Advertisement
০৭ মে ২০২৪

প্রশ্ন করুন আমাদের, এক ধাপ এগিয়ে জানলা খুললেন ইয়েচুরি

সিপিএম মানেই লৌহপর্দার জমানা! রুদ্ধদ্বার কক্ষে রাশভারী আলোচনা! কমিউনিস্ট পার্টি সম্পর্কে জনমানসে এমন বদ্ধমূল ধারণা ভাঙতে উদ্যোগী হয়েছেন সীতারাম ইয়েচুরি। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার পরেই তাঁর ঘোষণা ছিল, আধুনিক প্রজন্মের কাছাকাছি দলকে নিয়ে যাওয়াই তাঁর প্রথম কাজ হবে।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৫৬
Share: Save:

ভাবনায় বদল আসুক না না আসুক, ভঙ্গিতে অন্তত আসছে!

সিপিএম মানেই লৌহপর্দার জমানা! রুদ্ধদ্বার কক্ষে রাশভারী আলোচনা! কমিউনিস্ট পার্টি সম্পর্কে জনমানসে এমন বদ্ধমূল ধারণা ভাঙতে উদ্যোগী হয়েছেন সীতারাম ইয়েচুরি। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার পরেই তাঁর ঘোষণা ছিল, আধুনিক প্রজন্মের কাছাকাছি দলকে নিয়ে যাওয়াই তাঁর প্রথম কাজ হবে। সেই লক্ষ্যেই তাঁর ছোট্ট পদক্ষেপ— সিপিএমের সাংগঠনিক এবং রাজনৈতিক কাজকর্ম নিয়ে বাইরের লোককেও প্রশ্ন করার সুযোগ এনে দেওয়া। যা এত কাল ছিল প্রায় অভাবিত!

উত্তরের ক্ষেত্রে এখনও অনেক ক্ষেত্রে বাঁধা গৎ ছেড়ে বেরোতে পারেননি সিপিএম নেতৃত্ব। কিন্তু আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল রাখতে একটু করে জানলা খোলাও যে সিপিএম রাজনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ, মেনে নিচ্ছে দলের বড় অংশই। ইয়েচুরির উৎসাহেই আপাতত সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপত্রে জায়গা করে নিয়েছে ‘থিঙ্কিং টুগেদার’ শীর্ষক নয়া বিভাগ। যেখানে দলের ভিতর বা বাইরে থেকে যে কেউ সিপিএমের সংগঠন ও রাজনীতি সম্পর্কে প্রশ্ন করতে পারেন। প্রতি সপ্তাহে একটি করে প্রশ্ন বেছে নিয়ে উত্তর দিচ্ছেন দলীয় নেতৃত্ব। উল্লেখ করা প্রয়োজন, সিপিএমে জমানা বদলের পরে এখন কেন্দ্রীয় কমিটির মুখপত্রের সম্পাদকের দায়িত্বে প্রকাশ কারাট। যার মানে দাঁড়াচ্ছে— উদারপন্থী ইয়েচুরির ইচ্ছায় দলের সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা প্রশ্নকর্তাদের সঙ্গে ভাগ করতে হচ্ছে কট্টরপন্থী কারাটকে!

দলে ইয়েচুরি-ঘনিষ্ঠ এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘বাজারচলতি কাগজে আমাদের পক্ষে তো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সুযোগ পাওয়া সম্ভব নয়! তাই আমাদের মুখপত্রেই এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। আমাদের দল, আমাদের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে দলের কর্মী বা অন্যেরা কী ভাবছেন, তার একটা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে এর মাধ্যমে।’’ এখনও অবধি যা ধারা এ কে জি ভবনের চোখে পড়েছে, তাতে প্রশ্ন আসার চল বেশি পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরল থেকেই। যে দুই রাজ্যে সিপিএম এখনও ভাল রকম প্রাসঙ্গিক!


উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙ্গা তেতুলিয়াগ্রাম থেকে জাঠায় প্রায় ছ’কিলোমিটার হাঁটলেন বিমান বসু।
রাস্তার মাঝে থেমে এক শিশুকে কোলে তুলে নিয়ে আদরও করলেন। শনিবার সুদীপ ঘোষের তোলা ছবি।

প্রশ্নের মধ্যে অবশ্যই অস্বস্তির উপকরণ থাকছে কারাটদের জন্য! তবে সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছেন, প্রশ্নের মধ্যে থেকেই মানুষের মনোভাব যাচাই করা যাচ্ছে। বিহারের নির্বাচন নিয়ে সদ্যই অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বকে। কেরলের তিরুঅনন্তপুরম থেকে এক প্রশ্নকর্তা জানিয়েছেন, বিহারের নির্বাচনী কৌশল নিয়ে বামেদের কঠোর পর্যালোচনা করা উচিত! তাঁর মতে, সে রাজ্যে গোটাপঞ্চাশেক আসনে বামেরা প্রার্থী দিয়ে বাকি ১৯৩টি আসনে নীতীশ কুমারদের মহাজোটকে সমর্থন করতে পারতো। তা না করায় ধর্মনিরপেক্ষ ভোট ভাগ করে বিজেপি-র মতো সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ঘুরপথে সাহায্য করায় অভিযুক্ত হতে হয়েছে বামেদের!

প্রত্যাশিত ভাবেই এমন অভিযোগ কারাটেরা মানেননি। তবে প্রশ্নের চেয়ে বহু গুণ দীর্ঘ উত্তরেই স্পষ্ট, বামেদের সম্পর্কে এই ধারণা নস্যাৎ করতে বেগ পেতে হচ্ছে নেতাদের! উত্তরে প্রথমেই বলা হয়েছে পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত লাইনের কথা। যা মেনে চললে কংগ্রেস বা বিজেপি, দু’পক্ষের সঙ্গেই সমদূরত্ব রেখে বাম আন্দোলনকে শক্তিশালী করা এবং নিজেদের সংগঠন বাড়ানোই সিপিএমের নীতি। এবং সেই নীতি মেনেই বিহারে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে কারাটদের ব্যাখ্যা। আর তার সঙ্গেই জবাবে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাম জোটের শরিক হিসাবে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন যে তিনটি আসনে জিতেছে, সেগুলি বিজেপি-কে হারিয়েই। আর সিপিএম যে কয়েকটি আসনে দ্বিতীয়, সেখানে জয়ী হয়েছে মহাজোট। বিজেপি শেষ করেছে তৃতীয় স্থানে। সুতরাং, বিজেপি-কে সুবিধা করে দেওয়ার তত্ত্ব ঠিক নয়।

বাংলা থেকে অবশ্য বেশি প্রশ্ন যাচ্ছে সংগঠন নিয়ে। সল্টলেকের এক বাসিন্দা যেমন জানতে চেয়েছেন, সিপিএমের যে কোনও কমিটি নির্বাচনে যে প্যানেল দেওয়া হয়, তা সম্মেলনের একেবারে শেষ পর্বে কেন? গোড়ায় দিলে প্যানেলের নাম নিয়ে আলোচনার সুযোগ তো বেশি পাওয়া যাবে! আর যাঁরা প্যানেলের অতিরিক্ত নাম দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান, তাঁদের নিরস্ত না করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় লড়তে উৎসাহ দেওয়া হয় না কেন? জবাব দেওয়া হয়েছে, যে কোনও সম্মেলনে দলের কাজ ও লক্ষ্য নিয়ে আলোচনাই প্রধান। সেই লক্ষ্য রূপায়ণের দায়িত্ব কমিটির। সেই কমিটির সদস্য হতে কর্মীরা দলের মধ্যে সাধারণ নির্বাচনের মতো প্রচারে নেমে পড়বেন, তা কাঙ্ক্ষিত নয়!

জবাবের বহর দেখে দলেই কেউ কেউ বলছেন, প্রশ্ন পেলেও নতুন নতুন ধারণা তো কই গ্রহণ করছেন না নেতারা? যদিও পলিটব্যুরোর এক সদস্যের দাবি, ‘‘বিভাগের ‘থিঙ্কিং টুগেদার’ নাম থেকেই স্পষ্ট যে, আমরা গ্রহণ করতে চাই। সংগঠন নিয়ে নানা প্রশ্ন আসন্ন প্লেনামেও আলোচনা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE