Advertisement
০৩ মে ২০২৪

সংঘর্ষ সেনা গড়ে পরিবর্তনের ডাক

লক্ষ্যে পৌঁছতে প্রধান হাতিয়ার সারদাই। সেই হাতিয়ার ব্যবহার করে লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য রাজ্য বিজেপি-কে কিছু সাংগঠনিক দাওয়াই-ও বাতলে দিয়ে গেলেন অমিত শাহ। বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আগেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের সামনে এখন ‘মিশন ২০১৬’। সেই লক্ষ্যে পৌঁছনোর রাস্তাই কলকাতা সফরে স্পষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি।

বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ রবিবার সকালে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে পুজো দিলেন। পরে অমিত ফেসবুকে লেখেন, “শ্রীরামকৃষ্ণের পথে দক্ষিণেশ্বরে এসে মা মহাকালীর সাধনায় অভূতপূর্ব শক্তি পেলাম। মঙ্গলময়ীর কাছে প্রার্থনা, বঙ্গ সহ সম্পূর্ণ ভারতের মঙ্গল করুন। বঙ্গবাসীর চিন্তা-চেতনা-চৈতন্য পুনঃজাগ্রত হোক।” তাঁর কাছে মন্দিরের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য কেন্দ্রীয় সহযোগিতার আবেদন জানান অছি পরিষদের পক্ষে কুশল চৌধুরী। অমিত বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার আশ্বাস দেন। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ রবিবার সকালে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে পুজো দিলেন। পরে অমিত ফেসবুকে লেখেন, “শ্রীরামকৃষ্ণের পথে দক্ষিণেশ্বরে এসে মা মহাকালীর সাধনায় অভূতপূর্ব শক্তি পেলাম। মঙ্গলময়ীর কাছে প্রার্থনা, বঙ্গ সহ সম্পূর্ণ ভারতের মঙ্গল করুন। বঙ্গবাসীর চিন্তা-চেতনা-চৈতন্য পুনঃজাগ্রত হোক।” তাঁর কাছে মন্দিরের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য কেন্দ্রীয় সহযোগিতার আবেদন জানান অছি পরিষদের পক্ষে কুশল চৌধুরী। অমিত বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার আশ্বাস দেন। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

রোশনী মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৪১
Share: Save:

লক্ষ্যে পৌঁছতে প্রধান হাতিয়ার সারদাই। সেই হাতিয়ার ব্যবহার করে লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য রাজ্য বিজেপি-কে কিছু সাংগঠনিক দাওয়াই-ও বাতলে দিয়ে গেলেন অমিত শাহ।

বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আগেই বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের সামনে এখন ‘মিশন ২০১৬’। সেই লক্ষ্যে পৌঁছনোর রাস্তাই কলকাতা সফরে স্পষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি। শনিবার রাতে দলের রাজ্য পদাধিকারীদের সঙ্গে এবং রবিবার রাজ্য কমিটির বৈঠকে নরেন্দ্র মোদীর সেনাপতি বার্তা দিয়েছেন, সারদা কেলেঙ্কারি নামক সুবর্ণ সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখল করতেই হবে। তার জন্য সংগঠনকে হতে হবে আন্দোলনমুখী। অমিতের ভাষায়, দলীয় কর্মীদের হতে হবে ‘সংঘর্ষ সেনা’। প্রয়োজনে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

দক্ষিণেশ্বর ঘুরে এবং রেড রোডে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে এ দিন দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে যোগ দেন অমিত। বিজেপি সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে অমিত বলেন, আন্দোলন-সংগ্রামই (হিন্দিতে ‘সংঘষর্’) তাঁর জীবন। তিনি জানেন কেমন করে ‘সংঘর্ষ’ করে তাকে ভোটের সাফল্যে পরিণত করতে হয়। রাজ্য বিজেপি-র কর্মীদেরও সারদা কেলেঙ্কারির প্রতিবাদে বুথ স্তর থেকে রাজ্য স্তর পর্যন্ত ‘সংঘর্ষ’ করতে হবে। তার জন্য গড়ে তুলতে হবে ‘বুথ রক্ষা বাহিনী’। বুথ স্তরে কমিটিতে রাখতে হবে রক্ত দিতে প্রস্তুত কর্মীদের। অমিতের নির্দেশ সারদা কেলেঙ্কারির প্রতিবাদে দেওয়াল লিখন, পথসভা, মিছিল শুরু করতে হবে সোমবার থেকেই। এক কোটি স্বাক্ষর সংগ্রহ করতে হবে। শাসক দলের কাছে পুলিশের নতিস্বীকার, সার্বিক আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং নারী নিগ্রহের প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে থানা ঘেরাও করতে হবে। পাশাপাশি, পাড়ায় পাড়ায় সাড়ম্বরে শিবির করে বিজেপি-র সদস্যকরণ অভিযান চালাতে হবে। রাজ্যের কলেজগুলিতে শিবির করে বিজেপি-র সদস্য সংগ্রহ করার দায়িত্ব অমিত দিয়েছেন দলের যুব মোর্চাকে। দলের কর্মীদের চাঙ্গা করতে মোদীর সেনাপতির আশ্বাস, তাঁরা লড়াইয়ের দায়িত্ব পালন করলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও সর্বতো ভাবে তাঁদের পাশে থাকবেন। অমিতের নির্দেশ পেয়ে দলীয় নেতৃত্ব আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থানা ঘেরাও কর্মসূচি পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পাশাপাশি, দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ, কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা এ রাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ এবং দার্জিলিঙের সাংসদ সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে নিয়ে একটি কমিটি তৈরি হয়েছে। সেই কমিটির নীচে থাকবে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি। তার কাজ হবে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করা। ওই পাঁচ সদস্যের কমিটিতে থাকছেন রাজ্য বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায়, যুব মোর্চার সভাপতি অমিতাভ রায়, দেবশ্রী চৌধুরী, উৎপল জালান এবং সমীর পাল। আন্দোলনের প্রাথমিক কর্মসূচি ঠিক করার পরে রাজ্য সভাপতি রাহুলবাবু বৈঠকে বলেছেন, পুজোর পর থেকে রাস্তাই হবে বিজেপি-র ঠিকানা।

রাজ্য কমিটির বৈঠকের পরে চৌরঙ্গি বিধানসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী রীতেশ তিওয়ারির সমর্থনে বৌবাজারের সভায় উপনির্বাচন থেকেই রাজ্যে পরিবর্তনের সুত্রপাত ঘটানোর ডাক দিয়েছেন অমিত। তিনি বলেছেন, “লোকসভা ভোটে এ রাজ্য দু’জন সাংসদ এবং ১৭% ভোট দিয়েছে বলে দেশে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তন আচমকা হয় না। ধীরে ধীরে হয়। তার জন্য পরিশ্রম করতে হয়। এ বার পশ্চিমবঙ্গেও সেই পরিবর্তন করতে হবে।”

অমিতের বক্তব্য, জন-ধন যোজনা, কালো টাকা ফেরানোর উদ্যোগ-সহ প্রথম ১০০ দিনে কেন্দ্রীয় সরকারের নেওয়া নানা কর্মসূচির কথা বলে পশ্চিমবঙ্গকেও উন্নয়নের পথে সামিল করতে হবে। তাঁর দাবি, শিল্প, নারী সুরক্ষা, আইনশৃঙ্খলা-সহ নানা প্রশ্নে বিজেপি-শাসিত গুজরাত এগিয়ে আছে। আর শিক্ষা, সাহিত্যে অগ্রণী বাংলা ৩৪ বছরের কমিউনিস্ট শাসনে ‘কাঙাল’ হয়েছে। তাই মানুষ সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম আন্দোলনে বামেদের সরিয়ে শাসন ভার তুলে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। কিন্তু এখন রাজ্যবাসী বুঝতে পারছেন, সিপিএম-তৃণমূলের ফারাক নেই!

অমিতের কথায়, “কীসের পরিবর্তন হয়েছে? যুবকরা বেকার ঘুরছেন। কারখানা বন্ধই আছে। মহিলারা সুরক্ষিত হননি। বাংলার গর্ব উদ্ধার হয়নি।” অমিতের ব্যাখ্যা, “রাজনীতির স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন। বুঝতে পারছেন না, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের জন্য এখানকার গরিব মরবে!”

তৃণমূল তো বটেই, কংগ্রেস এবং সিপিএম-ও অবশ্য অমিতকে জবাব ফিরিয়ে দিয়েছে। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “শুধু মুখে সংগ্রাম বললেই হবে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংগ্রামের ইতিহাস উনি জানেন?” দলীয় বৈঠকে অমিত কী বলেছেন, তা তাঁরা জেনেছেন দাবি করে পার্থবাবুর আরও হুঁশিয়ারি, “বাংলায় আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করবেন না! বাংলার মানুষ এ সব মেনে নেবেন না।” বৌবাজারে একই জায়গায় সভা করে দলের তরুণ সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়ে আজ, সোমবার আরও জবাব দেওয়া হবে তৃণমূলের তরফে।

বিজেপি-র সভাপতিকে নিশানা করে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন শিলিগুড়িতে বলেছেন, “অমিত শাহ নিজে লোকসভা নির্বাচনের আগে ও পরে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক ও সন্ত্রাসবাদী ক্লাস নিচ্ছেন! তৃণমূলের বিকল্প কখনওই বিজেপি নয়। বিজেপি-র হাত ধরলে সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাসবাদকে নেমন্তন্ন করা হবে!” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহম্মদ সেলিমেরও কটাক্ষ, “নন্দীগ্রামের সময় লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজ, রাজনাথ সিংহেরা এসে তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে গলা মিলিয়েছিলেন। তাঁরা জানতেন, বামেদের সরাতে পারলে তাঁদেরও সুবিধা হয়। তৃণমূল নেত্রীর পরিবর্তনের ডাকে বিজেপি নেতাদেরও সায় এবং দায়িত্ব ছিল।” আবার বিজেপি-র ‘বিভাজনের রাজনীতি’ এ রাজ্যে ফল দেবে না বলে মন্তব্য করে কংগ্রেসের তরফে মানস ভুঁইয়া এ দিন বলেছেন, “আমাদের দলের কর্মীদের বলব, যে যেখানে আছেন, এই বীভৎসতার রাজনীতির বিরুদ্ধে রাস্তায় নামুন। আর বিজেপি-কে যে সব দল অতীতে সহযোগিতা করেছিল, তাদেরও পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে!”

অমিত অবশ্য দাবি করছেন, সুশাসন বিজেপি-ই দিতে পারবে। তৃণমূল নেত্রীর উদ্দেশে তাঁর হুঁশিয়ারি, “আপনি রাস্তা না ছাড়লেও চিন্তা নেই। ২০১৬ সালে বাংলার চৌরঙ্গি কেন্দ্রে অমিতের প্রচারসভা হলেও ভিড় বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বাসে করে নানা জেলা থেকে কর্মীদের এনেছিল বিজেপি। তবে দলের রাজ্য নেতা তথা বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রে বিজেপি-র প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য নিজের লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে শহরমুখো হননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

amit shah roshni mukhopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE