সারদা গোষ্ঠীর ভরাডুবির পরে ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীরা কিছু কিছু করে টাকা ফেরত পাচ্ছেন। একই ধরনের অন্যান্য বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, এত দিনে সারদা কমিশনে তাঁদের আবেদনেরও শুনানি শুরু হল।
কমিশন সূত্রের খবর, অন্যান্য সংস্থার মধ্যে রোজভ্যালি, র্যামেল, সানমার্গ, প্রয়াগ, এমপিএস, অ্যাঞ্জেল তো আছেই। তা ছাড়াও আরও কয়েকটি লগ্নি সংস্থার ক্ষতিগ্রস্তেরা টাকা ফেরতের আশায় সারদা কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন। শুক্রবার, প্রথম দিনে বিভিন্ন লগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে ক্ষতিগ্রস্ত ২৩ জন আবেদনকারীকে কমিশনে ডাকা হয়।
সারদার আর্থিক কেলেঙ্কারি ধরা পড়ার পরে সর্বস্ব খোয়ানো আমানতকারীদের টাকা উদ্ধারের প্রশ্নটি বড় হয়ে ওঠে। সেই টাকা উদ্ধার কবে হবে, কী ভাবে হবে ইত্যাদি প্রশ্নের মধ্যেই তাঁদের ক্ষতিপূরণের জন্য ‘ওয়েস্টবেঙ্গল কমপেনসেশন ফান্ড’ বা পশ্চিমবঙ্গ ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠন করে রাজ্য সরকার। ঠিক হয়, সারদা কাণ্ডে বিপন্ন আমানতকারীদের আবেদনের ভিত্তিতে শুনানির ব্যবস্থা করবে বিচারপতি শ্যামলকুমার সেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন। আবেদনপত্রে দেওয়া তথ্য ঠিক হলে তবেই ক্ষতিপূরণ মিলবে। কমিশন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, শুধু সারদা নয়, অন্যান্য লগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁরাও আর্জি জানাতে পারেন।
অন্যত্র টাকা রেখে ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্বাস দেওয়া হলেও যাঁরা সারদা সংস্থায় লগ্নি করেছিলেন, এত দিন শুধু তাঁদেরই কমিশনে ডাকা হচ্ছিল। ইতিমধ্যেই সারদা সংস্থায় টাকা রেখে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় তিন লক্ষ ৯৫ হাজার আমানতকারীর ক্ষতিপূরণের চেক পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। টাকার অঙ্কে সেটা প্রায় ১৬৬ কোটি। কিন্তু অন্যান্য সংস্থায় রাখা টাকা ফেরতের ব্যাপারে কোনও সুরাহা না-হওয়ায় সেখানকার আমানতকারী ও এজেন্টরা পথে নামেন। তাঁদের টাকা উদ্ধারে সরকারি সহায়তা মিলছে না বলে অভিযোগ ওঠে। ওই সব এজেন্ট-আমানতকারী সংগঠন গড়ে প্রশ্ন তোলেন, কমিশন তো গড়া হয়েছে সারদা-সহ সব লগ্নি সংস্থার আমানতকারীদের টাকা ফেরতের জন্য। তা হলে সারদার বিপন্ন আমানতকারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে কেন? অন্যান্য সংস্থার আমানতকারীদের টাকা উদ্ধারের দাবিতে জনস্বার্থের মামলাও করা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। ‘অল বেঙ্গল ফিনান্সিয়াল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি সংগঠন গড়ে কলকাতা ও জেলায় বিক্ষোভ দেখানো হয়।
এই অবস্থায় সারদা কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামলবাবু তখন জানান, সারদা ছাড়া অন্যান্য সংস্থার ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদনপত্র স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট) বা বিশেষ তদন্তকারী দলের কাছে পাঠানো হয়েছে। তারা খোঁজখবর নেওয়ার পরে প্রাপক-তালিকা তৈরি হবে।
কমিশন-প্রধান শুক্রবার জানান, অন্যান্য লগ্নি সংস্থার ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদনের শুনানি শুরু হয়েছে। এ দিন কমিশনে আসা আমানতকারীদের কাছ থেকে যে-সব তথ্য মিলেছে, তার ভিত্তিতে কয়েকটি লগ্নি সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর, কিছু সংস্থার চেয়ারম্যানকে কমিশনে ডাকা হবে। এ ছাড়া কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালাতে বিশেষ তদন্তকারী দলকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
কমিশন সূত্রের খবর, টাকা ফেরতের বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরে প্রায় ১৭ লক্ষ ৩১ হাজার আবেদন জমা পড়েছিল। তার মধ্যে প্রায় পাঁচ লক্ষ আবেদন অন্য সংস্থার। আপাতত কমিশনের অফিসে জমা পড়া হাজার দুয়েক আমানতকারীর আবেদন নিয়ে শুনানির কাজ চালানো হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy