Advertisement
০১ মে ২০২৪

খড়্গপুরের ‘বেতাজ বাদশা’কে খুন করল কে, এমন দুর্জয় সাহস কার?

দু’দিন ধরে রেল শহরে প্রশ্নটা ঘুরছিল। রেল-মাফিয়া শ্রীনু নায়ডুকে তার খাসতালুকে ঢুকে বোমা-গুলি চালিয়ে খুন করতে পারে, এমন দুর্জয় সাহস কার?

শ্রীনুর শেষযাত্রায় ছেলে তরুণ। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

শ্রীনুর শেষযাত্রায় ছেলে তরুণ। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০০
Share: Save:

দু’দিন ধরে রেল শহরে প্রশ্নটা ঘুরছিল।

রেল-মাফিয়া শ্রীনু নায়ডুকে তার খাসতালুকে ঢুকে বোমা-গুলি চালিয়ে খুন করতে পারে, এমন দুর্জয় সাহস কার?

সাত জনকে গ্রেফতারের পরে শুক্রবার পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে শঙ্কর রাও-ই মূলচক্রী। ঘটনার পিছনে সেই মাফিয়া-দুনিয়ার বদলার তত্ত্বই খাড়া করেছেন তদন্তকারীরা। শুনে চমকেছেন অনেকেই— এই ছেলেটা! যার বিরুদ্ধে এতদিন হুমকি, দাদাগিরির কিছু অভিযোগ শোনা যাচ্ছিল, যে কিনা বছর খানেক ধরে এলাকাতেই থাকে না, সে-ই খড়্গপুরের ‘বেতাজ বাদশা’কে সরাল!

শঙ্করের পাড়া কুমোরপাড়ার বাসিন্দাদের প্রশ্ন, ঠিক তো? শ্রীনুর স্ত্রী পূজা জানান, তিনি শঙ্করের বিষয়ে কিছুই জানেন না। শ্রীনুর মা রাবণাম্মাদেবী মানছেন, ‘‘শঙ্কর অনেক আগে শ্রীনুর কাছে আসত। তবে, শ্রীনুর সঙ্গে কাজ করত না।’’

কে এই শঙ্কর রাও?

প্রায় ৬ ফুট লম্বা, বছর পঁয়ত্রিশের ছিপছিপে চেহারার শ্যামবর্ণ ওই যুবক বছর খানেক ধরে মা, স্ত্রী, মেয়েকে নিয়ে জামশেদপুরের বাসিন্দা। কয়েক মাস আগে পর্যন্ত খড়্গপুরের এক সময়ের ‘ত্রাস’ বাসব রামবাবুর লোক হিসেবেই পরিচিত ছিল। শঙ্করের বাবা শ্রীনিবাস রাও নিমপুরা রেল ইয়ার্ডে ছাঁট লোহা তোলার ব্যবসা করতেন। তাঁর সঙ্গে রামবাবুর যোগাযোগ ছিল। সেই সূত্রে রামবাবুর সঙ্গে শঙ্করের পরিচয়। বছর পনেরো আগে বাবার মৃত্যুর পর ব্যবসা সামলাতে শুরু করে শঙ্কর। রামবাবুর সঙ্গে তার সম্পর্ক আরও মজবুত হয়। কুমোরপাড়া এলাকায় নিজেকে ‘রামবাবুর ভাগ্নে’ বলেও পরিচয় দিত শঙ্কর।

মেদিনীপুর আদালতে ধৃত শঙ্কর রাও। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

এ সব কয়েক বছর আগের কথা। তখনও শহর শঙ্করের নাম সে ভাবে জানে না। তার পরে পুলিশের খাতায় কিছু ছোটখাটো তোলাবাজি, হুমকি, দাদাগিরি, গোলমালের অভিযোগ জমা পড়লেও খুনের অভিযোগ এই প্রথম এল শঙ্করের নামে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ জানিয়েছেন, শ্রীনু খুনের দিন শালিমারে বসে পুরো ‘অপারেশন’ দেখভাল করেছে শঙ্কর। কে কোথায় থাকবে ঠিক করেছে। ধৃতেরা সে কথা স্বীকারও করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খুনের মামলায় রামবাবু জেলে থাকাকালীন শহরে তার ‘সাম্রাজ্য’ দখল করে শ্রীনু। তখন শ্রীনুর সঙ্গে শঙ্কর সম্পর্ক তৈরি করতে চেয়েছিল। কিন্তু রামবাবু জামিন পাওয়ার পরে শ্রীনুর সঙ্গে শঙ্করের দূরত্ব তৈরি হয়। শ্রীনুর সাম্রাজ্য বাড়াতে থাকায় রামবাবুর সঙ্গে তার বিরোধ শুরু হয়। শঙ্করও শ্রীনুর বিরোধিতা শুরু করে। কুমোরপাড়া এলাকায় দীপঙ্কর শুক্ল নামে এক যুবকের সঙ্গে শ্রীনুর যোগাযোগ ছিল। ২০১৪ সাল থেকে কুমোরপাড়া এলাকা দখলের লড়াই বাধে দীপঙ্কর ও শঙ্করের মধ্যে। ওই বছর ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে দীপঙ্কর গুলিবিদ্ধ হয়। নাম জড়ায় শঙ্করের। ২০১৫ সালের ২০ মার্চ কুমোরপাড়া এলাকায় বোমাবাজিতে জখম হয় শঙ্কর। ঘটনায় দীপঙ্করের ছেলেরা যুক্ত বলে অভিযোগ ওঠে। শঙ্করের মা জে উমা রাও থানায় শ্রীনু, দীপঙ্কর-সহ ৬ জনের নামে মামলা রুজু করেন। শ্রীনু গ্রেফতার হয়।

এর পর থেকেই শ্রীনুর সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে নামে শঙ্কর। এলাকায় না থেকেও নতুন দল গড়ে সে শ্রীনুকে জব্দ করার চেষ্টা করছিল। গোলমাল থেকে দূরে থাকার জন্য রামবাবুরও এর মধ্যে শঙ্করের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ায়। শেয পর্যন্ত শঙ্কর তার লক্ষ্যে ‘সফল’ হল বলে মনে করছেন তদন্তকারীদের একাংশ।

এ দিন কুমোরপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, শঙ্করের বাড়িতে তালা। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘শঙ্করের মাথায় কী ভূত চেপেছিল যে শ্রীনুর সঙ্গে লড়াইয়ে নেমেছিল! এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েও ও যে এমনটা করবে ভাবতে পারছি না।” পাশে দাঁড়ানো আর এক বাসিন্দার ভয়, “এ বার বোধহয় শঙ্কর-জামানা শুরু হল। এই পাড়ায় থাকতে পারব কিনা কে জানে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Srinu Naidu Panic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE