ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি চালাতে এ বার রাজ্যগুলিকে জড়িয়ে নিল মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বৃহস্পতিবার জানান, বিএসএফ-সহ কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির সঙ্গে রাজ্যের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলতে ‘বর্ডার প্রোটেকশন গ্রিড’ বা ‘বিপিজি’ গঠন করা হবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে এ দেশের পাঁচ রাজ্যের সীমান্ত রয়েছে। পাহারায় বিএসএফ থাকলেও অবাধে ঢুকে পড়ছে ও পারের মানুষ, গরু। চোরাচালান, জাল নোটের আনাগোনা প্রায় নিত্য ঘটনা। কী করে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করতে এ দিন নবান্নে বৈঠক করেন রাজনাথ। সেখানে ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব গওবা-সহ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী এবং বিএসএফের ডিজি। ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনওয়াল এবং মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালথানওয়ালা। ত্রিপুরা এবং মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী আসেননি। ছিলেন মেঘালয়ের মুখ্যসচিব এবং ত্রিপুরার স্বরাষ্ট্রসচিব।
বৈঠকের পর সাংবাদিক বৈঠকে রাজনাথ বিপিজি গঠনের কথা জানান। তিনি বলেন, বিপিজি-র কাজকর্ম ঠিকমতো হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য রাজ্যস্তরে স্ট্যান্ডিং কমিটি তৈরি করা হবে। সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যসচিবকে মাথায় রেখে কমিটি হবে। তাতে থাকবেন রাজ্য ও কেন্দ্রের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনীর প্রতিনিধিরা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায়, ‘‘সীমান্তে নিরাপত্তায় যাতে ফাঁক না থাকে, সে জন্য রাজ্যগুলির সঙ্গে সমন্বয় গড়ে তুলতেই বর্ডার প্রোটেকশন গ্রিড তৈরি করা হচ্ছে।’’ যদিও ঠিক কী ভাবে বিপিজি কাজ করবে, সেটা এখনই স্পষ্ট হয়নি।
নবান্নের খবর, সীমান্তে চোরাচালান-সহ জঙ্গি কার্যকলাপ বৃদ্ধির জন্য কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকেই দোষারোপ করে বিভিন্ন রাজ্য। এ দিন বৈঠকেও চোরাচালান নিয়ে বিএসএফ এবং অন্য রাজ্যগুলিকে দায়ী করে পশ্চিমবঙ্গ। এই পারস্পরিক দোষারোপ কাটিয়ে উঠে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে রাজ্যগুলির সমন্বয় তৈরির জন্যই বিপিজি গঠনের ভাবনা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করছে, কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে সমন্বয় হলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির অন্দরে অপরাধ ও জঙ্গি কার্যকলাপ সম্পর্কিত গোয়েন্দা তথ্য আদানপ্রদানে সুবিধা হবে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘অনুপ্রবেশকারী ফেরাতে অনেক কাঠখ়ড় পোড়াতে হয়। তাই দেশে ঢোকার আগেই তা প্রতিহত করা দরকার। তার জন্য রাজ্যের যা দাবি, কেন্দ্র তা সরবরাহ করতে প্রস্তুত।’’ এ প্রসঙ্গে সীমান্তের সব জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া ও আউটপোস্ট তৈরি করতে না-পারার প্রসঙ্গও ওঠে।
রাজনাথ জানান, পাঁচ রাজ্যের সঙ্গে সীমান্তের দৈর্ঘ্য ৪০৯৬ কিলোমিটার। তার মধ্যে ৩০০৬ কিলোমিটারে কাঁটাতার রয়েছে। বাকি ১০৯০ কিলোমিটারের মধ্যে ৪০৬ কিলোমিটারের ভৌগোলিক অবস্থান এতই প্রতিকূল যে সেখানে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া সম্ভব নয়। তাই ওই অংশে নজরদারির জন্য প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হবে।
সীমান্ত নিরাপত্তায় পরিকাঠামো গড়ার ক্ষেত্রে জমি যে একটা সমস্যা, বৈঠকে সে প্রসঙ্গও ওঠে। রাজনাথ তখন সব মুখ্যমন্ত্রীকে দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে আন্তরিকতা নিয়ে বিষয়টি দেখার অনুরোধ করেন। এ রাজ্যে কিছু সীমান্ত-চৌকি তৈরিতে জমি সমস্যা হচ্ছে বলে রাজনাথকে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে তিনি জানান, প্রতিটি রাজ্য এ বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছে। নবান্ন সূত্রে খবর, বৈঠকে মমতা জানান, চৌকি তৈরির জন্য গ্রামবাসীদের থেকে জোর করে জমি নেওয়ার পক্ষপাতী নয় রাজ্য। গ্রামবাসীদের বুঝিয়েই জমি নেওয়া হবে। পরে সাংবাদিকদের রাজনাথ বলেন, ‘‘রাজ্যের সমস্যা আমরা শুনেছি। তারা আমাদের প্রয়োজন সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল। তারা পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।’’
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের সিংহভাগই পশ্চিমবঙ্গে। সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিষয়টি ইতিবাচক ভাবে ভাবনাচিন্তার আশ্বাস দেন রাজনাথ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy