Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সাগরের ভোল বদলেই শুখা গরমের দাপট

স্বস্তির বৃষ্টি নামবে কবে? আম-আদমি তো দূর অস্ৎ, খোদ আবহবিজ্ঞানীরাও এই প্রশ্নের মুখে অসহায়। দিনভর জটিল হিসেব কষে বা উপগ্রহ-চিত্র দেখেও ঝড়বৃষ্টির আশ্বাস দিতে পারছেন না তাঁরা। আবহবিদেরা বলছেন, আগামী ক’দিনে তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। পারদের সেই পতনে অবশ্য স্বস্তি মিলবে না।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৪ ০৩:১০
Share: Save:

স্বস্তির বৃষ্টি নামবে কবে? আম-আদমি তো দূর অস্ৎ, খোদ আবহবিজ্ঞানীরাও এই প্রশ্নের মুখে অসহায়। দিনভর জটিল হিসেব কষে বা উপগ্রহ-চিত্র দেখেও ঝড়বৃষ্টির আশ্বাস দিতে পারছেন না তাঁরা। আবহবিদেরা বলছেন, আগামী ক’দিনে তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। পারদের সেই পতনে অবশ্য স্বস্তি মিলবে না। গরমের হাত থেকে রেহাই দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনাও আপাতত নেই বলেই বিজ্ঞানীদের পূর্বাভাস।

মে মাসের নিরিখে গত সোমবার এক দশকের রেকর্ড গরম পড়েছিল মহানগরে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তাপপ্রবাহে নাকাল হয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। মঙ্গলবার পারদ একটু নামলেও ফের বুধবার থেকে শুক্রবার (৪১.১ ডিগ্রি) পর্যন্ত টানা তাপপ্রবাহ (সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ৫ ডিগ্রি বা তার বেশি) চলেছে কলকাতা ও সংলগ্ন দক্ষিণবঙ্গে। শনিবার অবশ্য তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, এ দিন শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে ৪ ডিগ্রি বেশি। আগামী কয়েক দিনও তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকবে বলে আবহবিজ্ঞানীদের পূর্বাভাস।

এপ্রিল-মে মাসে কলকাতায় ৪০ ডিগ্রির আশপাশে তাপমাত্রা বিরল নয়। কিন্তু অন্যান্য বছর গরমে ঝড়বৃষ্টি হয়। ফলে মাঝেমধ্যে নাকাল করা গরম থেকে কিছুটা রেহাই মেলে। বাতাসে জোলো হাওয়ার জন্য পথঘাটে বেরোলে ঘামে ভিজে জবজবে হওয়াও এ শহরের দস্তুর। সেখানে এ বার ঝড়বৃষ্টি নেই, শুকনো গরমের দাপট! বারবার তাপপ্রবাহের মুখেও পড়েছে মহানগরী।

এই তাপপ্রবাহের ধারাকেই গরমের চরিত্র বদল হিসেবে ধরছেন আবহবিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, এমন ঘনঘন তাপপ্রবাহ বিরল ঘটনা। হাওয়া অফিসের এক বিজ্ঞানীর কথায়, “একই মরসুমে এমন ঘনঘন তাপপ্রবাহ আগে দেখিনি।” শেষ কবে এমনটা হয়েছে বা আদৌ কোনও দিন হয়েছে কি না, তা-ও নিশ্চিত করে বলতে পারেনি হাওয়া অফিস। কিন্তু গরমের চরিত্র বদলে গেল কেন?

আবহবিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা: কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের গরমে বাতাসে জলীয় বাষ্প বা আর্দ্রতা একটা বড় উপাদান। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের বিকেলে ঝড়বৃষ্টির জন্য সেই জলীয় বাষ্প অনেকটা দায়ী থাকে। এ বার সেই জলীয় বাষ্পেরই ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। আদতে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া উচ্চচাপ বলয়ই জলীয় বাষ্প বা জোলো বাতাসকে ঠেলে দেয় গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের দিকে। কিন্তু এ বছর বেশির ভাগ সময়ে সেই উচ্চচাপ বলয় তৈরি হচ্ছে না। যার ফলে দক্ষিণবঙ্গের বাতাসে জলীয় বাষ্পের ঘাটতি রয়েই যাচ্ছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলছেন, “বঙ্গোপসাগরের চরিত্রটা এ বার অস্বাভাবিক। তার প্রভাব পড়ছে দক্ষিণবঙ্গের গরমে।” জোলো হাওয়া বা দখিনা বাতাস জোরালো না হওয়ায় গাঙ্গেয় বঙ্গে ঢুকছে রাঢ় বাংলার লু!

অনেক সময়ে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হলেও বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ে। কিন্তু এ বার তেমনও হচ্ছে না। আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, গত দিন দুয়েক ধরে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা রয়েছে। কিন্তু তার শক্তিবৃদ্ধি না হওয়ায় বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ছে না। এক আবহবিজ্ঞানীর কথায়, “জলীয় বাষ্প ঢুকলেই নিম্নচাপ অক্ষরেখার শক্তি বেড়ে যেত।”

কিন্তু বঙ্গোপসাগরের চরিত্রই বা বদলে গেল কেন?

এ বছর প্রশান্ত মহাসাগরে দক্ষিণ আমেরিকা উপকূলে জলের তাপমাত্রা বেড়েছে (এল নিনো)। ফলে প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরে জলের তাপমাত্রা বাড়বে। যার ফলে গোটা বিশ্বের আবহাওয়ায় একটা বদল আসে। এ বার বঙ্গোপসাগরের চরিত্র বদলের পিছনে এল নিনো-ই দায়ী কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক তপনকুমার জানা বলছেন, “এই ঘটনার পিছনে এল নিনো দায়ী হতেই পারে। এল নিনো সৃষ্টি হলে ভারতের বৃষ্টির উপরে প্রভাব পড়ে।” তবে এ ব্যাপারে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

দিল্লির মৌসম ভবনের কর্তারা অবশ্য বঙ্গোপসাগরের এই ভোল বদলের পিছনে এল নিনো-কে সরাসরি দায়ী করছেন না। তাঁদের বক্তব্য, এল নিনো আগেও হয়েছে। তখন কিন্তু এমন গরম দেখা যায়নি। মৌসম ভবনের ব্যাখ্যা, বঙ্গোপসাগরে উচ্চচাপ বলয় তৈরি না হওয়ার পিছনে বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তরের পরিবর্তন দায়ী হতে পারে। কিন্তু সেই পরিবর্তনের কারণ সংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ এখনও তাঁদের জানা নেই। “আগামী দিনে বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তরের বিশ্লেষণ সক্ষম হলে এর কারণও বোঝা যাবে,” মন্তব্য মৌসম ভবনের এক বিজ্ঞানীর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

weather kuntak chaterjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE