Advertisement
০৮ মে ২০২৪

থানায় বলে দাও দাদা, বেচারিরা খুব ভয় পেয়েছে

রাঘব বোয়ালরা রইলেন বহাল তবিয়তে। ধরা পড়ল স্রেফ চুনোপুঁটি। সেই চুনোপুঁটিদের বিরুদ্ধেও শুধু ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার অভিযোগ। তাই ভোটপর্ব মেটার কিছু ক্ষণের মধ্যেই পুলিশ যেন কল্পতরু হয়ে তাদেরও রেহাই দিল।

কৈখালিতে এক নেশাগ্রস্তকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।—নিজস্ব চিত্র।

কৈখালিতে এক নেশাগ্রস্তকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।—নিজস্ব চিত্র।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:০৩
Share: Save:

রাঘব বোয়ালরা রইলেন বহাল তবিয়তে। ধরা পড়ল স্রেফ চুনোপুঁটি।

সেই চুনোপুঁটিদের বিরুদ্ধেও শুধু ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার অভিযোগ। তাই ভোটপর্ব মেটার কিছু ক্ষণের মধ্যেই পুলিশ যেন কল্পতরু হয়ে তাদেরও রেহাই দিল।

ফলে, শনিবার বিধাননগর পুরনিগমের ভোটের নাটকীয়তা-ভরপুর দিনের শেষে কারও বিরুদ্ধে কোনও গুরুতর অভিযোগের বালাই নেই। খাতায়-কলমে অবশ্য ৫৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই সকলে জামিনে মুক্ত। কেন? বিধাননগরের পুলিশকর্তারা বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন।

দিনের ঘটনাপঞ্জিতে ‘আক্রান্তে’র তালিকায় রয়েছেন সল্টলেকের তৃণমূল প্রার্থী অনুপম দত্ত, সিপিএম প্রার্থী রাধানাথ চাঁদ ও শাশ্বতী মণ্ডল, বাগুইআটি এলাকার সিপিএম প্রার্থী তাপস ভৌমিক, কংগ্রেস প্রার্থী সোমেশ্বর বাগুই, বিজেপি-র প্রভাকর মণ্ডল, উমাশঙ্কর ঘোষ দস্তিদার কিংবা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো স্থানীয় বিজেপি নেতারা।


সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন

এ সব ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রেই শাসক দলের প্রথম সারির নেতারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে অভিযোগ। দিনের শেষে তাঁদের কেশাগ্রও স্পর্শ করেনি পুলিশ। তবে মন্দ কপাল কৈখালি এলাকায় ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী দেবরাজ চক্রবর্তীর। গোলমাল পাকানোর অভিযোগে তাঁকে ধরা হয়েছে। মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর সিএ দেবরাজ মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে কংগ্রেসের হয়ে দাঁড়িয়ে শাসক দলকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছিলেন।

সল্টলেকে সাংবাদিকদের মারধর করার সময়ে নিজে দাঁড়িয়ে দলীয় কর্মীদের ইন্ধন জোগাচ্ছিলেন খোদ বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসু। দেখা গেল, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডেও নিজের ‘ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী’ নিয়ে বহাল দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ তথা উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূলের সভাপতি, মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠ রিঙ্কু দত্ত দে। সুজিতবাবু অবশ্য বেমালুম সব অস্বীকার করলেন, ‘‘কই, আমি তো কিছু দেখিনি!’’ আর জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দাবি, তাঁদের কোনও বহিরাগত সমর্থকই এ দিন কোনও বুথে ছিলেন না।

রাজারহাট-নারায়ণপুরে দমদমের ভাইস চেয়ারম্যান বরুণ নট্ট, দক্ষিণ দমদমের চেয়ারম্যান পারিষদ বাপি মিত্রদের বাহিনীও সকাল ছ’টা থেকেই ‘অপারেশন’ শুরু করে দেয়। সাত-সকালেই ছাপ্পা, বৈধ ভোটারদের ভোট না দিতে দেওয়া, বিরোধী দলের এজেন্টকে মারধরের বিভিন্ন অভিযোগ অনবরত হাওয়ায় ঘুরপাক খেল।

বেলা ন’টা নাগাদ ২১ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথে জ্যাংরার পঞ্চায়েত প্রধান শিবু গায়েনকে দেখা গেল, সিপিএম প্রার্থী মৌসুমি সাহাকে শাসানি দিয়ে বুথ থেকে বেরোতে বলছেন। পুলিশ দেখেও দেখছে না।

পুলিশের ধরপাকড় যে অনেক ক্ষেত্রেই স্রেফ লোক দেখানো তাও মালুম হয়েছে বারবার। দুপুরে খাস সল্টলেকে ইই ব্লকের কমিউনিটি হলের সামনে হঠাৎ পুলিশকে খুব তৎপর হতে দেখা গেল। ব্লকের পার্কে পালানোর চেষ্টায় থাকা ক’জন বহিরাগতকে ঝ়টপট জিপে তুলল পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে কাছেই উপস্থিত ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সুধীর সাহা (অসীম দাশগুপ্তর প্রতিদ্বন্দ্বী)-র কানে কানে ক’জন তৃণমূল কর্মীর ফিসফাস। অস্ফূটে শোনা গেল তাঁরা বলছেন, ‘‘দাদা থানায় একটু বলে দাও, বেচারিরা খুব ভয় পেয়ে গেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE