বৃষ্টির জল ভূগর্ভে সঞ্চয়ের উপর জোর দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য বলছে, এমনকী বিহার সহ বড় বড় পাঁচ রাজ্যের চেয়ে জল সঞ্চয়ে পিছিয়েই আছে পশ্চিমবঙ্গ।
২০১১য় ক্ষমতায় বসার পর মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন তাঁর সাধের ‘জল ধরো জল ভরো’ প্রকল্প। তাতে ভূগর্ভের জলস্তর দ্রুত নেমে যাওয়া ঠেকাতে ব্যবহারে ত্রিমুখী পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, বৃষ্টির জল সঞ্চয়ের উপর। বলা হয়, জলাধার বা পুকুরে বৃষ্টির জল ধরে রাখলে তা যেমন সারা বছর ধরে পানীয় জল হিসাবে ব্যবহার করা যাবে, তেমনই জলাধার বা পুকুর থেকে জল চুঁইয়ে চলে যাবে ভূগর্ভে। তাতে ভারসাম্য রক্ষা হবে। এ ছাড়া বলা হয়, জলাধার তৈরি ও পুকুর কাটা এবং তৃতীয়ত, নদীর জলকে পানের জন্য ব্যবহার করা।
কিন্তু সাড়ে চার বছর পর কাজ কতটা এগোল? বৃষ্টির জল সঞ্চয়ের জন্য কেন্দ্রের জল মন্ত্রক ছাড়াও গ্রামোন্নয়ন, স্বাস্থ্য, ইত্যাদি আরও নানা মন্ত্রক থেকে সারা দেশেই টাকা দেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গও তার বাইরে নয়। এ ব্যাপারে কী কী কাজ হয়েছে, রাজ্যগুলির তরফ থেকে সেই রিপোর্ট দেওয়ার কথা কেন্দ্রীয় ভূজল পর্ষদকে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ভূজল পর্ষদের সদর দফতর ফরিদাবাদ থেকে রাজ্য ভূগর্ভ জল পর্ষদের প্রাক্তন ডিরেক্টর জি সি পতি বলেন, ‘‘বৃষ্টির জল ভূগর্ভে প্রবেশ করাবার জন্য রাজ্য বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রক থেকে টাকা পায়। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা খুব ভাল নয়। এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ খুবই পিছিয়ে আছে। তা ছাড়া, এই রাজ্য আমাদের কোনও রিপোর্টই দেয় না।’’
আর কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকের শেষ হিসেব বলছে, এমনকী শুষ্ক রাজ্য বিহারের চেয়েও পিছিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। ভূগর্ভে জল সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে এ রাজ্যের আগে স্থান পেয়েছে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং অসম। এমনকী বালুময় রাজ্য গুজরাতও বৃষ্টির মরসুমে জলসঞ্চয়ের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে সামান্যই পিছিয়ে রয়েছে।
তবে জনস্বাস্থ্য কারিগরি ও পঞ্চায়েত-গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় তথ্য মানেন না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রিচার্জ হল গালভরা কথা। কেন্দ্রীয় সরকার যা ইচ্ছে বলে যাক। আমরা ভূপৃষ্ঠের জল দিয়ে সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দিই। ভূগর্ভের জল যত কম ব্যবহার করা যায়, ততই মঙ্গল।’’ তিনি অবশ্য এর জন্যও আগের বাম সরকারের কাজকর্মকেই দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘‘বামেরা যদি ঠিকঠাক কাজ করত, তবে আজ আমাদের এত আর্সেনিক, ফ্লুওরাইড, নোনা জলের বিরুদ্ধে লড়তে হত না। কয়েক লক্ষ মানুষকে রোগগ্রস্ত হতে হত না।’’
অপরদিকে, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের প্রাক্তন মন্ত্রী সিপিএমের গৌতম দেব তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘‘পুকুর কেটে বৃষ্টির জল ধরার কথা। একশ দিনের কাজের প্রকল্পে রাজ্যজুড়ে পুকুর কাটার জন্য তৃণমূল সরকার শুধু কোটি কোটি টাকা খরচই দেখিয়েছে। আসল কাজ কিছু করেনি বলেই কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রক তাদের রিপোর্ট দিয়েছে। কেন্দ্র ভুল কিছু বলেনি।’’
বৃষ্টির মরসুমে
উত্তরপ্রদেশ সঞ্চয় করে ৪০৭৮ কোটি কিউবিক মিটার
মধ্যপ্রদেশ সঞ্চয় করে ২৭৪৯ কোটি কিউবিক মিটার
মহারাষ্ট্র সঞ্চয় করে ২২০৪ কোটি কিউবিক মিটার
অসম সঞ্চয় করে ১৮৯৫ কোটি কিউবিক মিটার
বিহার সঞ্চয় করে ১৮৯২ কোটি কিউবিক মিটার
পশ্চিমবঙ্গ সঞ্চয় করে ১৮১৭ কোটি কিউবিক মিটার
গুজরাত সঞ্চয় করে ১২২১ কোটি কিউবিক মিটার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy