১। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ওয়েবসাইট ‘বাংলার মুখ’-এ শ্যামাপদ। ২। খাদি গ্রামোদ্যোগ ভবনে নিজের দফতরে শ্যামাপ্রসাদ। ৩। বিষ্ণুপুর পুরসভাতেও তিনি প্রসাদ-ই।
পদ খোয়ানোর ঝুঁকি এড়াতে ‘প্রসাদ’-বঞ্চিত হয়ে ‘পদ’ বরণ করে নিতে হয়েছিল চুপচাপ।
এখন আবার পদ বাঁচাতেই ‘পদ’ ত্যাগ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
সেই আদি ও অকৃত্রিম ‘প্রসাদ’ ফেরাতে না-পারলে তাঁর পদই যে টলমল! এমনই বিচিত্র টানাপড়েনে পড়ে গিয়েছেন রাজ্যের বস্ত্রমন্ত্রী।
তিন বছর আগে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন শ্যামাপদ মুখোপাধ্যায়। বিষ্ণুপুর পুরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে যাঁকে সকলে চিনত শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় নামে। শুধু শপথবাক্য পাঠ করা নয়, রাজভবনের নথিতে তিনি বাংলায় শ্যামাপদ নামেই স্বাক্ষর করেছিলেন।
‘প্রসাদ’ কী করে ‘পদ’ লাভ করলেন, তা নিয়ে সহাস্য প্রশ্ন উঠেছিল তখনই। জানা গিয়েছিল, মহাকরণ থেকে রাজভবনে পাঠানো মন্ত্রীদের তালিকাতেই শ্যামাপ্রসাদের বদলে লেখা ছিল শ্যামাপদ। তা হলে সেটা তৎক্ষণাৎ শুধরে নেওয়া হয়নি কেন?
কেউ কেউ বলেন, বিষয়টি স্বয়ং শ্যামাপ্রসাদেরও নজর এড়ায়নি। কিন্তু শপথের সময় এ-সব ‘তুচ্ছ’ ভ্রান্তি নিয়ে প্রশ্ন তুললে পাছে মন্ত্রিত্বটাই কেঁচে যায়। তাই তিনি মুখ বুজে পদ-এর স্বার্থে প্রসাদ ত্যাগ করেন। এত দিন সরকারি ভাবে শ্যামাপ্রসাদ তাই শ্যামাপদ হয়েই ছিলেন।
কিন্তু গোল বাধাল স্বরাষ্ট্র দফতরের একটা নোট। জুলাইয়ের মাঝামাঝি নবান্ন থেকে একটি ফাইল পৌঁছয় রাজভবনে। সেই ফাইলেই শ্যামাপ্রসাদকে নিজের নাম ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিল সরকার। বিহারের রাজ্যপাল ডি ওয়াই পাটিল তখন পশ্চিমবঙ্গের অতিরিক্ত দায়িত্বে। তিনি অবশ্য নাম-বদলের ওই ফাইল নিয়ে নাড়াচাড়া করেননি। ইতিমধ্যে ২৪ জুলাই রাজ্যে নতুন রাজ্যপাল হয়ে আসেন কেশরীনাথ ত্রিপাঠী।
পদ ছেড়ে প্রসাদ ফেরানোর সেই ফাইল নিয়ে ফের রাজভবনে কড়া নাড়ায় স্বরাষ্ট্র দফতর। আর তখনই ওঠে আসে এক সূক্ষ্ম প্রশ্ন। যাঁর প্রকৃত নাম শ্যামাপ্রসাদ, তিনি যদি শ্যামাপদ নামে শপথ নেন, তা হলে সেই শপথের বৈধতা কোথায়? রাজভবন জানতে চায়, কী করে এমন হল? সরকার বলে, এটা নেহাতই ভুল। শপথের সময় কোনও কারণে এটা হয়ে গিয়েছে। নবান্নের অফিসারদের অনেকেই অবশ্য প্রশ্ন তুলছেন, “ঈশ্বরের নামে শপথ করে এক জন নিজের নাম ভুল বলেন কী করে?”
রাজভবনই বা তা আইনত মানবে কেন? তাই শ্যামাপদই যে শ্যামাপ্রসাদ, সেটা প্রমাণ করার দায় এখন রাজ্য সরকারের কাঁধে। দিন পাঁচেক আগে নবান্নে ফাইল ফেরত পাঠিয়ে রাজভবন বলে দিয়েছে, শ্যামাপদই যে শ্যামাপ্রসাদ, তা আগে কাগজে-কলমে আইনি ভাবে প্রমাণ করতে হবে। এবং তা করতে গেলে পেশ করতে হবে প্রয়োজনীয় নথিপত্র।
মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদকে এখন তাই ‘পদ’ ত্যাগের জন্য জন্মের শংসাপত্র থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের অ্যাডমিট কার্ড, মায় পাসপোর্ট-সহ সব কিছু দাখিল করতে হবে রাজভবনে। সেই সব নথিপত্র নিয়ে বিচার-বিবেচনার পরে শুরু হবে নাম বদলের প্রক্রিয়া, জানিয়েছে রাজভবন।
শ্যামবাবু অবশ্য মুখে বলছেন, এ-সব নিয়ে তিনি খুব একটা চিন্তিত নন। কেননা তিনি জানেন, শপথের দিনেই ওই নামবিভ্রাট হয়েছিল। তা সত্ত্বেও কেন এত দিন ভুল নাম বয়ে বেড়াচ্ছেন? বস্ত্রমন্ত্রীর জবাব, “আমার তো কোনও অসুবিধা হচ্ছে না।” কিন্তু পদ বাঁচাতেই যে ‘পদ’ ত্যাগ করতে হবে, বিলক্ষণ বুঝেছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy