বিধানসভায়: স্বাস্থ্য বিল পেশের সময় মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: প্রদীপ আদক।
বেসরকারি হাসপাতালের অনিয়ম রুখতে চিকিৎসকদের আরও বেশি করে সক্রিয় হওয়ার ডাক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, মুনাফার লোভে রোগীর উপরে যাতে অকারণ চাপ দেওয়া না হয়, সে দিকে ডাক্তারদেরই নজর রাখতে হবে। কর্তৃপক্ষ যদি বাড়তি লাভের জন্য তাঁদের চাপ দেন তা হলে তৎক্ষণাৎ বেসরকারি চাকরি ছেড়ে সরকারি হাসপাতালে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
২২ ফেব্রুয়ারি টাউন হলের বৈঠক থেকেই বেসরকারি হাসপাতালের মালিকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে চলেছেন মমতা। শুক্রবার বিধানসভায় তিনি সরাসরি বলেন, ‘‘সবাই খারাপ নন। কিন্তু যাঁরা খারাপ তাঁদের শোধরানোর সুযোগ দিচ্ছি। শোধরালে ভাল। নয়তো আইন আইনের পথে চলবে।’’ বক্তৃতার শেষ দিকে সরাসরি ডাক্তারদের প্রসঙ্গে চলে আসেন তিনি।
চিকিৎসক মহল মনে করছেন, এ কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের দায়বদ্ধতা নির্দিষ্ট করে দিলেন। এক পক্ষ মনে করছেন, ডাক্তাররা প্রশাসনে জড়িত থাকলে রোগীদের সঙ্গে বোঝাপড়া বাড়বে এবং অনৈতিক কাজকর্ম তুলনায় কমবে।
বাইপাসের একটি হাসপাতালের মেডিক্যাল ডিরেক্টর বললেন, ‘‘অনেক হাসপাতালেই ডাক্তাররা শেয়ার হোল্ডার। আমাদের অভিজ্ঞতায় তাতে প্রশাসন চালানো সহজ হয়।’’ আবার অন্য একটি পক্ষ মনে করছেন, ডাক্তারদের ক্লিনচিট দেওয়ার কারণ নেই। বহু চিকিৎসক নিজেদের আয় বাড়াতে অপ্রয়োজনে পরীক্ষানিরীক্ষা করান। ‘‘এক বার আমরা ডাক্তারদের নির্দিষ্ট বেতনের কথা ভেবেছিলাম। তাতে বহু নামী ডাক্তারই রাজি হননি,’’ জানালেন এক হাসপাতাল-কর্তা।
তিন পক্ষ
রোগীর প্রাপ্তি
• ইমার্জেন্সি থেকে আহত রোগী ফেরানো যাবে না
• অস্ত্রোপচার, পরীক্ষার খরচ বেঁধে দেওয়া হলো
• একই পরীক্ষা বার বার করানো যাবে না
• ১০০-র বেশি শয্যা থাকলে ন্যায্য-মূল্য ওষুধের দোকান
• এ বার চেকেও মেটানো যাবে হাসপাতালের বিল
• টাকা বাকি থাকলে মৃতদেহ আটকে রাখা যাবে না
হাসপাতালের চিন্তা
• লোকে এ বার থেকে রোগী ফেলে দিয়ে যাবে
• খরচ বেঁধে দেওয়ায় খারাপ হবে চিকিৎসার মান
• পরীক্ষার সংখ্যা বেঁধে দিলে রোগ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হবে
• সরকারি হাসপাতালের উপরে আস্থা আরও কমবে
• রোগী পাঠাতে পারে সরকারি হাসপাতালগুলিও
• টাকা দিতে গড়িমসি করা হবে। হতে পারে হামলাও
চিকিৎসকের সঙ্কট
• চিকিৎসা অপছন্দ হলেই চড়াও হবে রোগীর পরিবার
• প্রয়োজনেও এক পরীক্ষা বার বার করা যাবে না
• দরকার হলেও দামি ওযুধ লিখতে দশ বার ভাবতে হবে
• অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসার মানের সঙ্গে আপস হবে
• বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে চিকিৎসা করা যাবে না
• হাসপাতালে দায়দায়িত্ব অনেকটাই বেড়ে যাবে
কিন্তু চিকিৎসকেরা প্রশাসনে যুক্ত হতে চান কি? এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘যা পরিস্থিতি, মানুষ আর এক চুলও আমাদের বিশ্বাস করেন না। এর উপরে যদি প্রশাসনে নাক গলাতে যাই, তা হলে ঘরেরও শত্রু, বাইরেরও শত্রু হব।’’ বেসরকারি ছেড়ে সরকারি হাসপাতালে আসাটা তাঁদের পক্ষে আর্থিক ভাবেও লাভজনক নয়। তাই অনেকে জানিয়েছেন, তাঁরা তেমন হলে ভিন রাজ্যে চলে যাবেন। আর এক জনের মন্তব্য, ‘‘আমরা বরং এখন ভারতীয় দণ্ডবিধি বিষয়টা কী এবং কী ভাবে আগাম জামিন নেওয়া যায়, তাই নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছি।’’
আরও পড়ুন: হাসপাতালের সঙ্গে নজরে স্কুল, শিক্ষা-ব্যবসা রোখাও লক্ষ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতার
বেসরকারি হাসপাতালের এক কর্তার কথায়, ‘‘এখন তো রোগী মারা গেলেই বাড়ির লোকেরা টাকা না দিয়ে চলে যাবেন। বলবেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী তো মৃতদেহ আটকে রাখতে বারণ করেছেন।’’ অন্য এক কর্তার আক্ষেপ, ‘‘মন্দার বাজারে লাভজনক শিল্প বলতে দু’টোই ছিল, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য। এ বার দু’টোই লোকসানে চলবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy