চয়ন সরকার
আলিপুরদুয়ারের অপহৃত সাংবাদিক চয়ন সরকারের কোনও খোঁজ মিলল না সোমবার সারা দিনেও। রবিবার রাত সাড়ে আটটা থেকে তিনি নিখোঁজ। পরিস্থিতি দেখে নড়েচড়ে বসেছে নবান্নও। দুপুরেই ঘটনার সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিআইডি কর্তারা বিকেলের বিমানেই শিলিগুড়ি পৌঁছে আলিপুরদুয়ারে গিয়ে তদন্তে নামেন।
চয়নবাবুর অপহরণে অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূলই। কলেজে ছাত্র ভর্তি নিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের একাংশ আর্থিক দুর্নীতিতে অভিযুক্ত—এই মর্মে খবর করার জেরেই চয়নবাবুকে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর কাকা প্রবীণবাবু। ২৮ জুলাই চয়নবাবুর ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। অভিযোগের তির ছিল তৃণমূলের আলিপুরদুয়ারের যুব সভাপতি সমর ভট্টাচার্য ও তাঁর কয়েক জন অনুগামীর দিকে। সে দিনই চয়নবাবুর আলিপুরদুয়ারের বাড়িতে হামলা হয়। বাড়ির টিন বাঁকিয়ে দেওয়া হয়। পরিবারের এক মহিলার শ্লীলতাহানিও করা হয় বলে অভিযোগ। তা নিয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন চয়নবাবু। আলিপুরদুয়ার প্রেস ক্লাব প্রতিবাদে পথে নামে। এর পরে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা কিংবা সমর্থকেরা গ্রেফতার না হওয়ায় চয়নবাবু-সহ সংবাদমাধ্যমের অনেকেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন। লাগাতার পথসভা চলতে থাকে। রবিবার সকালে চয়নবাবু হুঁশিয়ারি দেন, অভিযুক্তরা গ্রেফতার না হলে তিনি অনশনে বসবেন। বিকেলে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের ৮ জন সমর্থক গ্রেফতার হন। কিন্তু, সমরবাবু গ্রেফতার হননি। সে দিন সলসলাবাড়িতে একটি পথসভায় যোগ দিয়ে ফেরার পথে রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ নিখোঁজ হন চয়নবাবু। ঘটনার পরে রাস্তার ধারে তাঁর বাইক মিলেছে। পাশে মানিব্যাগও পড়েছিল। কিন্তু, তাঁর দু’টি মোবাইলই বন্ধ।
ঘটনাচক্রে, এ দিন উত্তরবঙ্গে ছিলেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, রাহুল সিংহের মতো প্রথম সারির বিরোধী নেতারা। তাঁরা সকলেই চয়নবাবুর সন্ধান না-পাওয়ার জন্য রাজ্যকে তুলোধোনা করেন। ঘটনার প্রতিবাদে আজ, আলিপুরদুয়ার শহরে ১২ ঘণ্টা বন্ধের ডাক দিয়েছে কংগ্রেস। তা সমর্থন করেছে বামেরা। বিজেপি-ও আলিপুরদুয়ার শহরে ১২ ঘণ্টা বন্ধ ডেকেছে। শিলিগুড়ি-সহ গোটা উত্তরবঙ্গে সাংবাদিকরা পথে নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সূযর্কান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘চয়নবাবুকে উদ্ধার করতে হবে। মূল অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাকেও গ্রেফতার করতে হবে।’’ রাহুলবাবু এ দিন চয়নবাবুর বাড়িতে যান। তাঁর দাবি, ‘‘তৃণমূলই এই অপহরণ করেছে। বিষয়টি রাজ্যপালকে জানাব।’’
এ দিন কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা চাই, সত্য উদ্ঘাটিত হোক। কী ভাবে কী হল তা সিআইডি-কে দেখতে বলেছি। ওরা তদন্তে খুব দক্ষ।’’ মুখ্যমন্ত্রী জানান, তাঁরা এ ধরনের কাজ সমর্থন করেন না। মমতার বক্তব্য, ‘‘গত ২৮ তারিখ একটা ঘটনা ঘটেছিল। পুলিশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করে। আমরা দু’রকম খবর পাচ্ছি। এর পিছনে কী আছে তা জানার চেষ্টা চলছে।’’
সরকারি সূত্রের খবর, পুলিশের হাতে বেশ কিছু তথ্য পৌঁছেছে। রাতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক ঘটনা। মুখ্যমন্ত্রী বারেবারেই খোঁজ নিচ্ছেন। আশা করি পুলিশ রহস্যের কিনারা করতে পারবে।’’ আজ, মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সাংবাদিক বৈঠক করবেন গৌতমবাবু। সরকারি সূত্রেই জানা গিয়েছে, তখন চয়নবাবু প্রসঙ্গে কিছু কথা বলতে পারেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, মধ্য তিরিশের চয়নবাবু আলিপুরদুয়ারে বেশ জনপ্রিয়। তাঁর কাকা প্রবীণবাবু বলেন, “আলিপুরদুয়ার শহর সংলগ্ন বীরপাড়ার এলাকার বাড়িতে চয়ন তার বাবা-মার সঙ্গে থাকে। বছর চারেক আগে চয়নের বিয়ে হয় জলপাইগুড়ির এক শিক্ষিকার সঙ্গে। কিন্তু দু’জনের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের আইনি প্রক্রিয়া চলছে।’’ তবে চয়নের বাবা-মা, ছোট ভাই কেউ মুখ খুলতে চাননি।
এই ঘটনায় দলের কারও যুক্ত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “কিছু ছাত্র হামলা করেছে বলে শুনেছি, তবে সেখানে কোনও দলীয় পতাকা ছিল না। ওই ছাত্ররাও গ্রেফতার হয়েছে।’’ সেই সঙ্গে সৌরভবাবুর মন্তব্য, ‘‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তবে চয়নবাবুর বাড়িতে হামলার সময় সমরবাবু উপস্থিত ছিলেন না।’’ সমরবাবুও বলেন, ‘‘ঘটনাটি দুঃখজনক। আমরা চাইছি ও সুস্থ ভাবে ফিরে আসুক।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy