Advertisement
০৮ মে ২০২৪
অভিযুক্ত মক্কেল

আইনজীবী খুনে ধোঁয়াশা গাঢ় হচ্ছে

আইনজীবী খুনের ঘটনায় তাঁর মক্কেল জ্যোতিষ প্রামাণিকের নামে অভিযোগ জমা পড়ল পুলিশের কাছে। শিলিগুড়ির ইস্টার্ন বাইপাস লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা জ্যোতিষ। ওই ব্যক্তিকে মূল অভিযুক্ত বলে মনে করলেও, খুনের ঘটনায় আরও যে কেউ জড়িত নেই তা উড়িয়ে দিতে পারছে না পুলিশ।

জবানবন্দি দিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আইনজীবীর গাড়ির চালক ও মুহুরিকে। ছবি: সন্দীপ পাল।

জবানবন্দি দিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আইনজীবীর গাড়ির চালক ও মুহুরিকে। ছবি: সন্দীপ পাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৫ ০২:৪৩
Share: Save:

আইনজীবী খুনের ঘটনায় তাঁর মক্কেল জ্যোতিষ প্রামাণিকের নামে অভিযোগ জমা পড়ল পুলিশের কাছে। শিলিগুড়ির ইস্টার্ন বাইপাস লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা জ্যোতিষ। ওই ব্যক্তিকে মূল অভিযুক্ত বলে মনে করলেও, খুনের ঘটনায় আরও যে কেউ জড়িত নেই তা উড়িয়ে দিতে পারছে না পুলিশ। কারণ, ঘটনার পরে বাসে বা ট্রেনে যে ভাবেই হোক রক্তমাখা জ্যাকেট পরে যাওয়া সম্ভব নয় দুষ্কৃতীর। এব্যাপারে কেউ তাকে সাহায্য করেছে বলেই মনে করছে পুলিস।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, গত সোমবার জলপাইগুড়ির স্টেশনপাড়ার ফ্ল্যাটের চেম্বারে আইনজীবী কিশোর চন্দকে খুন করে রক্তমাখা জ্যাকেট পরে অভিযুক্ত হেঁটে রেল স্টেশনের দিকে চলে যায়। যে ছুরি দিয়ে আইনজীবীকে খুন করা হয়েছে তার গন্ধ শুঁকে প্রশিক্ষিত কুকুর কিশোরবাবুর ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে স্টেশনের পাশ দিয়ে কদমতলা মোড় হয়ে শিলিগুড়ি বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যায়। যা থেকে পুলিশের অনুমান, খুনের পরে দুষ্কৃতী ওই পথ ধরেই পালিয়ে যায়। যদিও এ বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত নয়। হাতে আসা আরও বেশ কিছু তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের অনুমান দুষ্কৃতী সোজা পথে স্টেশন পর্যন্ত না গিয়ে নিবেদিতা সরণির সরু গলি ধরে পালিয়ে যায়। দুষ্কৃতীর মোবাইলের শেষ অবস্থানও নিবেদিতা সরণি এলাকাতেই ছিল বলে পুলিশ জেনেছে। তারপরে দুষ্কৃতীর মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়।

যে পথেই দুষ্কৃতী যাক না কেন, তদন্তকারীরা মনে করছেন রক্তমাখা জ্যাকেট পরে তার পক্ষে বেশি পথ হেঁটে যাওয়া সম্ভব নয়। ওই জ্যাকেট রাস্তায় ফেলে দিলে সেটি পুলিশের নজরে আসত। এ ক্ষেত্রে তাও হয়নি। সে কারণেই পুলিশের অনুমান, ঘটনার পরে কোনও গাড়িতে বা বাইকে দুষ্কৃতীকে তুলে নেওয়া হয়েছে, অথবা কেউ তার জ্যাকেট নিয়ে লুকিয়ে ফেলেছে। একাধিক ব্যক্তির সাহায্য ছাড়া এর কোনটাই সম্ভব নয় বলে পুলিশের দাবি। আইনজীবী খুনের তিনদিন পরে আপাতত এমনই নানা ধন্ধে ঘুরপাক খাচ্ছে তদন্ত। অভিযুক্তকে চিহ্নিত করা গেলেও বুধবার রাত পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া বলেন, “বিভিন্ন সূত্রে বিভিন্ন তথ্য মিলছে। সব মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। গোটা ঘটনা একজন ঘটিয়েছে, নাকি আরও কেউ নেপথ্যে রয়েছে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। এতটুকু বলতে পারি, মূল অপরাধী চিহ্নিত হয়েছে।’’

রহস্য দানা বেঁধেছে দুষ্কৃতীর মোবাইল কল রেকর্ড থেকে পাওয়া তথ্যেও। কিশোরবাবুর দেহ উদ্ধার হয়েছে সকাল দশটা নাগাদ। সে দিন সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত দুষ্কৃতীর মোবাইলের অবস্থান পুলিশের নজরে এসেছে। সে সময় তার মোবাইলটি নিবেদিতা সরণি এলাকায় ছিল। তার পরেই মোবাইলটি ‘সুইচ অফ’ করে সিম খুলে নেওয়া হয় বলে পুলিশের দাবি। তার ফলে মোবাইলের আর কোনও নতুন অবস্থান পুলিশ জানতে পারেনি। সূত্রের খবর, দুষ্কৃতীর ব্যবহার করা পুরোনো একটি মোবাইল নম্বর ঘটনার দিন দুপুরে শিলিগুড়ির খড়িবাড়ি এলাকায় সক্রিয় ছিল বলে পুলিশ জেনেছে। সকাল দশটা নাগাদ খুন করে দুপুরের মধ্যে নেপাল সীমান্তবর্তী খড়িবাড়িতে পৌঁছে যাওয়া গাড়ি ছাড়়া সম্ভব নয় বলেই তদন্তকারীদের দাবি। সেই সঙ্গে খুনের পরে নিহত আইনজীবীর দু’টি মোবাইল সিম কেন বের করে নেওয়া হল তা নিয়েও পুলিশ ধন্ধে।

প্রতক্ষ্যদর্শীদের বয়ান শুনে গত সোমবার রাতেই পুলিশ নিহত কিশোরবাবুর এক মক্কেলকে খুনি হিসেবে চিহ্নিত করে। জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরেই খুন বলে পুলিশ তথ্য পায়। গত মঙ্গলবার রাতে কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা নিহত আইনজীবীর স্ত্রী দোলা দেবীর অভিযোগেও ওই মক্কেলের নাম রয়েছে। বছর পাঁচেক ধরে বিভিন্ন মামলার সূত্রে জ্যোতিষ প্রামাণিকের পরিবারের সঙ্গে কিশোরবাবুর যোগাযোগ বলে পুলিশের দাবি। চার বছর আগে প্রামাণিক পরিবারের একটি জমিও কিশোরবাবু বিক্রি করিয়ে দেন বলে পুলিশ জেনেছে। সেই জমি নিয়ে আইনজীবীর সঙ্গে ওই পরিবারের সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করে। সেই মামলা নিয়ে বিবাদের জেরে জ্যোতিষ প্রামাণিক কিশোরবাবুকে খুন করে বলে পুলিশের সন্দেহ। নিহত আইনজীবীর পরিবারের ঘনিষ্ঠদের দাবি, শিলিগুড়ির ইস্টার্ন বাইপাস এলাকার বাসিন্দা ওই মক্কেলই গত সোমবার সকালে স্টেশনপাড়ার তিনতলা ফ্ল্যাটে গিয়েছিল। বেশ কিছুদিন ধরে কিশোরবাবুকে ফোন করে শাসানি, হুমকিও দিচ্ছিল বলে পরিবারের কয়েকজনের অভিযোগ। এ দিন নিহত আইনজীবীর মুহুরি এবং গাড়ি চালকের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়। আদালতে দেওয়া ওই জবানবন্দি তদন্তকে সাহায্য করবে বলেই জেলা পুলিশের দাবি।

এদিকে ঘটনার তিনদিন পরেও অভিযুক্ত গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে জলপাইগুড়িতে। দিনের আলোয় বাড়িতে ঢুকে খুন করে পালিয়ে যাওয়ার পরেও খুনি ধরা না পড়ায় বাড়ছে আতঙ্কও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE