ইসমাতারা খাতুন।
সে খাতায় আঁকও কষে, আবার খেতে ধান, পাট, সর্ষেও ফলায়।
শখের চাষ নয়। খোদ সরকার বাহাদুর ‘কৃষকরত্ন’ খেতাব দিয়েছে তাকে। নদিয়ার কালীগঞ্জ ব্লকের সেরা চাষি সে— সত্যচরণ পাল উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী ইসমাতারা খাতুন।
কালীগঞ্জের সাহাপুরে মা-বাবা ও দুই বোন নিয়ে সংসার ইসমাতারার। এক বোনের বিয়ে হয়েছে। অন্য বোন মাদ্রাসায় পড়ে। বাবা অসুস্থ। মাঠে গিয়ে চাষের কাজ দেখতে পারেন না। তাই ইসমাতারাই সব সামলান। পড়ার ফাঁকে-ফাঁকেই বিঘা চারেক জমিতে চাষের কাজে হাত লাগায়।
নদিয়ার সহকারী কৃষি অধিকর্তা (প্রশিক্ষণ) তপন মণ্ডল বলেন, “পড়ার পাশাপাশি চাষের কাজে হাত লাগিয়ে সংসার চালানোর স্বীকৃতি হিসেবেই ইসমাতারাকে ‘কৃষকরত্ন’ সম্মান দেওয়া হয়েছে।”
বুধবার ‘কৃষক দিবস’-এ রাজ্যের প্রতি ব্লকে ‘কৃষকরত্ন’ সম্মান দিয়েছে প্রশাসন। তাঁদের প্রত্যেককে দেওয়া হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর স্বাক্ষরিত শংসাপত্র এবং ১০ হাজার টাকার চেক। কালীগঞ্জের ইসমাতারার মতোই মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম ব্লকে পুরস্কৃত হয়েছেন টুনুবালা দাসও।
খড়গ্রামের পুনিয়া গ্রামের স্বামী-বিচ্ছিন্না টুনুবালা আপাতত বাপের বাড়ির হাল ধরেছেন চাষের কাজ করে। বিঘে দুয়েক চাষজমি ও আড়াই বিঘে মতো জলাজমি আছে তাঁদের। জলায় মাছ হয়। আর বিঘে দুয়েকে জমিতে আলু, কপি, ভুট্টা, পেঁয়াজ, টমেটো। ফসল উঠলে সাইকেলে সে সব ফেরি করে বেড়ান চুনিবালা। তা ছাড়া, বাড়িতে হাঁস-মুরগিও পালন করা তো আছেই।
টুনুবালা দাস।
টুনুবালারা তিন ভাই ও ছয় বোন। বাবা-মা এখনও বেঁচে। তবে তাঁরা যথেষ্টই বৃদ্ধ হয়েছেন। টুনুবালার সঙ্গে তিন ভাইও মাঠে যান। এই করেই তাঁরা চার বোনের বিয়ে দিয়েছেন। টুনুবালার কথায়, ‘‘ফসল লাগানো থেকে কাটা, সব কাজে হাত লাগাতে হয় আমায়। কৃষি দফতর স্বীকৃতি দেওয়ায় ভাল লাগছে।”
খড়গ্রাম ব্লক কৃষি আধিকারিক তারকনাথ সাহা বলেন, “মহিলা বলে বাড়়িতে বসে না থেকে প্রায় সব রকম চাষের সঙ্গে উনি যুক্ত হয়েছেন। তাই তাঁকে এই পুরস্কার দেওয়া।”
চাইলে যে ঘরদোর-স্কুল সামলেও খেতে সোনা ফলানো যায়, টুনুবালা-ইসমাতারারা তারই নজির।
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy