Advertisement
০৩ মে ২০২৪

ধারে-ভারে এগিয়ে কিন্তু ডার্বি জেতা যায় না

ডার্বি নিয়ে কলম ধরতে গিয়ে প্রথমেই দু’টো কথা মাথায় আসছে। এক, এই ম্যাচের কোনও ভবিষ্যদ্বাণী হয় না। দুই, প্রত্যাশার চাপ এড়িয়ে যারা পারফরম্যান্স করতে পারে, ম্যাচটা পকেটে পুরে নেয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারাই।

যুদ্ধের আগে সৌজন্য। ডার্বির আগের দিন দুই কোচ। শনিবার। -বিশ্বরূপ বসাক

যুদ্ধের আগে সৌজন্য। ডার্বির আগের দিন দুই কোচ। শনিবার। -বিশ্বরূপ বসাক

চুনী গোস্বামী
শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪৫
Share: Save:

ডার্বি নিয়ে কলম ধরতে গিয়ে প্রথমেই দু’টো কথা মাথায় আসছে।

এক, এই ম্যাচের কোনও ভবিষ্যদ্বাণী হয় না।

দুই, প্রত্যাশার চাপ এড়িয়ে যারা পারফরম্যান্স করতে পারে, ম্যাচটা পকেটে পুরে নেয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারাই।

ডার্বি হল একই শহরের দুই সমমানের, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলের যুদ্ধ। গোটা বিশ্বের ফুটবলে এ একটা বড় আকর্ষণ। ব্রাজিলে ফ্ল্যামেঙ্গো-ফ্লুমিনেন্স, আর্জেন্তিনায় বোকা জুনিয়র্স-রিভার প্লেট, ইতালিতে ইন্টার মিলান-এসি মিলান, ইংল্যান্ডে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড-ম্যাঞ্চেস্টার সিটি আর আমার শহর কলকাতায় মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গল।

গত সাত দশক ধরে সবুজ-মেরুন আর লাল-হলুদের দ্বৈরথের যে অমোঘ আকর্ষণ প্রবল ভাবে উপভোগ করে আসছি। মাঠের মধ্যে যেমন ফুটবলার হিসেবে ডার্বির এই উত্তাপ টের পেয়েছি। তেমনই উপভোগ করেছি মাঠের বাইরে দর্শক হিসেবেও। রসগোল্লা, মিষ্টি দই, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, হাওড়া ব্রিজ, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মতো এই ম্যাচটাও বঙ্গজীবনের অঙ্গ।

স্বাধীনতার পর এ দেশে ডার্বি মানেই স্মৃতিকোঠায় স্মরণীয় সব ফুটবল চরিত্রের নাম ভেসে ওঠা। সালে-আমেদ-ভেঙ্কটেশ-আপ্পা রাও বনাম মহাবীর-মান্না-টি আও-অনিল দে, জার্নেল বনাম অরুণ ঘোষ, হাসান-রামবাহাদুর বনাম কেম্পিয়া-নার্সিয়া-অরুময়। খেলোয়াড় জীবনে এই ম্যাচটায় সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে আমার আর লাল-হলুদ জার্সি গায়ে বলরামের গোল করে জেতানোর জন্য একটা স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা ছিল।

যে নামগুলো লিখলাম এরা সবই ভারতীয়। যারা একক দক্ষতায় অতীতে ম্যাচের রং বদলে দিয়েছেন। কিন্তু এখন ডার্বিতে ক্রাউড পুলার ভারতীয় খুঁজতে হয় অনেক কষ্ট করে। যেমন রবিবার বিকেলে আমাদের জেজের সঙ্গে লড়াই ইস্টবেঙ্গলের রবিন সিংহের। গত চার দশকে দেশের ফুটবলের মান এমন জায়গায় গিয়েছে যে ডার্বি ম্যাচের আকর্ষণের কেন্দ্রে স্বদেশিদের সরিয়ে বেড়েছে বিদেশিদের দাপাদাপি। চিমা বনাম ওমোলো, ব্যারেটো বনাম জ্যাকসন, ওকোরো বনাম ডু— এ রকম চরিত্র বিগত কয়েক বছরে প্রচুর দেখা গিয়েছে। শিলিগুড়িতে যেমন রবিবার ইস্টবেঙ্গলের ওয়েডসন-প্লাজা-বুকেনিয়াদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়বে বাগানের সনি-কাতসুমি-ডাফি।

ডার্বি নিয়ে পুরনো দিনের কথা মনে করলে একটা আত্মশ্লাঘা অনুভব করি। কারণ, ছ’য়ের দশকে আমি যখন মোহনবাগান জার্সি গায়ে ডার্বি ম্যাচ খেলেছি তখন আমার ক্লাবই জিতেছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে।

আগেই বলেছি, ভাল টিম হলেই এই ম্যাচ জেতে না। যেমনটা হয়েছিল সাতষট্টির কলকাতা লিগে। আমি তখন খেলা ছাড়ার দিকে। লিগে আমরা যদি ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে দিতাম তা হলে চ্যাম্পিয়ন হত মহমেডান। ভাগ্যের খেলা এমনই যে সে বারের দুরন্ত ইস্টবেঙ্গল হেরে গেল আমার গোলেই। বাড়ি ফিরে দেখি লিগ জয়ের আনন্দে মহমেডান সমর্থকরা বিরিয়ানি-ফিরনি আর ঝুড়ি ঝুড়ি ফল পাঠিয়ে দিয়েছেন। সে এক মজার মুহূর্ত। সতেরো বছর আগে এ রকমই একটা জাতীয় লিগের ডার্বিতে ধারে-ভারে এগিয়ে থাকা ইস্টবেঙ্গলকে মোহনবাগান হারিয়েছিল জেমস সিংহের গোলে।

তবে এ রকম ঘটনা মোহনবাগানের ক্ষেত্রেও ঘটেছে বহু বার। বলরামের গোলে আমাদের সময় ফেভারিট থেকেও হেরে গিয়েছে মোহনবাগান। আসলে ডার্বি মানেই মাইন্ড গেম। মনস্তাত্বিক যুদ্ধে যে দল জেতে তাঁরাই ম্যাচ শেষে ড্রেসিংরুমে ফেরে হাসিমুখে।

এ বারের আই লিগ টিভিতেই দেখছি। মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল—দু’দলের ম্যাচ যতটুকু দেখেছি তাতে রবিবার লড়াইটা কিন্তু দু’জনের ডিফেন্সিভ থার্ডে। বাগানের সনি-জেজে-কাতসুমিদের আক্রমণের সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলের বুকেনিয়া-গুরবিন্দর-মেহতাবদের ডিফেন্সের। ঠিক তেমনই ওয়েডসন-প্লাজা-রবিনের সঙ্গে আনাস-প্রীতমদের। ফুটবলে যদি গোলটাই শেষ কথা হয় তা হলে সপ্তাহ শেষের বিকেলে কফি আর স্ন্যাক্সের সঙ্গে ডার্বির বিনোদন উপভোগ করতে এখন থেকেই কাউন্টডাউন শুরু করে দিন।

সব শেষে একটা কথা। দু’দলের যে সমর্থকরা আজ শিলিগুড়ির মাঠে থাকবেন তাঁরাও চেটেপুটে এই ফুটবল-বিনোদনটা উপভোগ করুন। কিন্তু কোনও ভাবেই অপ্রীতিকর ঝামেলায় জড়িয়ে পড়বেন না। ‘বিউটিফুল গেম’-কে সুন্দর রাখার একটা বড় দায়িত্ব আপনাদেরও।

আজ টিভিতে ডার্বি
ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান
(টেন ২ বিকেল ৪-৩০)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE