ধার করে কোনও সরকার চলে না। আর্থিক বিশৃঙ্খলায় বিগত বাম জমানার সঙ্গে তৃণমূল আমলের কোনও তফাতও নেই। কলকাতায় এসে সম্প্রতি এমন মন্তব্য করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তথ্য-পরিসংখ্যান হাতে এ বার জেটলির ওই মত খণ্ডনের চেষ্টায় নামলেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত।
অসীমবাবুর যুক্তি, কেন্দ্রীয় কিছু নীতির কারণেই রাজ্যগুলির ঋণের বোঝা বেড়ে যায়। এই ধরনের ঋণ সব রাজ্যেরই আছে। আর বাধ্যতামূলক ঋণের বাইরেও নিজেদের খরচ চালানোর জন্য বাজার থেকে টাকা ধার করার খতিয়ানকে বিচার্য ধরলে বাম জমানাকে অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছে তৃণমূলের রাজত্ব। এমনকী, তারা এই ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ এখন দেশের মধ্যে এক নম্বর বলেও অসীমবাবুর দাবি।
প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর এই বক্তব্য নিয়ে বর্তমান অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের মতামত চেষ্টা করেও জানা যায়নি। তবে তার আগে মঙ্গলবার অমিতবাবুও সরব হয়েছেন জেটলির সমালোচনার বিরুদ্ধে। রাজ্যের শিল্পায়ন নিয়ে জেটলি যা বলেছিলেন, সে দিনই তার পাল্টা দিয়েছিলেন অমিতবাবু। আর এ দিন তাঁর দাবি, গত কয়েক বছরে আর্থিক ব্যবস্থাপনার দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ দেশের মধ্যে অন্যতম সেরা রাজ্য। অর্থমন্ত্রীর কথায়, “যদিও জেটলি তৃণমূল সরকারের কড়া সমালোচনা করে বলেছেন বাম জমানার আর্থিক বিশৃঙ্খলাই অব্যাহত রয়েছে, বাস্তব কিন্তু ঠিক তার বিপরীত!”
বর্তমান অর্থমন্ত্রীর দাবি, ঋণের সঙ্গে রাজ্যের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের অনুপাত ক্রমশ কমছে। বাড়ছে মাথাপিছু ব্যয়ের পরিমাণ। এ সব রাজ্যের আর্থিক স্বাস্থ্য ভাল হওয়ারই ইঙ্গিত। আর্থিক শৃঙ্খলা এনে তাঁরা ভাল ফল পেয়েছেন এবং রাজস্ব বৃদ্ধি হয়েছে বলেও অমিতবাবু দাবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “শুধু ২০১৩-১৪ সালেই আমাদের রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে ৩৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা। দেশের অর্থমন্ত্রী হিসেবে জেটলির এই সব তথ্য জানা উচিত!”
আলিমুদ্দিনে বসে এ দিন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীমবাবুও বলেছেন, “জেটলি একটু বিচার-বিশ্লেষণ করে মন্তব্য করলে ভাল করতেন! তা হলে এই বিভ্রান্তি তৈরি হতো না!” অমিতবাবুর মতো তাঁর পূর্বসূরি অবশ্য রাজ্যের রাজস্ব বৃদ্ধি বা তৃণমূল জমানার আর্থিক শৃঙ্খলা নিয়ে কোনও দাবি করতে যাননি। তাঁর তথ্য, ভারত সরকারেরই এই মুহূর্তে ৩৯ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। তা হলে ধার করে সরকার চলে না, এটা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী কাকে বলছেন! আগামী ২০১৪-১৫ আর্থিক বছর শেষে পশ্চিমবঙ্গের ঋণের পরিমাণ যেমন দু’লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা ছুঁতে পারে, তেমনই কেন্দ্রীয় সরকারের ঋণও ৪৬ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়াবে বলে অসীমবাবুর হিসেব।
প্রায় দেড় দশক ধরে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা অসীমবাবু জানিয়েছেন, স্বল্প সঞ্চয়ে যে রাজ্য যত এগোয়, তার উপরে আনুপাতিক হারে বাধ্যতামূলক ঋণও তত বাড়ে। পশ্চিমবঙ্গ অনেক বছর ধরেই স্বল্প সঞ্চয়ে এক নম্বরে ছিল। প্রভিডেন্ট ফান্ডের তহবিল এবং অর্থবর্ষের শেষ দিকে আসা কেন্দ্রীয় অর্থ নানা তহবিলে জমিয়ে রাখার ভিত্তিতেও রাজ্যের খাতায় ঋণের হিসেব বেড়ে যায়। এ সবের জন্যই কেন্দ্রের নীতি দায়ী বলে অসীমবাবুর যুক্তি। তাঁর কথায়, ‘‘জেটলির দল ইতিপূর্বে কেন্দ্রে সরকার চালিয়েছে। কংগ্রেস বা এখানকার তৃণমূলও নানা সময়ে কেন্দ্রে সরকারে ছিল। তাদের ভূমিকা কী?” এই সঙ্গেই প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর পরিসংখ্যান, “বাম সরকারের শেষ অর্থবর্ষে ১২ হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও আমরা নিয়েছিলাম ৯ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। আর ক্ষমতায় আসার দশ মাসের মধ্যেই তৃণমূল সরকার বাজার থেকে ঋণ নিয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা!” বাজার থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ এখন ৬৭ হাজার কোটি টাকা বলে অসীমবাবু জানিয়েছেন। যা আসলে রাজ্যের আর্থিক বিশৃঙ্খলাই চিহ্নিত করে বলে অর্থনৈতিক মহলের একাংশের মত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy