Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

জেলেই খুন খাদিম-মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হ্যাপি

জেলের ভিতরে খুন হল খাদিমকর্তা অপহরণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হরপ্রীত সিংহ ওরফে হ্যাপি সিংহ। সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে প্রেসিডেন্সি জেলের ২২-৪৪ সেল ব্লকে। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সকাল পৌনে সাতটা নাগাদ হ্যাপিকে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে ওই জেলেরই বন্দি খুনের আসামি হাওড়ার নিজামুদ্দিন ওরফে নিজাম। গুরুতর জখম অবস্থায় হ্যাপিকে প্রথমে জেল হাসপাতালে এবং পরে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সাড়ে এগারোটা নাগাদ বাঙুরেই মৃত্যু হয় পঁয়ত্রিশ বছরের হ্যাপির।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৪ ০৩:১৬
Share: Save:

জেলের ভিতরে খুন হল খাদিমকর্তা অপহরণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হরপ্রীত সিংহ ওরফে হ্যাপি সিংহ। সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে প্রেসিডেন্সি জেলের ২২-৪৪ সেল ব্লকে। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সকাল পৌনে সাতটা নাগাদ হ্যাপিকে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে ওই জেলেরই বন্দি খুনের আসামি হাওড়ার নিজামুদ্দিন ওরফে নিজাম। গুরুতর জখম অবস্থায় হ্যাপিকে প্রথমে জেল হাসপাতালে এবং পরে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সাড়ে এগারোটা নাগাদ বাঙুরেই মৃত্যু হয় পঁয়ত্রিশ বছরের হ্যাপির। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে থাকার পরেও হ্যাপি সিংহের মতো বন্দি কী ভাবে খুন হল, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে।

বিষয়টি জানার পরে এই খুনের ঘটনার বিস্তারিত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের কারামন্ত্রী হায়দার আজিজ সফি। স্থানীয় হেস্টিংস থানায় নিজামুদ্দিনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগও দায়ের করেছেন প্রেসিডেন্সি জেল কর্তৃপক্ষ। এ দিন তাকে ওই মামলায় আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার তাকে আদালতে পেশ করা হবে বলে কারা দফতর সূত্রের খবর। মন্ত্রী বলেন, “কী ভাবে এবং কেন হ্যাপি খুন হয়েছে, তা বিস্তারিত তদন্তের পরেই বলা যাবে। আমাদের বিভাগীয় তদন্তের পাশাপাশি পুলিশও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করবে।”

তবে এর মধ্যে পুরনো কোনও শত্রুতা বা খাদিম মামলার কোনও যোগাযোগ নেই বলেই প্রাথমিক তদন্তের পরে মনে করছেন কারা এবং পুলিশকর্তারা। যদিও হ্যাপির আইনজীবী মন্দিরা বসুর বক্তব্য, “আমাকে মৃতদেহ দেখতে দেওয়া হয়নি। তবে শুনেছি, ওর দেহে প্রচুর ক্ষত ছিল। চক্রান্ত করেই ওকে মারা হয়েছে। ওর মতো বন্দিই যদি এ ভাবে খুন হয়ে যায়, তা হলে জেলে সাধারণ বন্দিদের যে কোনও নিরাপত্তাই নেই, তা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”

জেল সূত্রে খবর, হ্যাপি থাকত ৩৬ নম্বর সেলে। তার তিনটে সেল পরে ৪০ নম্বর সেলে থাকত নিজামুদ্দিন। সকালে যখন সেল খোলা হচ্ছে, সে সময়ে সাধারণত বন্দিরা অনেকেই ব্যায়াম বা যোগাসন করে। হ্যাপি সিংহও অন্য দিনের মতো যোগাসন করছিল। সেলে চাটাইয়ের উপরে শবাসন করছিল সে। সেই সময়েই আচমকা সেলের কোণে রাখা ইট তুলে সজোরে হ্যাপির মাথায় মারে নিজাম। মাথা ফেটে প্রচুর রক্তপাত হতে শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গেই কারারক্ষীরা হ্যাপিকে জেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে হ্যাপির মাথায় পাঁচটি সেলাই পড়ে। কিন্তু পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তাকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ততক্ষণে তার নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে গিয়েছে। সেখানে পৌঁছনোর ঘণ্টাখানেক পরেই মৃত্যু হয় হ্যাপির।

হ্যাপির খুনে অভিযুক্ত নিজাম হাওড়ার পিলখানা এলাকার বাসিন্দা, খুনের আসামি। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। ২০০৯ সালের জুন মাস থেকে সে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে রয়েছে। প্রেসিডেন্সি জেল সূত্রের খবর, বছর দুই ধরে মানসিক রোগে ভুগছিল নিজাম। সে জন্য তার চিকিৎসাও চলছিল। নিজামের অসুস্থতা বাড়ায় তাকে জেলের মানসিক রোগীদের ওয়ার্ডেও বেশ কিছু দিন রাখা হয়। সেখান থেকে ফের তাকে ভর্তি করা হয় জেল হাসপাতালে। হাসপাতাল থেকে রবিবারই ছাড়া পেয়েছিল সে। কয়েক মাস আগে আর এক বন্দির কান কামড়ে ছিড়ে নিয়েছিল এই নিজামই। প্রশ্ন উঠেছে, নিজামের মতো মানসিক রোগে ভুগতে থাকা এক বন্দিকে মানসিক রোগীর ওয়ার্ড থেকে কেন বাইরে নিয়ে আসা হয়েছিল? কেনই বা রবিবার জেল হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে তাকে ফের মানসিক ওয়ার্ডে পাঠানো হল না? জেলের এক কর্তার দাবি, “বর্তমানে নিজাম অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছিল। হ্যাপির সঙ্গে ওর সম্পর্কও বেশ ভাল ছিল। তাই হঠাৎ কেন নিজাম এ ভাবে হ্যাপিকে খুন করল, তা এখনও স্পষ্ট নয়।” তবে প্রাথমিক ভাবে কারাকর্তাদের সন্দেহ, নিজামকে বিভিন্ন সময়ে বিরক্ত করত হ্যাপি-সহ অনেক বন্দিই। তার জেরেই নিজাম এ দিন ভোরে হ্যাপির উপরে হামলা চালায় বলে সন্দেহ কারা-কর্তাদের।

জেলে বন্দিরা কী ভাবে ইট পেল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এক কারা-কর্তা বলেন, “এমনিতে বন্দিদের সেলে ইট থাকার কথা নয়। তবে অনেক সময়ে ব্যায়াম করার জন্য বন্দিরা সেলে ইট নিয়ে যায়।” একই সঙ্গে ওই কর্তার দাবি, “জেলে বন্দির সংখ্যা জায়গার তুলনায় অনেক বেশি। অথচ সেই আন্দাজে কারারক্ষী নেই। ফলে, নজরদারি অনেক ক্ষেত্রেই শিথিল হতে বাধ্য।” জেল সূত্রে খবর, যে ক’টি ইটে রক্তের দাগ মিলেছে, সেগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

২০০১ সালের খাদিম অপহরণ মামলার অন্যতম অভিযুক্ত হ্যাপি সিংহ বন্দুক চালনা এবং নিশানাবাজিতে দক্ষ ছিল। তদন্তে জানা গিয়েছে, অপহরণের আগে বেনিয়াপুকুরের গোরাচাঁদ লেনের একটি বাড়িতে বসে খাদিম কর্তা অপহরণ মামলার মূল আসামি আফতাব আনসারির সঙ্গে অপহরণের ছক কষে সে। হাড়োয়ার যে ভুত বাংলোয় খাদিম কর্তাকে রাখা হয়েছিল, তার দেখভালের দায়িত্ব ছিল হ্যাপির উপরেই। ২০০১ সালেই সিআইডি-র সূত্র ধরে দিল্লি পুলিশ হ্যাপি সিংহকে গ্রেফতার করে। তাকে প্রথমে উত্তরপ্রদেশের একটি জেলে রাখা হয়। সেখান থেকে হ্যাপিকে কলকাতায় নিয়ে আসে পুলিশ। বিশেষ আদালতে ২০০৯ সালে যাবজ্জীবন সাজা হয় হ্যাপির। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছিল সে। সেই মামলা কলকাতা হাইকোর্টে বিচারাধীন।

হ্যাপি সিংহের মৃত্যুর পরে পুলিশ এবং কারা দফতরের পক্ষ থেকে পৃথক ভাবে তদন্ত শুরু হয়েছে। দুই বিভাগের তদন্তকারী দল এ দিন প্রথমে এম আর বাঙুর এবং পরে প্রেসিডেন্সি জেলে যায়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদও করে। জেল সূত্রের খবর, পুলিশের তদন্তকারী দলের সঙ্গে ছিলেন খাদিম মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি-র কয়েক জন অফিসারও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

partha roy burman happy singh khadim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE