নিজের সঙ্গে লড়াইয়ে গত বছরই রেকর্ড গড়েছিল। সেটাও ভেঙে এ বার পাশের হারে নতুন রেকর্ড গড়ল মাধ্যমিক। এ বছরের পরীক্ষায় পাশের হার ৮২.২৪ শতাংশ। গত বারের থেকে ০.৪৩ শতাংশ বেশি। ছাত্রীদের পাশের হারও গত বারের থেকে বেড়েছে, কিন্তু ছাত্রদের হার গিয়েছে কমে। এমনিতে পাশের হারে ছাত্রদের থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও গত কয়েক বছরে সংখ্যার নিরিখে মাধ্যমিকে এগিয়ে থাকছে ছাত্রীরা। এ বারেও সেই ধারায় ছেদ পড়েনি। বৃহস্পতিবার এই পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে।
মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক কখনওই দিল্লি বোর্ডের পাশের হারের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারে না । এ বছরও আইসিএসই পরীক্ষায় ৯৮.২৮ শতাংশ ছাত্রছাত্রী পাশ করেছে। কিন্তু ওই বোর্ডের পরীক্ষার ধরনের সঙ্গে মাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীদের তুলনা করা ঠিক নয় বলে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রশাসক কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিমত। মাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীরা যাতে দিল্লি বোর্ডগুলির পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে না-পড়ে, সেই জন্য ২০১৭ থেকে পরীক্ষার প্রশ্ন ও নম্বর বিভাজনে পরিবর্তন আনছে পর্ষদ। তবে এ বারের ফলাফল যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক বলে মনে করছেন পর্ষদ-কর্তারা। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
পাশের হারে রেকর্ড গড়া, একটি ফলও অসম্পূর্ণ না-থাকা এ-সব তো আছেই। তবে পর্ষদ-কর্তারা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন ছাত্রীদের ভাল ফলের উপরে। সংখ্যার বিচারে ছাত্রদের থেকে এগিয়ে থাকা তো বটেই, মেধা-তালিকাতেও এ বার অনেকটা জায়গা জুড়ে আছে মেয়েরা। ২০১২ থেকে মেধা-তালিকা ফিরে এসেছে মাধ্যমিকে। এ বার প্রথম দশে ৫৪ জনের নাম ঘোষণা করেছে পর্ষদ। তাদের মধ্যে তৃতীয়, চতুর্থ-সহ বিভিন্ন স্থানে আছে মোট ১৮ জন ছাত্রী।
ফল ঘোষণা করে প্রশাসক এ দিন বলেন, “নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা বেড়েছে ৪,৮০৬। সেই জায়গায় ছাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে ১৩,৭৩২। অর্থাৎ মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর প্রবণতাই শুধু বাড়ছে না, তাদের অন্তত মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনা করানোর আগ্রহও যথেষ্ট।” ছাত্রীরা ভবিষ্যতে পাশের হারেও ছাত্রদের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দেবে বলে পর্ষদের আশা। এ বছরই কলকাতায় পাশের হারে ছাত্রদের টপকে গিয়েছে ছাত্রীরা। মহানগরীতে এ বার ৯১.৭৪% ছাত্র এবং ৯৩.৬৩% ছাত্রী পাশ করেছে।
এ বার মোট ন’লক্ষ ৩৮ হাজার ৬১৯ জন নিয়মিত পরীক্ষার্থী মাধ্যমিক দিয়েছিল। তাদের মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা চার লক্ষ ৫০ হাজার ৯৬৭, পাশের হার ৮৫.৮৮%। ছাত্রীর সংখ্যা চার লক্ষ ৮৭ হাজার ৬৫২, পাশের হার ৭৮.৮৭%। গত বছর ছাত্র এবং ছাত্রীদের পাশের হার ছিল যথাক্রমে ৮৬.৩৩% এবং ৭৭.৫৬%। সামান্য হলেও ছাত্রদের পাশের হার কেন কমে গেল, পর্ষদ আপাতত তার ব্যাখ্যা দিতে পারছে না। কল্যাণময়বাবু শুধু বলেন, “যে-বছর ছাত্রছাত্রীরা যেমন পরীক্ষা দেয়, তেমনই ফল হয়।”
এ বছর কলকাতা, পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা ইত্যাদি জেলায় পাশের হার গত বারের তুলনায় বেড়েছে। পাশের হারের বিচারে এ বারের মাধ্যমিকে প্রথম স্থানে আছে পূর্ব মেদিনীপুর (৯৫.০৪%), দ্বিতীয় কলকাতা (৯০.৮৬%), তৃতীয় দক্ষিণ ২৪ পরগনা (৯০.০৬%)। অনেক জেলায় পাশের হার কমেও গিয়েছে। যেমন দুই দিনাজপুর, কোচবিহার, মালদহ, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ইত্যাদি।
পাশের হারের সঙ্গে সঙ্গে সর্বোচ্চ গ্রেড ‘এএ’ (৯০-১০০ নম্বর)-র সংখ্যাও গত বছরের থেকে বেড়েছে। এ বছর ‘এএ’-র সংখ্যা ১,৩৪,২৪০। গত বছর ছিল ১,২৫,০৪১। তবে ভৌতবিজ্ঞান, দ্বিতীয় ভাষা (মূলত ইংরেজি), গণিত, ইতিহাস এই চার বিষয়ে ‘এএ’ গ্রেডের সংখ্যা কমেছে। জীবনবিজ্ঞান, ভূগোল ও প্রথম ভাষায় অবশ্য তা বেড়েছে। তবে চারটি বিষয়ে সর্বোচ্চ গ্রেড কমে যাওয়ার কারণ কী, ফলাফল পর্যালোচনার বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন পর্ষদ-কর্তৃপক্ষ।
এ বারের মাধ্যমিকে শারীরিক প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের ৮৬.৯৯% এবং বিভিন্ন জেল থেকে পরীক্ষায় বসা ৮৯.৬৬% পরীক্ষার্থী পাশ করেছেন। সফল সব পরীক্ষার্থীর মার্কশিট ও শংসাপত্র এ দিনই বিতরণ করা হয়েছে বলে পর্ষদ-কর্তৃপক্ষ জানান।
প্রথম দশে ৫৪ জন
প্রথম: অর্ণব মল্লিক (৬৮২)। দ্বিতীয়: অনিরুদ্ধ সরকার (৬৮১)। তৃতীয়: প্রীতম দাস (৬৮০) ও বীথি মণ্ডল (৬৮০)। চতুর্থ: ঐশী মণ্ডল (৬৭৯) ও মধুলিকা ঘোষ (৬৭৯)। পঞ্চম: নিবেদিতা কৌরি (৬৭৮), দ্বৈপায়ন দুবে (৬৭৮), শৌমিক মহান্তি (৬৭৮), দেবরাজ দাস (৬৭৮), সায়ন্তন লাহিড়ী (৬৭৮) ও দিগন্ত দাস (৬৭৮)। ষষ্ঠ: বর্ণালী সরকার (৬৭৭), সুমনা কুণ্ডু (৬৭৭), কুন্দন মাজি (৬৭৭), সায়ন্তী মণ্ডল (৬৭৭), প্রত্যয় চন্দ্র (৬৭৭), গোপালচন্দ্র সাঁতরা (৬৭৭), অনীশ কোনার (৬৭৭), সৌরভ রায় (৬৭৭) ও অর্ঘ্য মাইতি (৬৭৭)। সপ্তম: শ্রমণা দাস (৬৭৬), বাণীব্রত সিংহ (৬৭৬), সৌরভ চট্টোপাধ্যায় (৬৭৬), প্রীতম দত্ত (৬৭৬), পারিজাত দত্ত (৬৭৬), সত্যাগ্নি মজুমদার (৬৭৬) ও অভিষেক পাত্র (৬৭৬)। অষ্টম: সাগরদীপ দাস (৬৭৫), সৌরভ কৈবর্ত্য (৬৭৫), অমর্ত্য পাল (৬৭৫) ও বলরাম হাজরা (৬৭৫)। নবম: তমোজিৎ দে সরকার (৬৭৪), সায়ন্তন মণ্ডল (৬৭৪), অর্ণব সাধুখাঁ (৬৭৪), শুচিস্মিত ভট্টাচার্য (৬৭৪), এণাক্ষী বিশ্বাস (৬৭৪), পীযূূষকান্তি নাগ (৬৭৪), রোশনী মণ্ডল (৬৭৪), নির্ঝর চট্টোপাধ্যায় (৬৭৪), দেবলীনা মিশ্র (৬৭৪), রূপায়ণ সাহা (৬৭৪), সুসীতা সামুই (৬৭৪), স্বাগতম হালদার (৬৭৪) ও মৌসম দত্ত (৬৭৪)। দশম: অনীশা চন্দ (৬৭৩), ঋত্বিক পাল (৬৭৩), রিনি ঘোষ (৬৭৩), অদ্রীশকুমার পণ্ডা (৬৭৩), রূপককুমার ঠাকুর (৬৭৩), সম্প্রীতি ভট্টাচার্য (৬৭৩), অঙ্কিতা ঘোষ (৬৭৩), কণাদ মিত্র (৬৭৩) ও অরিত্র পাল (৬৭৩)।
পরের পরীক্ষা ২৩ ফেব্রুয়ারি
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা
আগামী বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা ২৩ ফেব্রুয়ারি, সোমবার শুরু হবে। বৃহস্পতিবার এ বারের মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে পরবর্তী পরীক্ষার সূচিও জানিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। আগামী বছরের পরীক্ষাসূচি: ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম ভাষা। ২৪ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় ভাষা। ২৫ ফেব্রুয়ারি ভূগোল। ২৭ ফেব্রুয়ারি ইতিহাস। ২৮ ফেব্রুয়ারি জীবনবিজ্ঞান। ২ মার্চ গণিত। ৩ মার্চ ভৌতবিজ্ঞান। ৪ মার্চ ঐচ্ছিক বিষয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy