Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

প্রভাবশালী ১৫-কে জেরা করতে চায় ইডি

সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পনেরো জনের নামের তালিকা তৈরি করে ফেলল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এই তালিকায় রয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সাংসদ, রাজনৈতিক নেতা, আমলা-সহ একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৪ ০৩:৫৪
Share: Save:

সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পনেরো জনের নামের তালিকা তৈরি করে ফেলল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এই তালিকায় রয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সাংসদ, রাজনৈতিক নেতা, আমলা-সহ একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি। ভোটপর্ব মিটলেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এদের নোটিস পাঠানো হবে কি না, তা সংস্থার শীর্ষকর্তাদের কাছে অন্তর্বর্তী রিপোর্ট পাঠিয়ে জানতে চাইবে ইডি-র কলকাতার আঞ্চলিক দফতর।

সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তের দায়িত্ব সিবিআই-কে দিলেও শীর্ষ আদালত ইডি-কেও তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে। ইডি সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই তারা প্রাথমিক তদন্তের কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছে। তা থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই পনেরো জনের তালিকা তৈরি করে পরবর্তী পদক্ষেপ করার ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে তারা।

ইডি সূত্রের খবর, তাদের একটি দল ভুবনেশ্বর গিয়েছে। কারণ, আগামী সপ্তাহে ভুবনেশ্বরে ইডি অফিসারদের একটি কর্মশালা রয়েছে। সেখানে ইডি-র ডিরেক্টর রাজেন কাটোচ-সহ শীর্ষ কর্তাদের হাজির থাকার কথা। থাকতে পারেন সিবিআই এবং সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন অফিস (এসএফআইও)-এর প্রতিনিধিরাও। সেই কর্মশালার ফাঁকেই ইডি-র তালিকা নিয়ে কথা হবে বলে জানা গিয়েছে। ভোট মিটলেই ইডি-র পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।

সারদা মামলায় মূলত টাকা পাচারের তদন্ত করছে ইডি। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টও বলেছে, এই ঘটনায় সারদার টাকা কোথায় গেল, তার খোঁজ করাটাই মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। সিবিআই এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে তদন্ত শুরু না করলেও তাদের অফিসারেরাও একই উদ্দেশ্যে তদন্ত শুরু করবেন।

সারদার টাকা কোথায়, কী ভাবে গিয়েছে তার খোঁজ করার জন্য ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ইডি-র তদন্তকারীরা। এঁদের মধ্যে রয়েছেন বালুরঘাটের তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষ, অসমের প্রাক্তন সাংসদ মাতঙ্গ সিংহের প্রাক্তন স্ত্রী মনোরঞ্জনা সিংহ, রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি রজত মজুমদার-সহ একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি। এঁদের মধ্যে কয়েক জনকে ফের ডাকা হতে পারে বলেও ইডি সূত্রের খবর। ঘটনাচক্রে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়েও সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের জড়িত থাকার উল্লেখ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মামলার আবেদনকারীদের আইনজীবী শুভাশিস ভৌমিক বলেন, “সিবিআইকে তদন্তভার দেওয়ার পিছনে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জড়িত থাকাটাও অন্যতম কারণ।”

এই প্রভাবশালী ব্যক্তিদের থেকে কী জানতে চাওয়া হবে? ইডি-র এক কর্তা জানান, সারদাগোষ্ঠী বাজার থেকে প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা তুলেছে। প্রাথমিক ভাবে এর মধ্যে ৬০০ কোটি টাকার হিসেব মিলছে না। তদম্তকারীদের ধারণা, এই টাকাটাই হাতে হাতে উধাও হয়ে গিয়েছে। টাকাটা কোথায় গেল এবং কাদের মাধ্যমে গেল প্রাথমিক তদন্তের পর তার কিছুটা আঁচ পেয়েছে ইডি। সেই সূত্রেই ওই পনেরো জনকে জেরা করে নিশ্চিত হতে চাইছে তারা।

সারদার উধাও হয়ে যাওয়া টাকার একটি অংশ বিদেশে চলে গিয়েছে বলে সন্দেহ ইডি-র। এবং এ ব্যাপারে অন্তত তিন জনকে জেরা করলে প্রকৃত তথ্য জানা যেতে পারে বলে মনে করছে তারা। এই তিন জনকে চিহ্নিত করে ফেলেছে ইডি। এঁদের মধ্যে শাসক দলের এক সাংসদও রয়েছেন বলে তদন্তকারীদের দাবি।

প্রাথমিক তদন্তে ওই তিন জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য জোগাড় করে গোয়েন্দারা দেখেছেন, তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে কিছু বিদেশি অ্যাকাউন্টে লেনদেন হয়েছে। এখন সেই লেনদেনের বিশদ তথ্য জোগাড় করছেন তদন্তকারীরা। ইডি-র এক কর্তা বলেন, “আর্থিক অপরাধ সংক্রান্ত বিষয়ে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিশদ তথ্য জোগাড় করার চেষ্টা হচ্ছে।”

প্রায় সাত মাস আগে তদন্তের দায়িত্ব হাতে নিলেও ইডি কেন এত দিন এই লোকেদের জিজ্ঞাসাবাদ করেনি?

তদন্তকারী সংস্থার কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, লোকসভা ভোটের আগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেতা-মন্ত্রী-সাংসদদের ডাকা হলে তাকে ‘রাজনৈতিক ইস্যু’ করার চেষ্টা করত কোনও না কোনও রাজনৈতিক দল। তদন্তের গায়েও তার আঁচ লাগত। তাই এ নিয়ে তড়িঘড়ি না-করার সিদ্ধান্ত হয়। ইডি-র অন্য একটি সূত্রের মতে, প্রভাবশালী নেতা-সাংসদদের ডাকার ক্ষেত্রে অনেক বেশি তথ্যপ্রমাণ প্রয়োজন। তাই তড়িঘড়ি ওঁদের ডাকা হয়নি।

এখন কি সেই তথ্যপ্রমাণ হাতে এসেছে?

ইডি সূত্রের খবর, তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে বিভিন্ন লোককে জেরার পাশাপাশি সারদা গোষ্ঠীর ৩৯০টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য জোগাড় করা হয়েছে। এ সব নিয়েও একটি অন্তর্বর্তী রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। তার ভিত্তিতেই আপাতত পনেরো জনকে ডাকার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন ইডি-র তদন্তকারীরা।

সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তের গোড়ায় সুদীপ্ত সেন ও কুণাল ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল ইডি। এ বার ফের তাঁদের জেরা করা হতে পারে। জেলবন্দি ওই দু’জনকে জেরার জন্য ইতিমধ্যেই এক বার কারা দফতরকে চিঠি লিখেছিল ইডি। কারা দফতর তাদের কাছে আদালতের অনুমতি দেখতে চায়। তখন সেই অনুমতি না থাকায় সুদীপ্ত ও কুণালকে জেরা করতে পারেনি ইডি। এ বার আদালতের আগাম অনুমতি নিয়ে ফের জেরা করা হতে পারে ওই দু’জনকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE