গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।
সিপিএম থেকে বহিষ্কৃত সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলায় এক মহিলা চিকিৎসক এবং সাংসদের প্রেমিকাকে বৃহস্পতিবার দীর্ঘ ক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করল সিআইডি। অর্চনা মজুমদার নামে ওই মহিলা চিকিৎসক সদ্য তৃণমূলত্যাগী মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তাঁর বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারেননি তদন্তকারীরা। সোমবার আবার তাঁকে তলব করা হয়েছে।
এক দফা জেরা শেষ হতে না-হতেই ফের তলব কেন?
সিআইডি সূত্রের খবর, ওই মহিলা চিকিৎসকের বয়ানে বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। অনেক কিছুই তিনি আড়াল করতে চাইছেন। সেই জন্যই তাঁকে আবার তদন্তকারীদের মুখোমুখি হতে হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রশ্নের ঠিকঠাক জবাব দেওয়ার জন্য সে-দিন তিনি যেন তৈরি হয়ে আসেন।
সিআইডি কী ধরনের অসঙ্গতি পেয়েছে অর্চনাদেবীর কথায়?
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, মুকুলবাবুর সঙ্গে তাঁর কী সম্পর্ক? জবাবে অর্চনাদেবী প্রথমে বলেন, মুকুলবাবু তাঁর ‘জেঠতুতো দেওর’। পরে বলেন ‘পিসতুতো ভাই’। হতবাক হয়ে যান তদন্তকারীরা। কোনটা ঠিক, ভেবে উত্তর দিতে বলা হলে ওই মহিলা আর কিছুই বলতে চাননি।
এ দিন বিকেলে নিজাম প্যালেসে ওই চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিআইডি-র দুই মহিলা অফিসার। বিকেল ৪টে থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে চলে জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব। গোয়েন্দারা জানান, নম্রতা দত্ত নামে এক তরুণী বালুরঘাট থানায় ঋতব্রতের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার ভিত্তিতে গত ১১ অক্টোবর ওই সাংসদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা রুজু হয়। পরে তদন্তভার পায় সিআইডি। নম্রতা গোয়েন্দাদের কাছে অভিযোগ করেন, ১৫ অক্টোবর অর্চনাদেবী তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠিয়ে এবং মোবাইলে ফোন করে ঋতব্রতের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব অভিযোগ তুলে মিটমাট করে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সিআইডি-কে জানানোর সঙ্গে সঙ্গে এই নিয়ে বালুরঘাট থানাতেও জেনারেল ডায়েরি করেন নম্রতা। এই প্রেক্ষিতেই অর্চনাদেবীকে ডেকে পাঠায় সিআইডি।
গোয়েন্দারা জানান, অর্চনাদেবী তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন, মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নম্রতার উপরে তিনি কোন রকম চাপ সৃষ্টি করেননি। তিনি নিপীড়িত মহিলাদের নিয়ে কাজ করেন। সেই সুবাদে সামজিক দায়বদ্ধতা থেকেই তিনি ওই তরুণীকে বোঝাতে গিয়েছিলেন। তাতেই ভুল বুঝেছেন অভিযোগকারিণী।
তদন্তকারীরা প্রশ্ন করেন, তিনি কোথা থেকে নম্রতা নম্বর পেলেন? অর্চনাদেবী জানান, টিভি-তে নম্রতার খবর দেখাচ্ছিল। সেখান থেকেই তাঁর ফোন নম্বর পান তিনি। লাঞ্ছিত মেয়েদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আর ক’জন মহিলাকে তিনি এ ভাবে ফোন করেছেন? আর কোনও মহিলারই নাম বলতে পারেননি ওই চিকিৎসক। জেরা পর্বে তিনি প্রায় পাঁচ লিটার জল খান বলে সিআইডি-র খবর।
ভবানী ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই চিকিৎসক সিআইডি-র প্রথম দফার ডাকে সাড়া দেননি। সোমবার ফের মেল করে নোটিস পাঠিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, বৃহস্পতিবারেই সিআইডি আধিকারিকেরা তাঁকে জেরা করতে চান। নিজাম প্যালেসে তিনি গোয়েন্দাদের সঙ্গে দেখা করবেন বলে অর্চনাদেবী মেল করে জানান। তার পরেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সিআইডি-র তরফে এ দিন দুই মহিলা অফিসারকে পাঠানো হয়।
এ দিনই ভবানী ভবনে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে ঋতব্রতের প্রেমিকা দূর্বা সেনকে। ওই সাংসদ উত্তর ভারতে গা-ঢাকা দিয়ে আছেন বলে জেনেছে সিআইডি। তাদের দাবি, ঋতব্রত আত্মগোপন করেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিলেন ছিলেন দূর্বার সঙ্গে। সেই জন্যই দূর্বাকে বুধবারের পরে এ দিনও ডেকে পাঠানো হয়। প্রশ্নের জবাবে দূর্বা জানান, ২০১৬ থেকেই ঋতব্রতের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে চাইছিলেন নম্রতা। না-পেরে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy