বিশ্ববিদ্যালয়ে দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজ চালানোর জন্য তাঁদের আরও ক্ষমতার প্রয়োজন বলে আচার্য-রাজ্যপালকে জানালেন বিভিন্ন রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যেরা। প্রয়োজন অনুযায়ী উপাচার্যদের ক্ষমতা দেওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্যপালও।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দৈনন্দিন পরিচালনা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে উপাচার্যদের নির্ভর করতে হয় সিন্ডিকেট বা এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিল (ইসি)-এর মতো সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থার উপরে। সংস্থার বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সময় জরুরি কাজে দেরিও হয়ে যায়। তাই মঙ্গলবার রাজভবনে আচার্য-রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠকে কলকাতা, যাদবপুর, রবীন্দ্রভারতী-সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যেরা জানান, তাঁদের ক্ষমতা বাড়ানো দরকার।
এ দিন ওই বৈঠকের পরে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। সেই অনুষ্ঠানের শেষে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়গুলি স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। উপাচার্যদেরও তাই তাঁদের প্রয়োজন অনুযায়ী সব রকম ক্ষমতা দেওয়া দরকার।” তবে সেই সঙ্গেই আচার্যের সংযোজন, “যতটা প্রয়োজন, ততটা ক্ষমতাই উপাচার্যদের দেওয়া দরকার। তার বেশি নয়।” তা হলে কি উপাচার্যেরা তাঁদের প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ক্ষমতা দাবি করছেন? এই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি রাজ্যপালের কাছে। তবে উপাচার্যেরা জানান, বাড়তি কিছু নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজকর্ম সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার জন্য যথাযথ ক্ষমতাই দেওয়া হোক তাঁদের।
কী ধরনের দৈনন্দিন কাজকর্মে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না উপাচার্যেরা?
এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত এক উপাচার্য বলেন, “রেজিস্ট্রার, ফিনান্স অফিসার, পরীক্ষা নিয়ামক, কলেজ পরিদর্শকের নিয়োগ থেকে শুরু করে কিছু ক্ষেত্রে নতুন গবেষণা প্রকল্প শুরু করতে হলেও ইসি, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকতে হয়।”
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আইনের একটি ধারা অনুযায়ী কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়লে উপাচার্য তা নিতেই পারেন। কিন্তু সিন্ডিকেটের পরবর্তী বৈঠকে তা পাশ করাতে হবে। সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত পাশ না-হলে সেটি পাঠানো হবে আচার্য-রাজ্যপালের কাছে। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্যদের ক্ষেত্রে কিন্তু এমন সমস্যা হয় না।
রাজ্যের ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উচ্চশিক্ষা দফতরের কর্তাদের সঙ্গে এ দিন রাজভবনে বৈঠকে বসেন রাজ্যপাল। পরামর্শ দেওয়া নয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অগ্রগতি ও সমস্যার কথা জানতেই এই বৈঠক বলে জানান রাজ্যপাল।
প্রায় চার ঘণ্টার বৈঠক সেরে বেরিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, “রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোয় উপাচার্যের যা ক্ষমতা, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোয় উপাচার্যের ক্ষমতা তার থেকে অনেক বেশি। এই বিভেদ থাকা ঠিক কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজের পরিমণ্ডল কেমন, তা-ও উঠে এসেছে এ দিনের আলোচনায়।” সেখানেই সুরঞ্জনবাবু জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাল-মন্দ সব কিছুর জন্য দায়ী করা হয় উপাচার্যদের। কিন্তু তাঁদের সেই অনুপাতে ক্ষমতা দেওয়া হয় না। এ ব্যাপারে কিছু করা যায় কি না, উচ্চশিক্ষা দফতরের কর্তাদের তা দেখতে বলেছেন রাজ্যপাল।
বৈঠকের পরে সুরঞ্জনবাবু মন্তব্য করেন, “তবে ক্ষমতা পেলেই হবে না। আচার্য এবং গোটা সমাজের প্রতি তাঁদের দায়বদ্ধতাও যেন থাকে, সেটা খেয়াল রাখতে হবে উপাচার্যদের।”
উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তা পরে জানান, দৈনন্দিন কাজে উপাচার্যদের সুবিধা-অসুবিধার কথা এ দিনের ওই বৈঠকে আলোচিত হয়েছে। অসুবিধা দূর করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় আইন পরিবর্তন করা প্রয়োজন কি না, যদি প্রয়োজন হয়ই, কোথায় কতটা বদল দরকার, তা খতিয়ে দেখা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy