Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সাহসী হতে বলে খোঁচা কমিশনকেও

পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় দফার ভোটে ব্যাপক রিগিং হয়েছে নির্বাচনী জনসভার মঞ্চ থেকে সরাসরি এই অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন বিজেপি’র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার আসানসোলের জনসভায় তাঁর দাবি, এ রাজ্যে তৃতীয় দফার ভোটপর্বে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ। চতুর্থ-পঞ্চম দফায় অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট আয়োজনের লক্ষ্যে কমিশনকে ‘সাহস সঞ্চয়’ করার পরামর্শও এ দিন দিয়ে গিয়েছেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী, যার প্রতিক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন বা পশ্চিমবঙ্গে কমিশন নিযুক্ত বিশেষ পর্যবেক্ষক কেউই মুখ খোলেননি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৪ ০৩:০৮
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয় দফার ভোটে ব্যাপক রিগিং হয়েছে নির্বাচনী জনসভার মঞ্চ থেকে সরাসরি এই অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন বিজেপি’র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার আসানসোলের জনসভায় তাঁর দাবি, এ রাজ্যে তৃতীয় দফার ভোটপর্বে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ। চতুর্থ-পঞ্চম দফায় অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট আয়োজনের লক্ষ্যে কমিশনকে ‘সাহস সঞ্চয়’ করার পরামর্শও এ দিন দিয়ে গিয়েছেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী, যার প্রতিক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন বা পশ্চিমবঙ্গে কমিশন নিযুক্ত বিশেষ পর্যবেক্ষক কেউই মুখ খোলেননি।

৩০ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গে হয়ে যাওয়া তৃতীয় দফার নির্বাচন ঘিরে প্রবল চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। বিশেষ পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশকে সরানোর দাবিও উঠেছে। বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ইতিমধ্যে কমিশনে রিগিং-সন্ত্রাসের অভিযোগ পেশ করেছে। আজ সোমবার বিজেপি-ও এ ব্যাপারে দিল্লিতে কমিশনের কাছে দরবার করবে। সিপিএম-কংগ্রেসের অভিযোগ এবং হুগলির বিজেপি প্রার্থী চন্দন মিত্রের সঙ্গে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের আলোচনার ভিত্তিতে শনিবারই তৃতীয় দফার ৯টি লোকসভা কেন্দ্রের পঞ্চাশটি বুথের অসম্পাদিত ভিডিও ফুটেজ চেয়ে পাঠিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। শুধু তা-ই নয়, চতুর্থ ও পঞ্চম দফার ভোটে যাতে এমন নালিশ না-আসে, সে জন্য তারা বিশেষ কিছু ব্যবস্থার সুপারিশও করেছে।

বিস্তারিত দেখতে ক্লিক করুন...

এমতাবস্থায় এ দিন আসানসোলের সভায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকেও সমালোচনা ও প্রশ্নের বাণে বিঁধেছেন মোদী। জনসভায় তাঁর দাবি, এ রাজ্যে ৩০ এপ্রিলের ভোটে নিশ্চিত ভাবে রিগিং হয়েছে। এবং পরবর্তী দু’দফাতেও তার পুনরাবৃত্তির প্রভূত আশঙ্কা। “আমি জানতে চাই, আগামী দুই পর্বে সেই খেলাই কি চলবে?” প্রচারমঞ্চ থেকে কমিশনের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন বিজেপি’র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। কমিশনের প্রতি যাঁর পরামর্শ, “তৃতীয় দফার ভোটে আপনারা রিগিং রুখতে ব্যর্থ। হিংসা রুখতে ব্যর্থ। এই পরিস্থিতিতে আসন্ন দু’দফায় যাতে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, সে জন্য এখনই সাহস (হিম্মত) সঞ্চয় করুন।”

কমিশনকে ‘সাহসী’ হওয়ার পরামর্শ দিয়েই মোদী অবশ্য ক্ষান্ত হননি। কমিশনকে তাদের ক্ষমতা ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনও করে দিয়েছেন। কমিশন-কর্তাদের উদ্দেশ করে বলেছেন, “ভোটের সময়ে সারা দেশের দায়িত্ব আপনাদের উপরে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও আপনাদের বেশি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আপনারা সেই ক্ষমতা যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করতে ভয় পাচ্ছেন কেন?” তাঁর ক্ষুব্ধ প্রশ্ন, “কেন রিগিং হচ্ছে, কেন মারপিট হচ্ছে? কেনই বা মিথ্যে মামলা হচ্ছে আমাদের বাবুল সুপ্রিয়ের বিরুদ্ধে?’’ এ দিন বক্তৃতামঞ্চ থেকে মোদীর আহ্বান, “কমিশন, আমার কথা শুনুন। নির্বাচন কমিশনের যে সব প্রতিনিধি এই সভায় আমার বক্তৃতা রেকর্ড করছেন, তাঁরা আমার এই সব কথা কমিশনে পাঠিয়ে দিন। যদি আমার বক্তব্য খারাপ লাগে, তা হলে আরও একটা অভিযোগ করুন।”

নির্বাচনের পিছনে বিপুল সরকারি অর্থ খরচ হওয়া সত্ত্বেও মানুষ নির্ভয়ে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না-পারায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন মোদী। “নির্বাচন অবাধ না-হলে, ভোট লুঠ হলে তার দায়িত্ব বর্তায় নির্বাচন কমিশনের উপরে। আমি আবার বলব, ৩০ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে কমিশন ব্যর্থ। হিংসা রুখতে ব্যর্থ।” স্পষ্ট জানিয়েছেন তিনি। পরিশেষে কমিশনের প্রতি তাঁর বার্তা, “আপনাদের দায়িত্ব প্রতিটি নাগরিককে সুরক্ষা দেওয়া। তাঁরা যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন, তা দেখা। নিজেদের দায়িত্ব পালন করুন। কে আপনাদের বসিয়েছে, তার উপরে ভিত্তি করে নির্বাচন কমিশন চলে না।”

নরেন্দ্র মোদীর এ হেন বাক্যবাণের কোনও প্রতিক্রিয়া অবশ্য কমিশনের তরফে মেলেনি। পশ্চিমবঙ্গে নিযুক্ত নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশ এ দিন বাঁকুড়ায় বলেন, “কোন রাজনৈতিক নেতা কী বললেন, সে ব্যাপারে মন্তব্য করতে পারি না।” রাকেশের ব্যাখ্যা, “ভোট সম্পর্কে কারও কোনও অভিযোগ নির্দিষ্ট ভাবে আমাকে জানালে আধ ঘণ্টার মধ্যে জবাব পেয়ে যাবেন। এ-ই আমার কাজ। কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের মন্তব্য নিয়ে কিছু বলব না।” মোদীর সমালোচনা ও ‘পরামর্শ’ প্রসঙ্গে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার (সিইও) সুনীল গুপ্তের বক্তব্য, “আমার এ বিষয়ে কিছু বলার নেই। যা বলার, দিল্লি থেকে বলা হবে।”

তবে নির্বাচন কমিশন নিয়ে মোদী এ দিন যা বলেছেন, প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বও মোটামুটি ভাবে তার সঙ্গে একমত। প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের দাবি, “বাংলার মানুষ ইতিমধ্যে জেনে গিয়েছেন যে, কমিশন ভোট পরিচালনায় ব্যর্থ। মোদী যা বলেছেন, তা রাজ্যের মানুষেরও বক্তব্য।” প্রদীপবাবুর অভিযোগ, “প্রশাসনের একাংশের সঙ্গে তৃণমূলের যোগসাজসেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি। আর কমিশন বসে বসে দেখেছে!” অন্য দিকে সরাসরি মোদীর সুরে সুর না-মেলালেও পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ অব্যাহত রেখেছে সিপিএম। দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু এ দিন বলেন, “তৃতীয় দফার ভোট আংশিক প্রহসনে পরিণত হয়েছে। ভোট যাতে পুরোপুরি প্রহসনে পরিণত না-হয়, জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে তা নিশ্চিত করতে হবে। পরবর্তী দু’দফার নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে করার জন্য তারা রাজ্যের নির্বাচন আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিক।”

বিশেষ পর্যবেক্ষক রাকেশের অপসারণের দাবিতে তাঁরা যে এখনও অনড়, বিমানবাবু এ দিন তা-ও জানিয়ে রেখেছেন। তবে নির্বাচন কমিশন নিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় থেকে দলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন কেউই মুখ খুলতে নারাজ। কৃষ্ণনগর ও রানাঘাটের দু’টি সভায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কমিশনকে কেন্দ্র করে মোদীর বক্তব্য নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

modi vote election commission
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE