Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

আসনের আশা নয়, ভোটপ্রাপ্তিতেই চোখ বামেদের

আগের দু’বারের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়! এ বার তাই আগ বাড়িয়ে বেশি আশাবাদী হতেই চাইছে না আলিমুদ্দিন। লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের ৪৮ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত নিজেদের সম্ভাবনার চিত্রকে যথাসম্ভব নিচু তারে বেঁধে রাখছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। তার একটা কারণ যদি হয় আগের দু’টি সাধারণ নির্বাচনে নিজেদের হিসাব-নিকাশ বাস্তবে না মেলা, আর একটা কারণ তা হলে নিচু তলা থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট সংগ্রহে এ বারের কিছু বাস্তব সমস্যা।

রাজনীতি থেকে দূরে। বুধবার প্রেস ক্লাবে, সদ্যপ্রয়াত গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসকে নিয়ে এক অনুষ্ঠানে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

রাজনীতি থেকে দূরে। বুধবার প্রেস ক্লাবে, সদ্যপ্রয়াত গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসকে নিয়ে এক অনুষ্ঠানে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৪ ০৩:০৩
Share: Save:

আগের দু’বারের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়! এ বার তাই আগ বাড়িয়ে বেশি আশাবাদী হতেই চাইছে না আলিমুদ্দিন।

লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের ৪৮ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত নিজেদের সম্ভাবনার চিত্রকে যথাসম্ভব নিচু তারে বেঁধে রাখছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। তার একটা কারণ যদি হয় আগের দু’টি সাধারণ নির্বাচনে নিজেদের হিসাব-নিকাশ বাস্তবে না মেলা, আর একটা কারণ তা হলে নিচু তলা থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট সংগ্রহে এ বারের কিছু বাস্তব সমস্যা। ভোটের তৃতীয় দফা থেকে শাসক দলের তাণ্ডব এবং হিংসার অভিযোগের প্রেক্ষাপটে আলিমুদ্দিন আসন-সংখ্যার চেয়েও আগামী বিধানসভা ভোটের জন্য রসদ সংগ্রহেই বেশি জোর দিচ্ছে।

জেলা থেকে যা রিপোর্ট এসেছে, তার পর্যালোচনা করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী ১০-১২টি লোকসভা আসনের বেশি তাদের হিসাবে রাখছে না। এর বেশি কিছু পাওয়া গেলে তা বাড়তি লাভ। বিভিন্ন জেলার নেতৃত্ব অবশ্য এর চেয়ে বেশি আশাবাদী। একাধিক জেলা সম্পাদক এবং জেলা থেকে রাজ্য কমিটির সদস্যের মতে, শেষ পর্যন্ত বামফ্রন্ট এ রাজ্যে গত বারের মতোই ১৫ আসন (একই আসন অবশ্য নয়) ধরে রাখতে পারে। কিন্তু রাজ্য নেতৃত্ব এতটা আশাবাদ গণনায় রাখছেন না। কারণ, ২০০৯-এর লোকসভা এবং ২০১১-র বিধানসভা, দু’বারই জেলা থেকে যা রিপোর্ট এসেছিল, বাস্তবে ফল তার কাছাকাছি যায়নি। এ বার তার পুনরাবৃত্তি চায় না আলিমুদ্দিন।

সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের মতে, এ বারের লোকসভা ভোটে বামেরা লড়তে নেমেছিল খুবই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে। তিন বছর আগের বিধানসভা ভোটের হিসাব ধরলে বামেরা এগিয়েছিল ৭টি লোকসভা কেন্দ্রে। পঞ্চায়েত ভোটের নিরিখে (যদিও সেই নির্বাচনে শাসক দলের জবরদস্তির অভিযোগ ছিল বিপুল) তারা এগিয়েছিল মাত্রই কয়েকটি আসনে। সেই অবস্থা থেকে লোকসভায় দু’সংখ্যার আসনে পৌঁছতে পারলেও তা যথেষ্ট উৎসাহব্যঞ্জক ফল হবে বলে বিমান বসু-বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যেরা দলের অন্দরে আলোচনা করেছেন।

এখনও পর্যন্ত যা প্রাথমিক রিপোর্ট আলিমুদ্দিনে এসেছে, তাতে দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার দু’টি করে এবং নদিয়া ও হাওড়ার একটি করে আসন ‘ইতিবাচক’ ধরা হচ্ছে। এ ছাড়াও, দক্ষিণবঙ্গের অন্তত তিনটি এবং রাঢ়বঙ্গের একটি আসন সুতোয় ঝুলছে বলে বামেদের অনুমান। উত্তরবঙ্গ থেকে তিনটি আসন ‘ইতিবাচক’ ধরছে তারা।

সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, একেবারে বুথ স্তর থেকে যে ধরনের রিপোর্টের ভিত্তিতে বামপন্থীদের প্রথাগত হিসাব হয়, এ বার তা-ও সব জায়গা থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক জায়গায় বামেদের এজেন্ট ছিল না, আবার বহু জায়গায় এজেন্টদের বার করে দেওয়া হয়েছে। তার ফলে, বুথভিত্তিক ভোট পড়ার হিসাব সব জায়গা থেকে নেই। পর্যালোচনা করতে গিয়ে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব আরও দেখছেন, কোথায় ঠিক কত ভোটার শেষ পর্যন্ত ভোটদানে বাধা পেয়েছেন, তারও নির্দিষ্ট হিসাব নেই। তাঁদের উদাহরণ, কোথাও যদি ৫০০ বাম সমর্থক ভোট দিতে না পারেন এবং সেই ভোট তৃণমূল দিয়ে দেয়, তা হলে ব্যবধান এক হাজারে গিয়ে দাঁড়াবে! আর এ সবের পাশাপাশি বিজেপি-র ভোট নিয়ে আশা-আশঙ্কা তো আছেই। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “খুব জটিল এ বারের ভোট!”

তৃণমূল নেতৃত্ব এখন থেকেই কটাক্ষ করছেন, হারের আগেই হেরে বসে আছে বামেরা! শাসক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের মন্তব্য, “সিপিএম বুথ, জেলা বা রাজ্যভিত্তিক রিপোর্ট পাচ্ছে না। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। পায়ের তলার মাটি হারিয়ে গিয়েছে!” এই পরিস্থিতিতে বামেরা ভোটের শতাংশের দিকে নজর রাখতে চাইছেন। বামেদের ভোটের হার গত লোকসভায় ছিল প্রায় ৪৩% এবং বিধানসভায় ৪১%। পঞ্চায়েতে সেটা কমে এসেছিল গড়ে ৩৬ থেকে ৩৮%। যে সব জেলায় সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলনায় কম ছিল, সেখানে বামেরা ৪০% ভোটও পেয়েছিল। এ বার চতুর্মুখী লড়াইয়ে ওই ৩৬-৩৮% ভোট ধরে রাখতে পারলে স্বস্তি পাবেন বাম নেতৃত্ব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

lok sabha election alimuddin left front
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE