আয় নেই, মাসের পর মাস লোকসান। তাই রাজ্যের আটটি লাইনে ট্রেন চালানো বন্ধ করার প্রস্তাব দিয়ে নবান্নে চিঠি পাঠাল পূর্ব রেল! তবে চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার এস এস গহলৌতের লেখা চিঠিতে এ-ও বলা হয়েছে যে, রাজ্য যদি লোকসানের অন্তত ৫০ শতাংশ বহন করতে রাজি থাকে, তা হলে জনস্বার্থে এই সব লাইনে ট্রেন চালানো যেতে পারে।
রেলের পক্ষ থেকে এমন চিঠি পেয়ে বেজায় চটেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এমন সিদ্ধান্ত মানি না। কড়া চিঠি পাঠানো হবে। সংসদে প্রতিবাদও হবে।’’
রেল মন্ত্রকের পক্ষ থেকে অবশ্য তড়িঘড়ি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে যে, কোথাও কোনও ট্রেন বন্ধ করা হচ্ছে না। সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির সুপারিশ মেনে রুটিন চিঠি পাঠানো হয়েছে মাত্র।
নবান্ন অবশ্য মনে করছে এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার যে যে ধারাবাহিক ছবি, এটা তারই অঙ্গ। কেন্দ্রীয় বরাদ্দ ছাঁটাই করা, টাকা কেটে নেওয়া, রাজ্যের থেকে কর তুলে নিয়ে গিয়ে যথেষ্ট অনুদান না দেওয়া বা কেন্দ্রীয় প্রকল্পে টাকা কমানো ও তা বন্ধ করে দেওয়ার পরে এ বার আস্ত রেল লাইনই তুলে দিতে চাইছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে’কে লেখা পূর্ব রেলের চিঠিতে বলা হয়েছে, পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি তাদের ৪২তম রিপোর্টে লোকসানে চলা লাইনগুলি বন্ধ করার ব্যাপারে রাজ্যগুলির সম্মতি আদায়ের উপরে জোর দিতে বলেছে। সেই মতো এর আগে রাজ্যকে চিঠি পাঠিয়ে লোকসানে চলা এই সব লাইন বন্ধ করার ব্যাপারে সম্মতি চাওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে এ-ও বলা হয়েছিল যে, জনস্বার্থে এই সব লাইন চালাতে হলে লোকসানের অন্তত অর্ধেক পূর্ব রেলের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হবে। কিন্তু রাজ্যের তরফ থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি।
এর পরেই মুখ্যসচিবকে ব্যক্তিগত ভাবে উদ্যোগী হয়ে পূর্ব রেলের প্রস্তাব দ্রুত খতিয়ে দেখতে এবং রাজ্যের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিতে অনুরোধ করেছেন গহলৌত।
এই চিঠি পেয়ে রাজ্যের কড়া অবস্থানের জেরে এ দিন রাতেই সুর নরম করেছে পূর্ব রেল। যদিও পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার হারিন্দ্র রাও বলেন, ‘‘বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির সুপারিশ মেনে চিঠি লেখা হয়েছে। ওটা নীতিগত অবস্থান। কিন্তু তা বলে রেল পরিষেবা এখনই বন্ধ হয়ে যাবে এমন নয়। পরিষেবা স্বাভাবিক থাকবে।’’
বন্ধের ভাবনায়
• সোনারপুর-ক্যানিং
• শান্তিপুর-নবদ্বীপঘাট
• বারাসত-হাসনাবাদ
• কল্যাণী- কল্যাণী সীমান্ত
• বালিগঞ্জ-বজবজ
• বারুইপুর-নামখানা
• বর্ধমান-কাটোয়া
• ভীমগড়-পলাশথলি
রেল মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, দেশের সর্বত্রই লোকসানে চলা লাইন বন্ধের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। তার ভিত্তিতে ২০১০, ২০১২ এবং ২০১৫ সালেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে এমন চিঠি পাঠানো হয়েছিল। রাজ্য সেগুলির কোনও উত্তরও দেয়নি। রেলের এক কর্তার কথায়, ‘‘বিষয়টি নিয়ে এত হইচই করা অর্থহীন।’’
রাজ্যের পক্ষ থেকে অবশ্য পাল্টা বলা হচ্ছে, পরিস্থিতি পাল্টে গিয়েছে বলেই এ বারের চিঠিকে গুরুত্ব দিতে হচ্ছে। কেন্দ্র ক্রমেই তাদের আর্থিক দায়ভার কমিয়ে সব দায়িত্ব রাজ্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাইছে। যেমন, বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় অনুদানের পরিমাণ কমানো হয়েছে। রেলের ক্ষেত্রেও লেভেল ক্রসিংয়ের উপর ওভারব্রিজ নির্মাণের অর্ধেক খরচ এখন রাজ্যকে বহন করতে হয়। তবে চালু লাইন বন্ধ করতে বলার ঘটনা এই প্রথম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy