Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হেঁশেল ফেল? বেঁচে থাক রেস্তোরাঁ

কথায় বলে, ‘গুষ্টির ষষ্ঠীপুজো।’ হক কথা। ষষ্ঠী ঠাকুর তো গুষ্টিরই দেবী। গুষ্টি নিয়ে জামাই বাবাজি তাই চললেন শ্বশুরবাড়ি। কখনও নতুন বিয়ে হওয়া মেয়ে-জামাই, কখনও খানিক পুরনো মেয়ে-জামাই নাতিপুতি নিয়ে ঘরে আসছে। শ্বশুর ধড়ফড়িয়ে বাজারে ছুটছে, শাশুড়ি গ্যাসের চুলোর পাশে গলগল করে ঘামছেন। কিন্তু তাতেও কি সব সময়ে সামাল দেওয়া যায়? এমনিতে জামাইষষ্ঠী পড়েছে আজ রবিবার। ছুটির দিন। সক্কলের মেজাজ ফুরফুরে। বাঁশপাতা, বটপাতা, ১০৮টি দুর্বাঘাস, ধান ইত্যাদি উপাচার সহ ষষ্ঠীর ঘট সাজিয়ে শাশুড়িরা রেডি।

ছবি: বিশ্বনাথ মশান

ছবি: বিশ্বনাথ মশান

অর্পিতা মজুমদার
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৫ ০০:৩২
Share: Save:

কথায় বলে, ‘গুষ্টির ষষ্ঠীপুজো।’
হক কথা। ষষ্ঠী ঠাকুর তো গুষ্টিরই দেবী। গুষ্টি নিয়ে জামাই বাবাজি তাই চললেন শ্বশুরবাড়ি।
কখনও নতুন বিয়ে হওয়া মেয়ে-জামাই, কখনও খানিক পুরনো মেয়ে-জামাই নাতিপুতি নিয়ে ঘরে আসছে।
শ্বশুর ধড়ফড়িয়ে বাজারে ছুটছে, শাশুড়ি গ্যাসের চুলোর পাশে গলগল করে ঘামছেন। কিন্তু তাতেও কি সব সময়ে সামাল দেওয়া যায়?
এমনিতে জামাইষষ্ঠী পড়েছে আজ রবিবার। ছুটির দিন। সক্কলের মেজাজ ফুরফুরে। বাঁশপাতা, বটপাতা, ১০৮টি দুর্বাঘাস, ধান ইত্যাদি উপাচার সহ ষষ্ঠীর ঘট সাজিয়ে শাশুড়িরা রেডি। জামাইয়ের সামনে থালায় আম, জাম, লিচু, করমচা, কাঁঠাল সাজানো। নাগালে থাকলে শাশুড়ির হাতে তালপাতার পাখা। এ সব লোকচার মিটলে আসল পর্ব— দুপুরের ভোজ। নিয়ম করে শুক্তো, সোনামুগের ডাল, কয়েক রকম ভাজাভুজি দিয়ে শুরু করে ইলিশ, গলদা চিংড়ি, রুই-কাতলা, কচি পাঁঠার ঝোল। শেষ পাতে চাটনি, পায়েস, মন্ডা-মিঠাই। চাই কি পোলাও-ও থাকতে পারে।

সব শ্বশুর-শাশুড়ি অবশ্য এতটা পেরে ওঠেন না। কোনও শাশুড়ি নিজেই পেশা নিয়ে ব্যস্ত। এত আহ্লাদ করার সময় তাঁর নেই। তাঁর কর্তাটিও নিজের কাজ নিয়ে শশব্যস্ত। চুটিয়ে বাজার করার সময় তিনি পাবেন কী করে? ষষ্ঠী নয় রোববার পড়েছে, কিন্তু আগে থেকে কিছুটা বাজার করে না রাখলে এত আয়োজন কি করা সম্ভব? তাঁরা তাই হাত তুলে দিয়েছেন, কোনও ‘ঠিকঠাক জায়গায়’ মেয়ে-জামাইকে ভালমন্দ খাইয়ে দিতে পারলে তাঁরা বেঁচে যান।

ও দিকে আবার কিছু জামাই যুগের হাওয়ায় টপ-টু-বটম বিগড়ে বসে আছে। বাঙালি স্টাইল পোলাও-কালিয়া শুনলেই তারা বেঁকে বসছে। জামাইয়ের না কি দিবারাত্র চাইনিজ ছাড়া কিছুই মুখে রোচে না। আর চলতে পারে বড় জোর কন্টিনেন্টাল। কিন্তু তা বলে সেই ওল্ড বাঙালি স্টাইল মুরগি-মটন আর দই-মিষ্টি? ছোঃ! ও সব এখনও লোকে খায়?

সব জামাই-ই যে এ রকম চায়না না গিয়েও হাক্কা চেয়ে হায়না, তা অবশ্য নয়। তবে তাদের আবার অন্য রকম বায়না। যেমন শাশুড়িকে ফোন করে আব্দার— ‘‘রোজের মতো এ দিনও হাত পুড়িয়ে না রেঁধে চলুন না কোথাও খেয়ে আসি! না-হয় ট্রিট আপনারাই দেবেন!’’ শাশুড়ি তখন মনে-মনে ভাবছেন, ‘আমি বাপু এতই খারাপ রাঁধি যে বচ্ছরকার একটা দিনও মুখে তুলতে পারছ না! আবার সে কথা মুখ ফুটে বলতেও পারছ না।’

কিন্তু এ সব কথা কি জামাইকে বলা যায়? ও দিকে জামাইও নাছোড়। শাশুড়ি দোনামোনা করছে দেখে সে তখন ‘ট্রিট’ নিয়ে শ্বশুরকে ফিট করতে লেগে গিয়েছে। কে না জানে, রোজ-রোজ বউয়ের হাতের সুধা চেখে তাঁরই মুখ মেরে গিয়েছে। অতএব বাইরে খাওয়ার কথা উঠতেই তিনি ঘটঘট করে মাথা নেড়ে রাজি।

অগত্যা...!

কিন্তু ট্রিট যে হবে, তা হবে কোন চুলোয়? আছে তেমন জায়গা?

একটু শহর গোছের জায়গা হলে যে একেবারেই নেই, তেমনটা নয়। বরং হাওয়া বুঝে আগেই তোড়জোড় সেরে রেখেছে ভিন্ন রেস্তোঁরা। রান্নার ঝক্কি না রেখে সবাই মিলে চলে যাও রেস্তোঁরায়। তারাই পছন্দের মেনু দিয়ে জামাই বরণের ব্যবস্থা করে রেখেছে।

দুর্গাপুর শহরে যেমন এ রকম রেস্তোঁরা অগুনতি। তাদের চিরাচরিত মেনু। তবে কিছু রেস্তোঁরা জামাইষষ্ঠী উপলক্ষে বিশেষ মেনু করে। শহরের সিটি সেন্টারে পার্কের ঘেঁষা একটি রেস্তোঁরার কর্তা শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, তাঁদের কাছে ষোলো আনা বাঙালি মেনু মজুত। ‘ইস্পেশাল’ হচ্ছে চিতল মাছের মুইঠ্যা, ডাব চিংড়ি, বোনলেস ইলিশ ভাপা, তোপসে, পমফ্রেট, পার্সে মাছের নানা পদ। চিকেনের বিশেষ কোর্সও রয়েছে। সেই সঙ্গে মুগডালের পায়েস।

সিটি সেন্টারের ক্ষুদিরাম সরণির তারকা হোটেলের অন্যতম বাঙালি রেস্তোঁরার আয়োজনেও সাবেক ছাপ। আমের পানা দিয়ে শুরু। লাল শাক, বিভিন্ন ধরনের ভাজা, শুক্তো, মাছের মাথা দিয়ে মুগের ডাল, বিভিন্ন মাছের পদ, পাঁঠার মাংস। বিভিন্ন রেস্তোঁরা ঘুরে দেখা গেল, খাবার পরিবেশনে বাঙালিয়ানা বজায় রাখতে কোথাও কাঁসার থালা, কোথাও মাটির থালা, কোথাও কলাপাতার উপরে খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। মিউজিক সিস্টেমে বাংলা গানের সুর।

ডিএসপি টাউনশিপের প্রবীণা ইন্দুবালা বর্মণের কথায়, ‘‘৩০ বছর ধরে জামাইষষ্ঠী হচ্ছে বাড়িতে। এখন আর অত রান্না একা হাতে করতে পারি না। শহরে এখন একের পর এক সাজানো রেস্তোঁরা। সেখানেই খাওয়া-দাওয়া। শুধু ষষ্ঠী পুজোটা বাড়িতে নিয়ম মেনে করে নিই।’’

জামাইষষ্ঠী ইস্পেশ্যাল বলে এই একটা দিন রেস্তোরাঁতেও বাঙালি পদের ছড়াছড়ি। যদি সেই বাবুয়ানি কোনও জামাইয়ের মনে না ধরে, শহরের আনাচে-কানাচে চায়না-চাউ আর ইতালিয়ানো তো রইলই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE