জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে পাওয়া বাসের যাত্রা সূচনা করলেন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক।
কেন্দ্র কেন নানা প্রকল্পের টাকা দিচ্ছে না, ক্রমাগত সেই প্রশ্ন তুলে শনিবার বর্ধমানে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে চাপে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর সংসদ এলাকায় কেন্দ্রীয় প্রকল্পে পাওয়া বাস চালুর অনুষ্ঠানে কিন্তু ডাকা হল না কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকেই!
রবিবার আসানসোলে পতাকা উড়িয়ে যে পাঁচটি বাসের যাত্রা শুরু করলেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী তথা স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক মলয় ঘটক, সেগুলি এসেছে বাবুলেরই মন্ত্রক থেকে। কিন্তু এ দিন এলাকায় থাকা সত্ত্বেও ডাকা হয়নি আসানসোলের বিজেপি সাংসদকে। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ বাবুল বুঝিয়ে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় সৌহার্দ কখনও এক তরফা (এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রের তরফে) হয় না। বাবুলের মন্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে সারা দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেরও উন্নতি করতে চেয়েছি। সে জন্যই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একটা সাক্ষাৎ চেয়েছিলাম। কিন্তু, এক সঙ্গে কাজ করার কথা মুখে বললেই হয় না, করে দেখাতে হয়।’’
অথচ মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সেই সাক্ষাৎ-পর্ব এবং সেখানে ভেলপুরি-ঝালমুড়ি খেয়ে দলের মধ্যেই প্রশ্নের মুখে পড়েছেন বাবুল। রবিবারের ঘটনার নিন্দা করতে গিয়ে তাই সেই ঝালমুড়িকেই টেনে এনেছেন তিনি। বাবুল বলেন, ‘‘ঝালমুড়ি খেয়েছি বলে আমার ঝাল কমে গিয়েছে, এটা ভাবার কোনও কারণ নেই। আমি রাজনৈতিক নোংরামি পছন্দ করি না।’’
রবিবার আসানসোলে বাবুল সুপ্রিয়।
জেএনএনইউআরএম প্রকল্প থেকে পাওয়া বাসগুলি আসানসোলে মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে চালাবে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা (এসবিএসটিসি)। এ দিন আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসগুলির যাত্রা শুরুর অনুষ্ঠানে রাজ্যের মন্ত্রী মলয়বাবু অবশ্য গোটা কৃতিত্ব রাজ্য সরকারের বলে দাবি করেছেন! তিনি বলেন, ‘‘এই বাস রাস্তায় নামানোর জন্য রাজ্য সরকারকেও টাকা খরচ করতে হয়েছে। আমরা চার বছর আগে এর দাবি তুলেছি ও প্রক্রিয়া শুরু করেছি। ইউপিএ সরকার তা অনুমোদন করে গিয়েছে। উনি (বাবুল) তো সাংসদ হয়েছে এক বছর।’’
বাবুল জানান, এই বাস নামাতে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডুকে অনুরোধ করেন তিনিই। সেই মতো আসানসোলের জন্য ৬০টি বাস বরাদ্দ হয়। কোন রুটে বাসগুলি চলবে তা এসবিএসটিসি কর্তৃপক্ষ ও জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি ঠিক করেছেন বলে বাবুলের দাবি।
ইস্কোর আধুনিকীকরণ প্রকল্পের উদ্বোধনে যে দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বার্নপুরে এসেছিলেন, সে দিনই আসানসোলের কাল্লায় রাজ্য সরকারের এক অনুষ্ঠানে একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মমতা। তার মধ্যে এই বাস চালুর প্রকল্পও ছিল। এ নিয়ে স্থানীয় বিজেপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছিলই। বিজেপির আসানসোল জেলা সভাপতি নির্মল কর্মকারের কটাক্ষ, ‘‘ইউপিএ সরকারের আমলে একশো দিনের কাজকে নিজেদের প্রকল্প বলে চালাত তৃণমূলের সরকার। এখন কেন্দ্রের পাঠানো বাস চালুর সময়েও কৃতিত্ব দাবি করছে। এ আর নতুন কী!’’
শ্রমমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে সরব হয়েছেন বাবুলও। তিনি বলেন, ‘‘বাস উদ্বোধনের নামে সরকারি মঞ্চ থেকে এ ভাবে রাজনৈতিক কথাবার্তা বলা উচিত নয়। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যে ভাবে বিষোদ্গার করা হয়েছে তা ঠিক নয়।’’ এর ফলে শিল্পাঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি হতে পারে বলেও তাঁর দাবি।
তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে বাস কেনার টাকা একা কেন্দ্র দেয় না। রাজ্যও দেয়। এ নিয়ে এত হইচইয়ের কোনও মানে হয় না।’’ এই প্রকল্পে রাজ্যের অবদানের কথা মেনেছেন বাবুলও।
শনিবার বর্ধমান জেলা মনিটরিং ও ভিজিল্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে প্রথম বার বৈঠকে বসেই বাবুলকে শুনতে হয়েছে, কেন্দ্র টাকা না দেওয়ায় এই জেলায় বহু প্রকল্পের কাজ আটকে রয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট জায়গায় কথা বলার আশ্বাসও দিয়েছেন বাবুল। সরকারি কাজের সঙ্গে রাজনীতিকে গুলিয়ে না ফেলার বার্তা যিনি বারবার দিয়ে আসছেন, সেই বাবুলকে কেন এ দিনের অনুষ্ঠানে ডাকা হল না, তার কোনও সদুত্তর মেলেনি কোনও তরফেই।
এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি মলয়বাবু। বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, ‘‘বিষয়টি এসবিএসটিসি-র অধীন। ওরাই বলতে পারবে।’’ এসবিএসটিসি-র এমডি নবকুমার বর্মনের বক্তব্য, ‘‘এটা সরকারি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল না। উদ্বোধন তো মুখ্যমন্ত্রী করে গিয়েছেন।’’
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy