অপয়া প্রতিদ্বন্দ্বী এসে হাজির মেসির সামনে। সোমবার শতবর্ষের কোপার গ্রুপ বিন্যাসের পরে সবচেয়ে আকর্ষণ যে ম্যাচ নিয়ে তা হল গত ফাইনালের রি-ম্যাচ — আর্জেন্তিনা বনাম চিলি। তবে আর্জেন্তিনা কোচ জেরার্দো মার্টিনো এখন থেকেই দলকে সতর্ক করে দিচ্ছেন অতিরিক্ত মেসি-ভরসা আবার পতনের কারণ হতে পারে। ‘‘লিও সব সময় বাঁচাতে পারবে না দলকে। দলকেও ওকে সাহায্য করতে হবে,’’ বলছেন মার্টিনো। চিলি প্রসঙ্গে মার্টিনো যোগ করেন, ‘‘আমি চিলির সঙ্গে খেলতে মুখিয়ে আছি। কঠিন প্রতিপক্ষ ওরা। শুধু গত বার ফাইনালের মতো ফল চাই না।’’
টুর্নামেন্টের শতবর্ষ বলে এই প্রথম লাতিন আমেরিকার বাইরে হচ্ছে কোপা। ৩-২৬ জুন যুক্তরাষ্ট্রে হতে চলা কোপায় লাতিন আমেরিকার দশ দেশ ছাড়াও কনকাকাফ-এর ছ’টা দেশ মিলিয়ে মোট ১৬ দলের মেগা টুর্নামেন্ট। চিলি ছাড়া আর্জেন্তিনার গ্রুপে রয়েছে পানামা আর বলিভিয়া।
মেসির কাছে বদলার সুযোগ থাকলে আবার নেইমারের জন্য কোপার গ্রুপে সহজ রাস্তা। দুঙ্গার ব্রাজিল শেষ কোপা জিতেছিল ২০০৭-এ। তার পর থেকে বড় টুর্নামেন্ট মানেই হয়ে উঠেছে ব্রাজিলের বিশ্রী সব বিদায়ের নজির। গত বছরও প্যারাগুয়ের বিরুদ্ধে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল ব্রাজিলকে। এ বার অবশ্য বড় কোনও অঘটন না ঘটলে হয়তো আরামেই গ্রুপ পার করবে ব্রাজিল। দুঙ্গার দলের প্রতিপক্ষ ইকুয়েডর, পেরু এবং হাইতি।
যে হাইতিতে রয়েছেন মোহনবাগানের পোস্টার বয় সনি নর্ডি। যাঁর দেশ ত্রিনিদাদ ও টোবাগোকে হারিয়ে যোগ্যতা অর্জন করেছে কোপায়। আর সেই ম্যাচে কোপা শুরু হতে কিছু মাস বাকি থাকলেও দুঙ্গা এখনও জানেন না নেইমারকে তিনি কোপায় খেলাতে পারবেন কি না। প্রতি বছরই দলের মহাতারকাদের নিয়ে ক্লাব বনাম দেশের দ্বন্দ্ব চলতেই থাকে। অলিম্পিক্সে নেইমারের খেলা নিয়ে ইতিমধ্যেই দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা। কোপার আগেও নেইমারকে ক্লাব ছাড়বে কি না সেটা নিয়েও জল্পনা তুঙ্গে। ‘‘নেইমারকে পাব কি না সে ব্যাপারে বার্সেলোনা কোচ লুইস এনরিকের সঙ্গে কোনও কথা হয়নি। আমাদের আলোচনা করতে হবে যাতে কোনও সমাধানে পৌছানো যায়,’’ বলছেন দুঙ্গা। তিনটে দলের মধ্যে ইকুয়েডরকেই সবচেয়ে কঠিন বলছেন দুঙ্গা। ‘‘ইকুয়েডরকে নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ওরা খুব আধুনিক ফুটবল খেলে যা শক্তি, গতির মিশেল,’’ বলছেন তিনি।
এমএসএন ত্রিফলার তৃতীয় অঙ্গ লুইস সুয়ারেজের আবার আন্তর্জাতিক নির্বাসন কাটিয়ে ফের দেশের জার্সিতে দাপট দেখানোর লড়াই। কোনও বড় টুর্নামেন্টে এল পিস্তলেরোর প্রত্যাবর্তনে তাই উরুগুয়ে অন্যতম ফেভারিট হয়ে উঠেছে। ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলে এখন সেরা ফরোয়ার্ড ধরা হচ্ছে সুয়ারেজকে। যাঁকে আটকানোর দায়িত্ব থাকছে মেক্সিকো, ভেনেজুয়েলা ও জামাইকার উপরে।
কোপায় মারণগ্রুপ সামলানোর দায়িত্ব অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের কোচ য়ুরগেন ক্লিন্সম্যানের উপর। নক-আউটে উঠতে হলে সংগঠক দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে সামলাতে হবে লাতিন আমেরিকার দুই হেভিওয়েট প্যারাগুয়ে, কলম্বিয়ার চ্যালেঞ্জ। সঙ্গে আবার গ্রুপে রয়েছে কোস্টারিকাও। যারা কালো-ঘোড়া হিসেবে যে কোনও দলকে সমস্যায় ফেলতেই পারে। বদলে দিতে পারে গ্রুপের ছবি। তাতেও অবশ্য আত্মবিশ্বাসী ক্লিন্সম্যান। যাঁর মতে, ব্রাজিলের সেই বিশ্বকাপেও তো যুক্তরাষ্ট্রের সামনে একই চ্যালেঞ্জ ছিল। ‘‘হয়তো খাতায়-কলমে আরও সহজ গ্রুপ পছন্দ করতাম। কিন্তু আমরা তৈরি। সব সময় লাতিন আমেরিকার শক্তিশালী দলগুলোর বিরুদ্ধে দেখে নিতে হয় কতটা তৈরি আমরা। প্রতিটা ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। ’৯৪ বিশ্বকাপের পরে কোপা একটা বড় টুর্নামেন্ট হতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্রে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy