Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
State News

নির্বাচনী প্রক্রিয়া স্থগিত হাইকোর্টে, পঞ্চায়েত ভোট কি পিছিয়ে যাবে?

বৃহস্পতিবার দুপুরে হাইকোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের বেঞ্চে মনোনয়ন সংক্রান্ত মামলার শুনানি শুরু হয়। পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আদালতের স্থগিতাদেশের ফলে আগামী ১৬ এপ্রিল, সোমবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে স্ক্রুটিনি–সহ মনোনয়ন প্রত্যাহার করার প্রক্রিয়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৮ ১৩:২৭
Share: Save:

পঞ্চায়েত নির্বাচনের সমস্ত প্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ জারি করল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালত জানিয়েছে, আগামী ১৬ এপ্রিল সোমবার পরবর্তী শুনানির আগে পর্যন্ত তা স্থগিত থাকবে। পাশাপাশি, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে সম্পূর্ণ রিপোর্ট চেয়ে পাঠাল আদালত। সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখেই আদালত পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। ফলে আগামী ১, ৩ এবং ৫ মে রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন জমার মেয়াদ বাড়ানো এবং ফের তা খারিজ করা সংক্রান্ত রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দু’টি নোটিসের প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছিল বিজেপি। সেই মামলার শুনানিতে বুধবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছিল, এ বিষয়ে যা বলার হাইকোর্টই বলবে। আর হাইকোর্টে ওই দিন মামলাকারীদের কোনও প্রতিনিধি না থাকায় শুনানি এক দিন পিছিয়ে দেয় আদালত।

বৃহস্পতিবার দুপুরে হাইকোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের বেঞ্চে মনোনয়ন সংক্রান্ত মামলার শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে আদালত জানিয়ে দেয়, আগামী ১৬ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির আগে পর্যন্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সমস্ত প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে। আদালত আরও জানায়, জনগণের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে ওই মামলা খারিজ করা হয়নি। পাশাপাশি, একই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলার কথা হাইকোর্টের কাছে গোপন করায় মামলাকারীকে (বিজেপি) ভর্ৎসনা করেছে হাইকোর্ট। মামলাকারীকে ৫ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ওই জরিমানা জমা করতে হবে। ফলে, আপাতত ভোটভাগ্য ঝুলে থাকল কমিশনের রিপোর্টের উপর। জানা গিয়েছে, এ দিনের রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করতে পারে।

আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে কোনও অশান্তিই হয়নি! দাবি মমতার

আদালতের এ দিনের নির্দেশের পর পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরেই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আইনজীবী অরুণাভ ঘোষের মন্তব্য, “হাইকোর্টের এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করতে পারে। সেখানে যদি এই নির্দেশ খারিজ হয়ে যায়, তা হলে নির্বাচনী প্রক্রিয়া যেমন চলছিল, তেমনই চলবে। কিন্তু, যদি তা না হয়, সে ক্ষেত্রে কিন্তু আগামী ১, ৩ এবং ৫ মে ভোটগ্রহণ অনিশ্চিত।”

হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে বিরোধীরাও। এ দিনের রায়কে বাংলার মানুষের জয় বলে আখ্যা দিয়েছেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। তিনি বলেন, “আজকের এই রায়, বাংলার মানুষের জয়। এই রায়ে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল বিজেপি। তাই আজকের এই জয় আমরা মানুষের উদ্দেশে উৎসর্গ করলাম।”

এ দিনের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর মন্তব্য, “হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত। এত দিন আমরা যে অভিযোগ করছিলাম তা প্রমাণিত হল। রাজ্য সরকারের যে ভাবে কমিশনকে ভয় দেখিয়ে ব্যবহার করছে, তা অনুমোদন করেনি হাইকোর্ট। তবে সরকার নিশ্চয়ই ডিভিশন বেঞ্চ বা সুপ্রিম কোর্টে যাবে। তাই লড়াই শিথিল করার কোনও প্রশ্নই নেই।” এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “আদালতকে কুর্নিশ জানাই। প্রশাসন এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন যখন আমাদের বক্তব্য শুনতে চাইছে না, তখন আদালত অন্তত আমাদের যন্ত্রণার কথা শুনেছে।”

পঞ্চায়েত নির্বাচন শুরুর আগেই শাসক-বিরোধীর লড়াই শুরু হয়ে গিয়েছিল আদালতে। বিরোধী দলগুলি কলকাতা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। নির্বাচনী বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। নির্বাচনের মনোনয়ন ঘিরে যাবতীয় বিতর্ক মেটানোর জন্য হাইকোর্টে যাওয়ার উপদেশ সর্বোচ্চ আদালতের। পাশাপাশি, মনোনয়নের দিন বাড়ানো নিয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তের উপরেও স্থগিতাদেশের প্রত্যাহার চেয়ে মামলা করেছেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার সেই দু’টি মামলারই শুনানি হয় কলকাতা হাইকোর্টে।

আরও পড়ুন: তৃণমূলের ‘প্রভুত্বে’ সুর বদল পরিবর্তনপন্থীদের

মনোনয়ন পর্ব শুরুর পর থেকেই রাজ্য জুড়ে শাসক দলের সন্ত্রাসের অভিযোগে সরব হয়েছে বিরোধীরা। উত্তর থেকে দক্ষিণ— রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেই বাম-বিজেপি-কংগ্রেস প্রার্থীদের মনোনয়ন পেশ করতে বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছে বলে দাবি তাদের। বুধবার সুপ্রিম কোর্টেও সে বিষয়ে বিভিন্ন তথ্যাদি তুলে ধরেছিল বিজেপি। পাশাপাশি, রাজ্য নির্বাচন কমিশন যে ভাবে প্রথমে মনোনয়ন পেশ করার সময়সীমা বাড়িয়ে ১২ ঘণ্টার মধ্যেই তা প্রত্যাহার করে তা-ও আদালতে জানানো হয়েছিল। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের পরোক্ষ চাপের অভিযোগ ছিল বিজেপি-র। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আর কে অগ্রবাল এবং বিচারপতি অভয় মনোহর সাপ্রের বেঞ্চ জানিয়েছিল, এ বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালত হস্তক্ষেপ করবে না। বরং যাবতীয় বিতর্ক মেটাতে হাইকোর্টেই যেতে হবে বিরোধীদের।

গত কাল সুপ্রিম কোর্টে বামেদের পাশাপাশি বিজেপি-র ওই মামলার শুনানি হয়েছিল। বাম দলগুলির তরফে আবেদন করা হয়, মনোনয়ন নিয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত পঞ্চায়েত নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হোক। পাশাপাশি, রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ করে বিজেপি। তবে, সুপ্রিম কোর্ট দু’পক্ষকেই জানিয়েছে, কলকাতা হাইকোর্টই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE