Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

শতাব্দীতে এসি বিকল, জানলা ভেঙে যাত্রা

এমনিতেই রেল পরিষেবা তলানিতে। তার উপরে নির্বাচনের ডামাডোলে পরিষেবা বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। যাত্রীদের অভিযোগ, রেল চলছে আপন খেয়ালে। দেখভালের কেউ নেই। সোমবার সকালে সেটাই আবার প্রমাণিত হয়ে গেল হাওড়ামুখী ডাউন শতাব্দী এক্সপ্রেসের ঘটনায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৪ ০৩:২৫
Share: Save:

এমনিতেই রেল পরিষেবা তলানিতে। তার উপরে নির্বাচনের ডামাডোলে পরিষেবা বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। যাত্রীদের অভিযোগ, রেল চলছে আপন খেয়ালে। দেখভালের কেউ নেই। সোমবার সকালে সেটাই আবার প্রমাণিত হয়ে গেল হাওড়ামুখী ডাউন শতাব্দী এক্সপ্রেসের ঘটনায়।

সকালে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ট্রেনটি ছাড়ার পর থেকেই সি-১ কামরার যাত্রীরা বারবার ট্রেনের কর্মীদের কাছে বারবার অভিযোগ করেছিলেন, বাতানুকূল যন্ত্র বন্ধ থাকায় কামরায় দমবন্ধ হয়ে আসছে। কিন্তু কোনও কর্মীই বিষয়টিকে আমল দেননি। এই গরমের মধ্যে ট্রেনটি তেতেপুড়ে একের পর স্টেশন পার হয়েছে, যাত্রীদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি কেউ। বাতানুকূল যন্ত্র ঠিক করা তো দূরের কথা, কামরায় এসে রেলকর্মীরা যাত্রীদের কোনও রকম আশ্বাসও দেননি।

বদ্ধ কামরায় দীর্ঘ ক্ষণ প্রায় দমবন্ধ পরিবেশে থাকতে থাকতে দুই বৃদ্ধ অসুস্থ হয়ে পড়েন। টিকিট পরীক্ষক ও কোচ সহকারীর কাছে ফের অভিযোগ জানান যাত্রীরা। তাঁরা দাবি তোলেন, পরের স্টেশনে দুই বৃদ্ধের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু তার পরেও কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি বলে ওই কামরার যাত্রীদের অভিযোগ।

তত ক্ষণে ট্রেনটি রামপুরহাটে পৌঁছেছে। সেখানেও কোনও ব্যবস্থা না-হওয়ায় ট্রেনটি আবার যাত্রা শুরু করতেই যাত্রীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। চেন টেনে ট্রেন দাঁড় করিয়ে দেন তাঁরা। রেলকর্মীরা এলে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বেশ কিছু যাত্রী। দীর্ঘ ক্ষণ বচসা চলে। যাত্রীরা দাবি তোলেন, একান্তই যদি বাতানুকূল যন্ত্র সারানো না-যায়, কামরায় পর্যাপ্ত বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। যাত্রীদের চাপে বাধ্য হয়েই রেলকর্মীরা বলেন, তা হলে জানলার কাচ ভেঙে দেওয়া হোক। নিদান শুনেই এক শ্রেণির যাত্রী নেমে পড়েন লাইনে। তার পরে পাথর মেরে সি-১ কামরার বেশ কয়েকটি জানলার কাচ ভেঙে দেন।

এই ভাবেই ট্রেনটি প্রায় দেড় ঘণ্টা দেরিতে হাওড়ায় পৌঁছয়। ট্রেনটির এ দিনই নিউ জলপাইগুড়ি ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। উত্তরমুখী যাত্রীরা ওই ট্রেনে উঠবেন বলে প্ল্যাটফর্মেই অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু সি-১ কামরায় যাঁদের আসন পড়েছিল, তাঁরা জানলা ভাঙা দেখে তাতে উঠতে অস্বীকার করেন। এই নিয়ে আরও এক প্রস্ত ঝামেলা বেধে যায়। ওই ট্রেনে হাওড়ায় আসা যাত্রীরাও অপেক্ষমাণ যাত্রীদের সঙ্গে যোগ দেন। অবস্থা ঘোরালো হতে দেখে অবশেষে টনক নড়ে রেল-কর্তৃপক্ষের। ছুটে আসেন হাওড়া স্টেশনের কর্তারা।

তড়িঘড়ি ওই ট্রেনে আরও একটি বাতানুকূল কামরা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। যাত্রীরা কিছুটা শান্ত হন। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, যাঁরা এই দুঃসহ গরমে বাতানুকূল কামরার ভাড়া দিয়েও পরিষেবা পেলেন না, তাঁদের কী হবে? যাত্রীদের দাবি, টিকিটের টাকা ফেরত দিক রেল। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে সি-১ কামরাতেই উঠেছিলেন মধ্যমগ্রামের দম্পতি প্রদীপ ও শিপ্রা সেনগুপ্ত। তাঁরা বলেন, “এত টাকা দিয়ে টিকিট কেটেছি। তার পরেও যা কষ্ট হল, বলার নয়। রেল টাকা ফেরত দিক।”

কিন্তু এত কিছু ঘটে যাওয়ার পরেও রেলকর্তাদের কাছে নাকি এই ঘটনা সম্পর্কে কোনও খবরই ছিল না! প্রশ্ন করা হলে তাঁরা জানান, এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি। হাওড়ায় যাত্রীদের চেঁচামেচির পরে ওই ঘটনার কথা জানাজানি হয়। হাওড়ার ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার অনির্বাণ দত্ত বলেন, “খারাপ কামরার পাশাপাশি ট্রেনে নতুন একটি এসি কামরা জুড়ে দেওয়া হয়েছে। যাত্রীরা যেমন খুশি যেতে পারেন। এর বেশি আর কিছু বলতে পারব না।”

প্রশ্ন উঠছে, গুরুত্বের দিক থেকে রাজধানী এক্সপ্রেসের পরেই শতাব্দীর স্থান। সেই ট্রেনের এমন দুর্দশা কেন? সেই ট্রেনের পরিষেবাই বা ডকে উঠল কী ভাবে? ওই শতাব্দী এক্সপ্রেসের দেখভাল করার কথা উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের। তারা কী বলছে?

বিকেলেও নাকি তাদের কাছে গোলমালের খবর পৌঁছয়নি! বিকেলে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সুব্রত লাহিড়ী বলেন, “এমন কোনও ঘটনার কথা জানি না। তবে যন্ত্র থাকলেই তা খারাপ হতে পারে। ঠিক কী ঘটেছে, খবর নিচ্ছি।”

টাকা ফেরত দেওয়া হবে কি?

সুব্রতবাবুর জবাব, “এখনই কিছু বলা যাবে না। আগে তদন্ত করে দেখা হোক। তার পরে দেখা যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

shatabdi express ac fault railway
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE