অভিযুক্ত স্বপন দাস। ছবি: সোহম গুহ।
দলের পঞ্চায়েত সদস্যাকে গণধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে করা জেনারেল ডায়েরি মঙ্গলবারই বদলেছে এফআইআরে। তার পরেও বুধবার প্রকাশ্যে বিক্ষোভ-মিছিলে হাঁটলেন ওই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত খেজুরির তৃণমূল নেতা স্বপন দাস। তাঁর অভিযোগ, দলেরই একাংশ তাঁকে ফাঁসাতে গণধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ করছে। রাত পর্যন্ত অবশ্য স্বপনবাবুর খোঁজ পায়নি পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন জানান, অভিযুক্তদের সন্ধানে তল্লাশি চলছে। এ দিকে, নিগৃহীতা মহিলার দাবি, স্বপনের ভয়ে এলাকাবাসীর একাংশ এখনও তাঁকে ‘বয়কট’ করছেন।
দলের টিকাশি অঞ্চল সভাপতি স্বপন জেলা রাজনীতিতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি অখিল গিরির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। দলের একাংশের বিরুদ্ধে স্বপনের এই আঙুল তোলাকে সমর্থন করেছেন অখিলবাবু। তাঁর সংযোজন, “এলাকার একটা পঞ্চায়েতের দখল পেতে ফাঁসানো হয়েছে স্বপনকে।” আবার জেলা তৃণমূলে অখিলবাবুর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা তথা দলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীর মন্তব্য, “দলের কর্মীদের একাংশ কখনও কখনও ব্যক্তিস্বার্থে কাজ করছেন। তাঁদের বুঝতে হবে, তাতে আখেরে দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি হচ্ছে। দল এতে ঢুকবে না।” যদিও কাঁথির সাংসদ যা-ই বলুন, মোটের উপরে খেজুরি-কাণ্ড নিয়ে দলের অন্দরের বিভাজন জেলা তৃণমূলের প্রায় কারও কাছেই অস্পষ্ট নয়।
মঙ্গলবার খেজুরির মধ্য চল্লিশের এক পঞ্চায়েত সদস্যা স্বপন-সহ দলেরই কয়েকজনের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ আনেন। মহিলার দাবি, গত ২৪ অগস্ট স্বপন দলবল-সহ তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়ে স্বামী ও ছেলের সামনেই তাঁকে মারধর করে, গণধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ ছাড়া, মহিলাকে একঘর করে রাখার অভিযোগও ওঠে। তৃণমূল সূত্রের খবর, ২০১৩-র পঞ্চায়েত ভোটের পরে খেজুরির ওই পঞ্চায়েতে কে প্রধান (মহিলা) হবেন, তা নিয়ে অভিযোগকারিণীর সঙ্গে স্বপনের বিরোধের সূত্রপাত।
যদিও স্বপনকে ‘কোণঠাসা’ করার চক্রান্ত চলছে, এই অভিযোগে এ দিন খেজুরির তল্লা বাসস্ট্যান্ডের কাছে হেড়িয়া-বোগা রাস্তায় শ’খানেক মহিলা-পুরুষ সমর্থক নিয়ে বিক্ষোভ-মিছিল করেন জেলা স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম দাস, ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের মহিলা প্রধান প্রমুখ। অন্যদের সঙ্গে মিছিলে পা মেলান স্বপনবাবুও। তাঁর বক্তব্য, “প্রধান হতে না পেরে ক্ষোভে গণধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ এনেছেন মহিলা। একঘরে করে রাখার অভিযোগও ঠিক নয়। ওই মহিলার বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে।” সায় দেন মহিলা প্রধান, পার্থবাবুরা।
আবার খেজুরির ওই এলাকার তৃণমূলের বুথ সভাপতি নবকুমার বেরা, বুথ সম্পাদক নাড়ু গিরি, যুব তৃণমূলের টিকাশি অঞ্চল সভাপতি সমীরণ দাস এ দিনও বলেছেন, “স্বপন দাস ও তাঁর অনুগামীদের অত্যাচারে ওই মহিলার জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে গিয়েছিল।” এলাকায় ঘুরে এ দিন শোনা গিয়েছে, ইমারতি-ব্যবসা, ঠিকাদারি করা স্বপন কার্যত অঞ্চলটি ‘শাসন’ করেন। গ্রামবাসীদের কেউ কেউ দাবি করেছেন, ২১ অগস্ট স্বপন-ঘনিষ্ঠ কয়েকজন মাইক নিয়ে এলাকায় ওই মহিলার সঙ্গে কাউকে কথা বলতে নিষেধ করে। ধোপা-নাপিত বন্ধ করতে বলে। ২৪ অগস্ট রাতে এলাকাবাসীদের একাংশ স্বপনবাবু ও তাঁর অনুগামীদের অভিযোগকারিণীকে মারধর করতে দেখেছেন। এলাকার নেতার ‘ফতোয়া কেউ আর অমান্য করেননি। যদিও কিছু বাসিন্দা বলেছেন, পুরোটাই তৃণমূলের ‘অন্তর্কলহ’।
অভিযোগকারিণীর বাড়িতে গিয়ে এ দিন ডাক্তারি পরীক্ষার প্রস্তাব দিয়েছিল পুলিশ। মহিলা রাজি হননি। বলেছেন, “গণধর্ষণের নয়, গণধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ এনেছি। তাই ওই পরীক্ষা করাইনি।” তাঁর দাবি, “আমার সর্বনাশ করতে চেষ্টা করেছিলেন স্বপনবাবুরা। আথিক দুর্নীতিতে ওঁরাই জড়িত। ওঁদের ভয়েই এলাকার কেউ আমার সঙ্গে কথাও বলছে না।”
জেলায় স্বপনবাবুর ঘনিষ্ঠ নেতা অখিল গিরি দাবি করেছেন, “ওঁকে বয়কট করা হচ্ছে বলে মহিলা যে দাবি করছেন, সেটা ঠিক নয়। দাবিটা করানো হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy