Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

থানার মধ্যে মারপিট করে ধৃত দম্পতি

পাত্র এমবিএ পাশ। চাকরি করে মোটা মাইনের। খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে সম্বন্ধ, তার পরে বিয়ে। কিন্তু মধুচন্দ্রিমা পেরোতে না পেরোতেই পাত্রী জানলেন, সব কথাই মিথ্যে।

ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৩৭
Share: Save:

পাত্র এমবিএ পাশ। চাকরি করে মোটা মাইনের।

খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে সম্বন্ধ, তার পরে বিয়ে। কিন্তু মধুচন্দ্রিমা পেরোতে না পেরোতেই পাত্রী জানলেন, সব কথাই মিথ্যে। পাত্র এমবিএ পাশ নয়। চাকরিও করে সামান্য বেতনের। গোলমাল শুরু তখন থেকেই। মীমাংসার জন্য থানায় এসে মারামারি-হাতাহাতিতে জড়িয়ে শেষমেশ শ্রীঘরে ঠাঁই হল দম্পতির।

রবিবার ভরদুপুরে বর্ধমানের মহিলা থানার সামনে তরুণ-তরুণীকে মারপিট, গালিগালাজ করতে দেখে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন অনেকেই। হাতাহাতি হচ্ছিল দুই পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যেও। তাঁদের সরিয়ে দিতে গিয়েছিলেন দু’জন মহিলা পুলিশকর্মী। থামানো তো দূর। উল্টে, আহত হলেন তাঁরাই। শেষমেশ ওই দম্পতি এবং ছেলের বাবা ও মেয়ের মাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত নভেম্বরে বর্ধমানের মিঠাপুকুরের সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের ছেলে বছর ত্রিশের বুধাদিত্যর সঙ্গে বিয়ে হয় হুগলির পান্ডুয়ার অসীম চট্টোপাধ্যায়ের বছর পঁচিশের মেয়ে জয়িতার। অভিযোগ, বিয়ের আগে যে যোগ্যতা বা চাকরির কথা বলেছিল পাত্রপক্ষ, তা ঠিক নয় জেনে ফেলার পরেই জয়িতার উপরে নির্যাতন শুরু হয়। ১ সেপ্টেম্বর মহিলা থানায় জয়িতা একটি ডায়েরি করে জানান, শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতনে তিনি বাপের বাড়িতে গিয়ে থাকছেন। অসীমবাবু বলেন, ‘‘পুলিশ মীমাংসার জন্য ডেকেছিল। তাই থানায় এসেছিলাম।’’

এ দিন দুপুরে থানায় আসা দুই পরিবারকে এক টেবিলের দু’পাশে বসিয়েছিল পুলিশ। গোল বাধে কথা শুরু হতে। পুলিশ সূত্রের খবর, জয়িতা ও তাঁর মা কাকলিদেবী তাঁদের ‘প্রতারক’ বলতেই পাল্টা সরব হন বুধাদিত্য ও তাঁর বাড়ির লোকজন। কথা কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি বেধে যায় থানার মধ্যেই। বেগতিক বুঝে পুলিশ দু’পক্ষকেই বাইরে বের করে দেয়। তবে তাতে লাভ হয়নি। থানার সামনে দাঁড়িয়েই বুধাদিত্য সপাটে চড় কষান জয়িতাকে। পাল্টা ঝাঁপিয়ে পড়ে বরকে কিল, চড়, ঘুষি মারেন জয়িতা। ছিঁড়ে দেন বরের জামাও। আবার আসরে নামতে হয় পুলিশকে।

বর্ধমানের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘দুই পরিবার মহিলা থানায় পারিবারিক সমস্যা মেটানোর আর্জি জানিয়েছিলেন। তাঁদের জানানো হয়, অভিযোগ জানালে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর পরেই দু’পক্ষ থানা থেকে বেরিয়ে মারপিট শুরু করে। আটকাতে গিয়ে পুলিশ কর্মীরা আহত হয়েছেন।’’ পরে জয়িতা স্বামী ও শ্বশুরের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ করেন। বুধাদিত্য স্ত্রী ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে মারধরের পাল্টা অভিযোগ করেন। চার জনকেই গ্রেফতার করা হয়।

বিয়ের আগে মিথ্যে বলার অভিযোগ নিয়ে বুধাদিত্যর পরিবার কোনও কথা বলতে চায়নি। স্ত্রী-মেয়ে গ্রেফতার হওয়ার পরে জয়িতার বাবা অসীমবাবুর আক্ষেপ, ‘‘মীমাংসার জন্য থানায় এসেছিলাম। কিন্তু গোলমালের পরে পুলিশ কোনও মীমাংসা করবে না বলে জানিয়েছে। কোথা থেকে যে কী অবস্থা তৈরি হল, ভেবে পাচ্ছি না!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE