পাঁচশো টেস্টের উৎসবের ফাঁকে তিন প্রাক্তন। কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত, দিলীপ বেঙ্গসরকর এবং মহম্মদ আজহারউদ্দিন। -নিজস্ব চিত্র
লোঢা কমিটির প্রস্তাব নিয়ে এ দিন গরমাগরম প্রশ্ন তুললেন রবি শাস্ত্রী। তিন বছরের ‘কুলিং অফ পিরিয়ড’ থেকে জাতীয় নির্বাচকদের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া— সব কিছু নিয়েই আচমকা বোমা ফাটালেন তিনি। তা-ও কানপুর টেস্ট চলাকালীন। সঞ্জয় মঞ্জরেকরের সঙ্গে এক শো-এ।
ভারত-নিউজিল্যান্ড সিরিজে ধারাভাষ্য দিচ্ছেন শাস্ত্রী। এ দিন ম্যাচের বিরতিতে মঞ্জরেকরের সঙ্গে একটি শো করেন ভারতের প্রাক্তন টিম ডিরেক্টর। এবং সেখানে প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কুলিং অফ পিরিয়ড থাকলে আমি বোর্ডের চাকরি করতে যাব কেন? আমার যদি কোনও ভাল পরিকল্পনা থাকে আর সেটা যদি কার্যকরী হয়, তার পরেও তিন বছর পর আমাকে চলে যেতে বলা হবে?’’
প্রসঙ্গত, বিচারপতি লোঢা তাঁর রিপোর্টে প্রস্তাব দেন যে, তিন বছরের বেশি বোর্ডের কোনও পদ ধরে রাখা যাবে না। তিন বছর পরে পদাধিকারীদের বাধ্যতামূলক ‘কুলিং অফ পিরিয়ডে’ চলে যেতে হবে।
শাস্ত্রী বলছেন, ‘‘কে গ্যারান্টি দেবে যে, আমার পরে যে লোকটা বোর্ডের চেয়ারে বসছে সে-ও আমার মতোই যোগ্য? আমি যদি ভাল কাজ করি, তা হলে তো আমাকে সেই সম্মানটা দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে আমাকে ছ’বছরের সময়সীমা দিলে তাতে ভুল কোথায়? তার পর না হয় তিন বছরের বিশ্রামে গেলাম, গিয়ে আবার ছ’বছরের জন্য ফিরলাম। ভারতের প্রেসিডেন্টও তো পাঁচ বছরের মেয়াদ পান!’’
এখানেই থেমে থাকেননি শাস্ত্রী। লোঢা রিপোর্টে প্রস্তাব আছে যে, জাতীয় নির্বাচকদের সংখ্যা পাঁচ থেকে কমিয়ে তিন করে দেওয়া উচিত। যা নিয়ে শাস্ত্রী বলছেন, ‘‘যখন আমি খেলতাম, তখন তিন নির্বাচক যথেষ্ট ছিল। কিন্তু ক্রিকেট নিয়ে দেশের আগ্রহ অনেক বেড়েছে। আমাদের দেশে যারা ক্রিকেট খেলে, তাদের সংখ্যাটা সব মিলিয়ে ধরলে সেটা বাকি ক্রিকেটখেলিয়ে দেশের গোটা জনসংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে।’’ শাস্ত্রী আরও যোগ করেছেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যা মোটামুটি এক কোটি সাত লক্ষ। ওদের তিন নির্বাচকে হয়ে যায়। আমাদের জনসংখ্যা সেখানে একশো কোটিরও বেশি। এতে তো বেচারা নির্বাচকের উপর খুব বেশি চাপ পড়ে যাবে। তাই পাঁচ জন নির্বাচক প্রচণ্ড জরুরি।’’
ভারতের প্রাক্তন টিম ডিরেক্টর আরও বলেছেন, প্রস্তাব কার্যকরী করা নিয়ে বোর্ডকে কোণঠাসা করে না দিয়ে লোঢা কমিশনের উচিত বোর্ডের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা চালিয়ে যাওয়া। ‘‘সব প্রস্তাব এখনও কার্যকর করা নিয়ে জোর দিলে এই মুহূর্তে তা ক্ষতিকারক হয়ে যেতে পারে। আমার মনে হয় কয়েকটা ব্যাপার নিয়ে লোঢা কমিশন আর বোর্ডের মধ্যে এখনও আলোচনার জায়গা রয়েছে,’’ বলছেন শাস্ত্রী।
শাস্ত্রীর এমন বোমার পর প্রশ্ন উঠতে শুরু করে যে, হঠাৎ তিনি এমন কথা বললেন কেন? ভারতের পাঁচশোতম টেস্টের আবহে লোঢার প্রসঙ্গও বা এল কী ভাবে? কেউ কেউ মনে করছেন, লোঢা নিয়ে নিজেদের মতামত বোর্ড হয়তো শাস্ত্রীর মুখ দিয়ে বলিয়ে নিল। বলা হচ্ছে, এটা যে হেতু ওয়ার্ল্ড ফিড, গোটা বিশ্বে যে হেতু ছড়িয়ে যাবে, তাই এখানে কিছু বললে তার প্রভাবও বেশি। শাস্ত্রীর সহ-ধারাভাষ্যকারদের কারও কারও মনে হচ্ছে, যে যে প্রশ্নগুলো তুলেছেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক, তা খুব ভুল নয়। সত্যিই তিন বছর পর পদ ছেড়ে যেতে হলে কোনও নামী ক্রিকেটার বোর্ডে আসতে চাইবে না। নির্বাচক নিয়ে শাস্ত্রীয় মতামতও যুক্তিযুক্ত। কারণ ঘরোয়া মরসুমে একই দিনে আটটা শহরে রঞ্জি ম্যাচ চলে। পাঁচ নির্বাচকের পক্ষেও সব ম্যাচ কভার করা সম্ভব হয় না। সেখানে নির্বাচক সংখ্যা তিন হলে ব্যাপারটা আরও দুঃসাধ্য হয়ে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy