Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বনধ না তোলার সিদ্ধান্ত সর্বদল বৈঠকে, জিটিএ ছাড়ছেন গুরুঙ্গরা

আবার সমতল থেকে খাবার নিয়ে যেতে গেলে মোর্চা নানা ভাবে বাধাও দিচ্ছে। পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব এ দিন জানান, ‘‘বিপুল সংখ্যক পাহাড়বাসী না খেয়ে থাকবেন, সেটা তো হতে পারে না। তাই আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।’’

সৌমিত্র কুণ্ডু ও প্রতিভা গিরি
দার্জিলিং শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৭ ০৪:০২
Share: Save:

ঘরে-বাইরে বন্‌ধ তোলার চাপ বাড়ছে। সেই অবস্থায় রাজ্য সরকারের কোর্টে বল ঠেলে নতুন করে স্নায়ুর লড়াই তৈরি করতে চাইল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। এ দিন সর্বদল বৈঠকের পরে তারা জানিয়ে দিল, বাড়তি পুলিশ, আধা সেনা এবং সেনা প্রত্যাহার না করা অবধি দার্জিলিং স্বাভাবিক হবে না। একই সঙ্গে জিটিএ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্তও নেওয়া হল বৈঠকে। এবং জানিয়ে দেওয়া হল, এখন আন্দোলন চলবে শুধু গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে।

এ দিন ঘণ্টাদুয়েক ধরে চলে সর্বদল বৈঠক। সূত্রের খবর, পাহাড়ে যেখানে হেঁশেল প্রায় ফাঁকা, সেখানে এ ভাবে বন্‌ধ চালিয়ে যাওয়া কত দূর সঙ্গত, তাই নিয়ে প্রশ্ন তোলে বেশ কয়েকটি দল। কিন্তু মোর্চা বন্‌ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে মরিয়া ছিল। কেন?

আরও পড়ুন: বিদেশেও মমতার মন পড়ে পাহাড়ে

মোর্চার একটি সূত্রের বক্তব্য, এ বার রাজ্যের মনোভাব যে বেশ কড়া, তা গোড়া থেকেই বুঝতে পারছেন বিমল গুরুঙ্গরা। মোর্চার এক নেতা জানান, যা অবস্থা তাতে হুট করে আন্দোলন তুলে নিলে নানা জায়গায় জবাবদিহি করতে হবে। তাই বন্‌ধ জারি রেখে রাজ্যের উপরে চাপ বাড়ানোর চেষ্টায় মরিয়া তাঁরা। এই মুহূর্তে বন্‌ধ রুখতে পুলিশি সক্রিয়তা নেই। মিটিং-মিছিলে বাধাও দেওয়া হচ্ছে না। সেই সুযোগই কাজে লাগাতে চাইছে মোর্চা।

কিন্তু পাহাড় থেকে রাজ্য পুলিশ-আধা সেনা-সেনা তুলে নেবে, এমন ইঙ্গিত মেলেনি। বরং গোয়েন্দা সূত্রে যে রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে, বা নবান্ন যে রিপোর্ট দিল্লিকে পাঠিয়েছে, সেগুলিতে বলা হয়েছে— উত্তর-পূর্বের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি গুরুঙ্গদের মদত দিচ্ছে। তাই উল্টে বাড়তি দু’কোম্পানি আধা সেনা চাওয়া হয়েছে কেন্দ্রের কাছে।

নাস্তানাবুদ: চলছে বন্‌ধ। গাড়ির অভাবে কাঁধই ভরসা। মঙ্গলবার দার্জিলিঙে। ছবি: এএফপি ।

দ্বিতীয়ত, পাহাড়ের আমজনতার থেকে মোর্চাকে আলাদা করে দেখানোর যে চেষ্টা মুখ্যমন্ত্রী করেছেন, সেই কৌশল থেকেও সরছে না রাজ্য। পাহাড়ে টানা বন্‌ধ চললে খাদ্যসঙ্কট তীব্র আকার নিতে বাধ্য। আবার সমতল থেকে খাবার নিয়ে যেতে গেলে মোর্চা নানা ভাবে বাধাও দিচ্ছে। পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব এ দিন জানান, ‘‘বিপুল সংখ্যক পাহাড়বাসী না খেয়ে থাকবেন, সেটা তো হতে পারে না। তাই আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।’’

এ দিন সর্বদল বৈঠকে অনেকেই বন্‌ধের যৌক্তিকতা নিয়ে আলোচনার দাবি জানান। মোর্চার তরফে পি অর্জুন বলেন, ‘‘২৪ জুন ফের সর্বদল বৈঠক হবে। সে দিন সব দলের প্রতিনিধিকে নিয়ে একটি কোর কমিটিও তৈরি হবে। রাজ্য বাড়তি বাহিনী তুলে নিলে দ্রুত পাহাড় স্বাভাবিক হবে।’’

সর্বদলে সিদ্ধান্ত


অনির্দিষ্ট কাল বন্‌ধ চলবে


বাড়তি বাহিনী তোলার দাবি


জিটিএ ছাড়ল মোর্চা


২২ তারিখ সর্বদল বৈঠকে যাবে না পাহাড়ের কোনও দল


পাহাড়ের সব দল নিয়ে কোর কমিটি গঠন ২৪ তারিখ

একই সঙ্গে জিটিএ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্তও নিল মোর্চা। সে কথা শুনে গৌতমবাবু বলেন, ‘‘জিটিএ-র মেয়াদ ছিল আর দশ দিন। এখন পদত্যাগের মানে কী!’’ কেন্দ্রের কাছে পাঠানো রাজ্যের রিপোর্ট অনুযায়ী, জিটিএ ভোটে হেরে যাওয়ার ভয়েই এ বারে হাঙ্গামা বাঁধিয়েছেন গুরুঙ্গ।

এ দিন হরকাবাহাদুর ছেত্রীর দল জাপ-ও সর্বদল বৈঠকে যোগ দেয়। মোর্চার কাছে সেটা নিঃসন্দেহে স্বস্তি। একই সঙ্গে তারা দিল্লির কাছ থেকেও কোনও বার্তা পেতে মরিয়া। এ দিনই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু গ্যাংটকে পৌঁছন। রিজিজু অবশ্য শান্তি বজায় রাখার বার্তাই দিয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী এখন নেদারল্যান্ডসে। কিন্তু দ্য হেগ শহরে বসেও পাহাড় নিয়ে তিনি খবর রেখেছেন। কখনও নবান্নে ফোন করেন। কখনও পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর প্রধান সচিব গৌতম সান্যালের সঙ্গে। আগামিকাল, বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রসচিবের ডাকে শিলিগুড়িতে সর্বদল বৈঠক হবে। বৈঠকে মোর্চা-সহ পাহাড়ের সব দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

এ দিন পাহাড়ের দলগুলি অবশ্য জানায়, তারা ওই বৈঠকে যোগ দেবে না। ২২ তারিখের বৈঠকে থাকবেন না বামেরাও। তাঁদের বক্তব্য, এখন মমতা বিদেশ সফরে গেলেন কেন? বামেরা অবশ্য এ দিনের বৈঠকেও ছিলেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE