নায়ক: ডিকা (১০ নম্বর)-কে নিয়ে সতীর্থদের উল্লাস। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
মহমেডান স্পোর্টিং ৫
পিয়ারলেস ২
বিরতির সময় এক গোলে পিছিয়ে মহমেডান টিম যখন মাঠে নামছে, তখন দেখা গেল মহমেডান কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য তাঁর দশ নম্বর দিপান্ডা ডিকার কানে-কানে কিছু বললেন?
তার পরেই পিয়ারলেসকে উড়িয়ে মহমেডানের ম্যাচে ফেরা। তাও আবার প্রথম পঁয়তাল্লিশ মিনিট এক গোলে পিছিয়ে থেকে।
ম্যাচ শেষে এ দিনের হ্যাটট্রিককারী দিপান্ডা ডিকার কাছে জানতে চাওয়া হল—কোচ কী বলছিলেন? শুনে প্রথমেই মুখ আলো করে হেসে উঠলেন মহমেডানের ক্যামেরুনিয়ান স্ট্রাইকার। রসিকতা করে বললেন, ‘‘কোচ বলছিলেন, ডিকা তুমি কি তোমার স্কোরিং বুট শিলং-এ ফেলে এসেছো?’’ তার পর সিরিয়স মেজাজে হ্যাটট্রিক করা স্ট্রাইকার বলে দেন, ‘‘আসলে শুরুতে আমরা লং বল খেলছিলাম। যেটা ওদের রক্ষণে গিয়ে হারিয়ে যাচ্ছিল। বিরতির পর ট্যাকটিক্স বদলাতেই ম্যাচে ফিরলাম আমরা। সেটাই আলোচনা হচ্ছিল।’’
প্রথম গোল করলেন, বিপক্ষ গোলকিপারের ভুলে বল পেয়ে। দ্বিতীয় গোল দীপেন্দু দোয়ারির থেকে বল পেয়ে চকিতে প্লেসিং করে। তৃতীয় গোল হেডে।
রজার মিল্লার দেশের স্ট্রাইকার হ্যাটট্রিকের পর কর্নার ফ্ল্যাগের কাছে গিয়ে প্রথমে শুরু করে দিলেন নাচ। তার পরে প্রেস বক্সের দিকে দু’হাত দিয়ে হৃদপিন্ড দেখালেন। ওই হৃদয়-সঙ্কেত কার জন্য? ডিকা বলে দেন, ‘‘ওখানেই তো বসেছিল আমার বান্ধবী জর্জেট। কলকাতায় আমার প্রথম হ্যাটট্রিকটা ওঁকেই উৎসর্গ করে দিলাম। হার্ট সাইন ওর জন্য।’’
বান্ধবীকে ডিকা হৃদপিন্ড দেখাচ্ছেন। মহমেডান সমর্থকরা ডিকার নামই হৃদয়ে লিখে বাড়ি ফিরলেন। ইস্টবেঙ্গলে সুহেইর, সুরাবুদ্দিন। মোহনবাগানে কামো। সাদা-কালো শিবিরের সমর্থকরা এতদিন দুই প্রধানের হ্যাটট্রিক দেখছিলেন। এ বার তাঁদের পালা। আর সেই সমর্থকদের হয়ে ডিকা নিজেও বলছেন, ‘‘প্রথম ম্যাচের পর গোল পাইনি। আজ সমর্থকরা নিশ্চয়ই বড় গলা করে বলবেন আমাদেরও ডিকা আছে।’’
পিয়ারলেসের বিরুদ্ধে শনিবার ম্যাচের শুরুটা ভাল হয়নি মহমেডানের। মাঝমাঠে একাধিক মিসপাস, লং বলের ছড়াছড়ি। এই সুযোগেই প্রথমার্ধের মাঝামাঝি দূরপাল্লার শটে গোল পিয়ারলেসের সুখবিন্দর সিংহের। বড় দল ফেরত সুখবিন্দর যে বিপক্ষের মিডল থার্ড থেকে এ রকম দুরপাল্লার শটে গোল করেন তা জানা সত্ত্বেও তীর্থঙ্কররা কেন মাঝমাঠে তাঁর জন্য এত ফাঁকা জায়গা রাখলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
ডিকা হ্যাটট্রিক করলেও এ দিন ম্যাচে সাদা-কালো শিবিরকে ফেরানোর কারিগর দীপেন্দু দোয়ারি। দ্বিতীয়ার্ধে উইং ধরে তাঁর দৌড়গুলিই হাফ ধরিয়ে দিয়েছিল ফুজা তোপের পিয়ারলেসের। যা সামলাত পারেনি তাঁর দলের রক্ষণ। ফলে রহিম নবির একার মরিয়া চেষ্টা বিফলেই গিয়েছে।
এ দিন দীপেন্দুর বাড়ানো বল থেকেই সমতা ফেরান জিতেন মুর্মু, ডিকারা। শেষ বেলায় নিজেও গোল করে গেলেন দীপেন্দু। হলুদ কার্ড না দেখলে এ দিন ম্যাচ সেরার পুরস্কার তাঁর পকেটেই ঢুকত। দীপেন্দু দলকে চিন্তামুক্ত করতেই তাঁকে তুলে নেমে গেলেন আর এক দীপেন্দু। তিনি অবশ্য বিশ্বাস। কলকাতা লিগের বিধায়ক-ফুটবলার।
ম্যাচ শেষে মহমেডান কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বলে গেলেন, ‘‘দু’টো গোল খেয়েছি নিজেদের দোষে। সেগুলো দ্রুত শুধরে নিতে হবে।’’
মহমেডান স্পোর্টিং : মহম্মদ রশিদ (শঙ্কর রায়), কামরান ফারুক, রানা ঘরামি, সোমতুচুকু রিচার্ড, অঙ্কিত মুখোপাধ্যায়, দীপেন্দু দোয়ারি (দীপেন্দু বিশ্বাস), কালু ওগবা, তীর্থঙ্কর সরকার, শেখ ফৈয়াজ, জিতেন মুর্মু, দিপান্ডা ডিকা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy